ঢাকাশনিবার , ২২ নভেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

যাত্রীশূন্যতায় থেমে গেল ‘পিএস মাহসুদের’ ঢাকা–বরিশাল রুটের প্রথম যাত্রা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
নভেম্বর ২২, ২০২৫ ১১:৫৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: পদ্মা সেতু চালুর পর নৌপথে যাত্রী সংকট যেন চরমে পৌঁছেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা–বরিশাল রুটে বহু প্রতীক্ষিত রাষ্ট্রীয় স্টিমার সার্ভিস পুনরায় চালুর উদ্যোগও প্রথম দিনেই বড় ধাক্কা খেল। দুই শতকের ইতিহাস বুকে নিয়ে নতুন করে যাত্রার স্বপ্ন দেখানো ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’ উদ্বোধনী দিনে একজন যাত্রীও না পাওয়ায় যাত্রা বাতিল করতে বাধ্য হয় বিআইডব্লিউটিসি।

দীর্ঘ প্রস্তুতি, ব্যয়—তবু শূন্যতার সুর

স্টিমার সংস্কার, প্রচারণা ও প্রস্তুতিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। কিন্তু উদ্বোধনী যাত্রার দিন যখন যাত্রীশূন্যতা দেখা দেয়, তখন পুরো নৌপরিবহন খাতেই এক ধরনের হতাশার পরিবেশ তৈরি হয়। বিআইডব্লিউটিসি জানায়—স্টিমারটি মূলত শৌখিন পর্যটকদের লক্ষ্য করেই সাজানো হয়েছে, কিন্তু ভাড়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ও সংশয় যাত্রীদের আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে।

সম্ভাব্য ভাড়াই কি ভয় পাইয়ে দিচ্ছে যাত্রীকে?

যদিও ভাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি, অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে—

  • ঢাকা–বরিশাল রুটে এসি কেবিন: ৬,০০০ টাকা
  • নন-এসি কেবিন: ৪,০০০ টাকা
  • সাধারণ চেয়ার: ২,৬০০ টাকা

অন্যদিকে বেসরকারি লঞ্চে একই রুটে প্রথম শ্রেণির ভাড়া যেখানে ১,০০০ থেকে ২,০০০ টাকা, সেখানে সরকারি স্টিমারের সম্ভাব্য ভাড়া সাধারণ যাত্রীর নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিআইডব্লিউটিসির মহাব্যবস্থাপক (যাত্রী ও প্রশাসন) গোপাল চন্দ্র মজুমদার অবশ্য দাবি করেছেন—ভাড়া এখনো নির্ধারিত হয়নি। মন্ত্রণালয়ের কমিটির সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত ভাড়া প্রকাশ করা হবে। উদ্বোধনের আগে পাঁচ–ছয়জন যাত্রী বুকিং করলেও পরে তারা তা বাতিল করেছেন বলেও জানান তিনি।

ঐতিহ্যের জাহাজ ‘মাহসুদ’: ২০০ বছরের স্মারক পুনর্জীবন

১৯২৮ সালে যাত্রী পরিবহনে নামা পিএস মাহসুদ প্রায় দুই শতকের ঐতিহ্যবাহী জলযান। বহু বছর অকেজো পড়ে থাকার পর ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে এটিকে পুনরুদ্ধার করা হয়। নৌপরিবহন উপদেষ্টা, বরিশালের সন্তান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের উদ্যোগে স্টিমারটি আবারও নতুন রূপে ফিরিয়ে আনা হয়।

গত ২৪ অক্টোবর পরীক্ষামূলক চলাচলের পর ১৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। পরিকল্পনা ছিল—

  • প্রতি শুক্রবার সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে বরিশাল
  • পরদিন একই সময়ে বরিশাল থেকে ঢাকা
  • সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে ঢাকার আশপাশে প্রমোদভ্রমণে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত

সোনালি স্মৃতি, হারিয়ে যাওয়া যুগ

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে স্টিমার ছিল একসময়ের আভিজাত্য, সংস্কৃতি আর রোমান্সভরা যাত্রার প্রতীক। ১০–১২ ঘণ্টার নদীপথ ছিল গল্পে, গানে, ভাটা–জোয়ারে ভরা এক আলাদা অনুভূতি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের উন্নতি সেই স্বর্ণযুগকে অনেক আগেই হারিয়ে দিয়েছে।

ঐতিহ্যের জাগরণ—নাকি ইতিহাসে বিলীন হওয়ার পথে?

সরকারি স্টিমার সার্ভিস বহু বছর বন্ধ থাকার পর আবার তা চালুর উদ্যোগে মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু প্রথম দিনেই যাত্রীশূন্যতার দুঃখজনক চিত্র নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—
ঐতিহ্য কি বাণিজ্যিক ভাড়ার চাপ সামলে টিকে থাকতে পারবে?
নাকি নদী–নির্ভর সেই সোনালি স্মৃতি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়?