ঢাকাশুক্রবার , ১ আগস্ট ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দেশে প্রতি চারজনে একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শি*কা*র

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ১, ২০২৫ ২:২৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: দেশে প্রতি চারজন মানুষের মধ্যে একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। ‘বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই)’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার মানুষ এমপিআই দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে, যারা তাদের জীবনে একাধিক বঞ্চনার শিকার। জাতীয়ভাবে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের এ হার ২৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এ হার গ্রাম এলাকায় সবচেয়ে বেশি। তা ছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দেশের শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের এই সূচক প্রকাশ করেছে। এমপিআই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শহরের তুলনায় গ্রামে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুণ। গ্রামীণ অঞ্চলে এ হার ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ, যেখানে শহরে তা ১৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সিলেট বিভাগে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি—৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বান্দরবান, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি ও ভোলা—এ জেলাগুলোতে ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস) জরিপের প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জিইডি মাল্টিডাইমেনশনাল পোভার্টি ইনডেক্স (এমপিআই) বা জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) একটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত দারিদ্র্য পরিমাপক, যা আর্থিক দারিদ্র্য পরিমাপের একটি মূল্যবান পরিপূরক হিসেবে কাজ করে এবং এসডিজি লক্ষ্য ১ ট্র্যাক করার জন্য একটি সূচক হিসেবে কাজ করে।

এমপিআই অনুসারে, একজন মানুষকে তখনই দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যখন তিনি অন্তত তিনটি বা ততোধিক মৌলিক সূচকে বঞ্চিত হন। এ সূচকগুলো হলো—শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মান। দারিদ্র্য পরিমাপে মোট ১০টি সূচক ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস, নিরাপদ পানীয় জল, উন্নত স্যানিটেশন, আবাসনের মান, রান্নার জ্বালানি ও সম্পদের মালিকানা অন্যতম। এই প্রকাশনাটিতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ইউনিসেফ, অক্সফোর্ড মাল্টিডাইমেনশনাল পোভার্টি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (ওপিএইচআই) এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞসহ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অংশীজনের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক বলছে, কেবল আয় নয়; শারীরিক দুর্বলতা বা খারাপ স্বাস্থ্য, শিক্ষার সুযোগের অভাব, অপর্যাপ্ত পুষ্টি, অনিরাপদ জীবনযাপন বা থাকার ব্যবস্থা, অত্যাবশ্যকীয় সেবার অভাব—এসব বিবেচনায় নিয়ে দারিদ্র্য মূল্যায়ন করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরিদ্রতম ব্যক্তিরা একাধিক বঞ্চনার শিকার। বহুমাত্রিক দরিদ্ররা বেশিরভাগই আবাসন মানের দিক থেকে বঞ্চিত, যার মধ্যে রয়েছে অনুন্নত মেঝে, ছাদ বা দেয়াল। এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের অভাব, উন্নত স্যানিটেশন পরিষেবার অভাব এবং নির্দিষ্ট তালিকার চেয়ে কম সম্পদের মালিকানা।

বিভাগ এবং জেলাজুড়ে দরিদ্র মানুষের অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন। সব বিভাগের মধ্যে সিলেটে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ, যার হার ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বান্দরবান, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি ও ভোলা—এ জেলাগুলোতে ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে।

জিইডির হিসাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। দেশে শিশুদের মধ্যে এমপিআই দারিদ্র্যের হার ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে তা ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ০-৯ বছর বয়সী শিশুদের ঝুঁকি ২৮.৬ শতাংশ, আর ১০-১৭ বছর বয়সীদের ২৮.৮ শতাংশ। দারিদ্র্য নিরসনে জিইডির সুপারিশ হলো—ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে বিশেষত শিশুদের জন্য আবাসন উন্নয়ন, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা বৃদ্ধি এবং রান্নার জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু আয় নয়, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ঘাটতিও মানুষকে দরিদ্র করে তোলে। তাই দারিদ্র্য দূরীকরণে বাজেট বরাদ্দের ধরন ও খাতভিত্তিক মূল্যায়ন হওয়া দরকার। তাদের মতে, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বাড়লেও উন্নয়নের সমতা নিশ্চিত না হলে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়। শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক সুরক্ষা ও মানব উন্নয়নকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে। অথচ আগের গোপন প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সংখ্যা ছিল ৬ কোটির বেশি। জিইডির ভাষ্য, ২০১৩ সালে দেশে এমপিআই দরিদ্র ছিল ৪২.৬৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৬ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মধ্যে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৯৮ লাখে। তবে এই হিসাব দাঁড় করানো হয়েছে ২০১৯ সালের এমআইসিএস (মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে) জরিপের ভিত্তিতে, যা সাত বছর আগের তথ্য। সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপের (২০২২) তথ্য অনুযায়ী, দেশে দরিদ্রতার হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ ২০১৯ সালের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জিইডি বলছে, দেশে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য বেড়ে ২৪ শতাংশ হয়েছে।

এদিকে, আলাদা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিসেফ জানিয়েছে, দেশের প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে প্রায় তিনজন (২৮ দশমিক ৯ শতাংশ) বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। অর্থনৈতিক দারিদ্র্য ও খর্বকায় শিশুর সংখ্যা হ্রাসে অগ্রগতি হলেও বহুমাত্রিক শিশু দারিদ্র্য এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, যখন দারিদ্র্যের একাধিক মাত্রাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যায়, তখন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশু দারিদ্র্য প্রতিরোধ করা সম্ভব। এমপিআইর সৌজন্যে আমাদের হাতে একটি কার্যকরী উপকরণ আছে, আমরা বুঝতে পারছি কোথায় এবং কীভাবে দারিদ্র্য বাংলাদেশের শিশুদের জীবনে প্রভাব ফেলছে। স্কুলে উপস্থিতি সূচকে দেখা গেছে, শিশুর শিক্ষা সংক্রান্ত বঞ্চনাগুলো শিশু দারিদ্র্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালক।

কার্যকরভাবে বহুমাত্রিক শিশু দারিদ্র্য কমাতে সমতাভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়ন ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।