
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস যেন একটি দুর্নীতির আখড়া। এই অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতি-ঘুষ আদায়কে নিত্যদিনের ঘটনাই বলা যায়। আর এই অনিয়ম-দুর্নীতির কারিগর হলেন স্বয়ং জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মোঃ মৃধা মুজাহিদুল ইসলাম বলে জানান এই অফিসে সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীরা।
তারা জানান, জোনাল স্যারতো ঠিকমতো নিজেই অফিস করেন না। তার ওপরে এই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলে তৈরি করেছে দালাল নির্ভর এক শক্তিশালী ঘুষ সিন্ডিকেট। এদের বিরুদ্ধে জোনাল স্যারের কাছে অভিযোগ দিতে গেলেও নেয়না ব্যবস্থা, উল্টো জোনাল স্যারের তিক্ত ভাষার গালাগাল শুনতে হয়। আলমগীর নামে এক ভুক্তভোগী জোনাল অফিসারের সাথে দেখা করতে গিয়ে জোনালের খারাপ আচরণের শিকার হন এবং ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি জোনালের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগও উধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকটে দিয়েছিলেন। তখন ঢাকা থেকে আসা উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ভুক্তভোগী আলমগীরকে বুঝিয়ে বিষয়টি মিমাংসাও করে দিয়েছিলেন।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে বরিশালে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই ঠিকমতো অফিসে আসতেন না জোনাল অফিসার মোঃ মৃধা মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি প্রতি সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন অফিস করতেন। এই অভিযোগের সত্যতা জানতে গত অক্টোবর মাসের শেষের ৩ সপ্তাহের প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে গেলে জোনাল অফিসার মোঃ মৃধা মুজাহিদুল ইসলামকে অফিসে পাওয়া যায়নি। অর্থ্যাৎ তিনি সপ্তাহে সোম থেকে বুধ এই ৩ দিন অফিস করতেন। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে তিনি নিজের খেয়ালখুশি মত অফিস করতেন।
এছাড়া অফিসের ঝাড়ুদার স্বপনকে বানিয়েছেন নিজের অঘোষিত পিএস। স্বপন ঝাড়ুদার হলেও জোনাল অফিসারের ক্ষমতা দেখিয়ে কাউকে কোন পরোয়া করতেন না। কোনদিন অফিসে ঝাড়ু দিয়েছেন বলে কেউ দেখেনি স্বপনকে। এই স্বপনের মাধ্যমেই জোনাল অফিসার মোঃ মৃধা মুজাহিদুল ইসলাম যাবতীয় ঘুষ আদায়ের সংশ্লিষ্ট কাজ করতেন বলেও জানান ভুক্তভোগীরা। জোনাল অফিসার যেকদিন অফিস করতেন স্বপনও সেই কয়দিন অফিস করেন। কেননা জোনাল অফিসে না আসলে স্বপনও অফিসে উকি দিতেন না। জানাগেছে, জোনাল অফিসার মৃধা মুজাহিদুল ইসলাম একসময়ে ভোলা সদর এর নির্বাহী অফিসার এবং পরবর্তীতে ভোলা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সুবাদে তিনি বর্তমানে তার পরিচিত লোকদের মাধ্যমে আসা (৪২) ক এর কেসগুলোর আবেদন গ্রহণ করেন এবং এ থেকে মোটা অঙ্কের উতকোচ নেন বলে একাধিক ভুক্তভোগী জানান।
এছাড়াও তিনি যান্চ এর নাম করে বিভিন্ন উপজেলার সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার-সার্ভেয়ারদের বরিশাল জোনাল অফিসে এনে এখানে বসেই কার্য সম্পাদন করার নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ ওইসব এলাকার ভুক্তভোগীরা ওখানে ভূমি সংক্রান্ত সেবা না পেয়ে কাঠখর পুড়িয়ে বরিশাল জোনাল অফিসে আসেন সেবা নিতে। অনেকে আবার দালালের খপ্পরেও পড়েন। অথচ ওসব এলাকায় সেটেলমেন্ট অফিসারগণ কর্মস্থলে থাকলে তাদের এত কস্ট আর ভোগান্তি পোহাতে হতোনা। জোনাল অফিসার মৃধা মুজাহিদুল ইসলাম একজন উপ-সচিব পদমর্যাদার অফিসার হলেও তিনি সেটেলমেন্ট অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। এতে সেটেলমেন্ট অফিসে দালালের আনাগোনা বাড়ার পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অনিয়ম-ঘুষবাণিজ্যে জরিয়ে পড়ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১২ অক্টোবর (শনিবার) ২০২৫ইং তারিখে সরকারি নিয়মানুযায়ী সব সরকারি প্রতিষ্ঠান সাপ্তাহিক বন্ধ থাকলেও জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে কর্মরত উপ সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার রফিকুল ইসলাম হাওলাদার, একই অফিসে ১০ বছরের অধিক সময় কর্মরত চেইনম্যান জামাল ও ১ মাস পূর্বে ঢাকার নারায়নগঞ্জে বদলি হওয়া সার্ভেয়ার অলি বাহিরের ৩ দালালকে নিয়া সেটেলমেন্ট অফিসে প্রবেশ করেন। যা সম্পূর্ন বেআইনি। এ সময় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় তারা অবৈধভাবে কোন কার্য সম্পাদন করতে ছিলো। এসময় স্থানীয় সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। সাংবাদিকগণ এ সময় জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মৃধা মুজাহিদুল ইসলামকে মোবাইলে কল দিয়া জানতে চাইলে তিনিও এ বিষয় জানেন না বলে জানান। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের হেফাযতে নেন। এরকম একটা আলোচিত ঘটনা ঘটলে ও বিভিন্ন অনলাইন- প্রিন্ট মিডিয়াতে সংবাদ প্রকাশ হলেও অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম, অলি ও জামাল এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি মুজাহিদুল ইসলাম।
এর পূর্বে জোনাল অফিসে কর্মরত পেশকার কাম নাজির তৌহিদুর রশিদ বরিশাল জোনাল অফিস ছাড়াও ভোলা সেটেলমেন্ট অফিসেও কর্মরত আছেন। তবে তিনি স্বশরীরে সেখানে না গিয়া বরিশাল অফিসে বসেই কার্য সম্পাদন করেন যা সরকারী নিয়মবর্হিভূত। এছাড়া তৌহিদুর রশিদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করা ঝাড়ুদার-পিওনদের বেতন থেকে টাকা রাখা অবৈধ পন্থায় সম্পদ গড়ার ঘটনায় জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকাতে সংবাদ প্রকাশ হলেও মুজাহিদুল ইসলাম এই অভিযুক্ত তৌহিদুর রশিদের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেননি। মূলত জোনাল অফিসার মোঃ মৃধা মুজাহিদুল ইসলামের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
তবে একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মোঃ মৃধা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, এদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে নিজেকে এড়িয়ে নেন।
আর সপ্তাহে ৩ দিন অফিস করেন এ বিষয়ে তিনি জানান, আমার অন্যস্থানে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেই অফিসে যেতে হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়া জানা গেছে, মাত্র গত সপ্তাহে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মুজাহিদুল ইসলামকে ফরিদপুরে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে এক সময় আবার তিনি বলেন, আমার বাড়ি খুলনাতে, সেখান থেকে আসতে লেট হয় মাঝে মাঝে।


