ঢাকামঙ্গলবার , ৫ আগস্ট ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাবুগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের অনিয়ম দু*র্নী*তি*র প্র*তি*বা*দ করায় ষ*ড়*য*ন্ত্রে*র মুখে প্রধান শিক্ষিকা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ৫, ২০২৫ ৫:২৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল বাবুগঞ্জের ৪৮ নং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা সহকারী শিক্ষদের অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলা এবং প্রাইভেট বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার পর থেকেই ষড়যন্ত্র ও চাপের মুখে পড়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা: আমিনা।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারীর ১৬ তারিখ প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর বিদ্যালয়ে একাধিক অনিয়ম চোখে পড়ে তার। দীর্ঘ এক বছর প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন জনাব আবদুছ ছালাম। এ সময় থেকেই কিছু শিক্ষকের নিয়মভঙ্গের প্রবণতা ছিল প্রকট।

প্রধান শিক্ষক আমিনা জানান, বিদ্যালয়ে ৯:০০ থেকে ৪:১৫ পর্যন্ত সময় নির্ধারণ থাকলেও কিছু শিক্ষক সকাল ১০:৩০ বা তারও পরে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতেন। নিয়মিত সমাবেশ হতো না, শিক্ষকেরা বিনা অনুমতিতে ছুটি নিতেন, এমনকি ফোনে জিজ্ঞেস করলে বলতেন, “আমি ছুটিতে আছি”।

বিদ্যালয়ের ৫৬০ শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই পড়াশোনায় পিছিয়ে আছে। প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, কিছু শিক্ষক টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর চাপ দেন। যারা প্রাইভেট পড়ে না, তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়, পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়া হয়, খাতা ছুঁড়ে ফেলা হয়। জাতীয় দিবসে শিক্ষকের অনুপস্থিতি, লাইব্রেরিতে গল্পগুজব, পাটি বিছিয়ে ঘুমানো—এসবও নিয়মিত ঘটনা।

তিনি আরও বলেন, এসব অনিয়ম ম্যানেজিং কমিটি এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে। তিনি একাধিকবার বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করে খাতায় মন্তব্য দিয়েছেন এবং শিক্ষকদের সতর্ক করেছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসারও প্রাইভেট বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।

কিন্তু তাতেও অনিয়ম বন্ধ হয়নি। বরং, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে হুমকি, মিথ্যা অভিযোগ ও উকিল নোটিশ পাঠানো শুরু হয়। এমনকি ঘুষের প্রস্তাব দেওয়া হয় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের বিনিময়ে, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।

বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা বলেন, বিগত দিনের তুলনায় বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থারর অনেক উন্নতি হয়েছে, প্রধান শিক্ষক আমিনা ম্যাডামের প্রচেষ্টায় প্রতিনিয়ত উন্নতির শিখরে পৌঁছে যাচ্ছে স্কুলটি। এছাড়াও আর্থিক অনিয়মের যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

একজন শিক্ষক পরীক্ষার খাতা হারিয়ে ভূয়া নম্বর দেওয়ার মতো গুরুতর অপরাধ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া, উপবৃত্তির টাকা না পাওয়ার অভিযোগে অভিভাবকগণ প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলে শিক্ষকদের একাংশ অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।

প্রধান শিক্ষক আমিনা জানান, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি নিয়মিত দুইটি ক্লাস নেন এবং প্রতিদিন একটি ক্লাস পর্যবেক্ষণ করেন। কোনো প্রকার অতিরিক্ত ছুটি তিনি নেননি। অভিভাবকরা বলেন, “প্রধান শিক্ষক থাকলে ক্লাস হয়, না থাকলে হয় না।”

চাকরি জীবনে প্রধান শিক্ষক মোসা: আমিনা জেলা পর্যায়ে একবার ও উপজেলা পর্যায়ে ৩ বার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচি হয়েছেন। শিক্ষা ডিপার্টমেন্ট একাধিক প্রাধান শিক্ষকদের মধ্য থেকে ২৩ সালে মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্ব দেন মোসা:আমিনার উপর। বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন বলে জানিয়েছে সাবেক সভাপতিগন।

বর্তমানে কিছু সহকারী শিক্ষক প্রকাশ্যেই বলেন, “এই প্রধান শিক্ষক থাকলে আমরা ইচ্ছেমত চলতে পারি না।” কিন্তু এসব ষড়যন্ত্র আর চাপের মাঝেও প্রধান শিক্ষক আমিনা বিদ্যালয়কে একটি সুশৃঙ্খল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে লড়াই করে যাচ্ছেন।