
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়ার রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল এলাকার সড়ক দিয়ে চলার পথে হঠাৎ মাঝ বরাবর পড়বে একটি সেতু। যে সেতুটি স্থানীয় জনগণের চলাচলের জন্য ২৭ লাখ টাকার ব্যয়ে নির্মাণ করেছে সরকার। সেই সেতুটি এখন স্থানীয় সহ শিক্ষার্থীরা পাড়াপাড় করছে বাঁশের মই দিয়ে।
কিন্তু দূর থেকে সেতুটি দেখলে চমকে উঠবে মন! সংযোগ রাস্তা ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে এটি। দুপাশে দুটি মই রাখা আছে। এই মই বেয়ে পার হতে হয় সবাইকে। কিন্তু বয়স্ক, নারী ও শিশুরা আছে বিপাকে। অনেকেই এটি পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে সেতুটি বিষয়ে জানা যায়, অর্থবছরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের গ্রামীণ রাস্তায় সেতু/কালভার্ট নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাশাইল এলাকায় খালের ওপর ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্মিত সেতুটির সঙ্গে সংযোগ রাস্তা না থাকায় তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। বর্ষা মৌসুমে সেতুর নিচের অংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। তখন সেতু পারাপারে চরম বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। আর শুকনা মৌসুমে সেতুতে উঠতে মই ছাড়া উপায় নেই। উঁচু রাস্তা না থাকায় এর দু’পাশে থাকা দুটি মই-ই একমাত্র ভরসা আমাদের।
তবে দীর্ঘদিন ধরে সংযোগ রাস্তা না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে সেখানকার কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। সেতুটি পাড়াপাড় করতে মই দিয়ে উঠতে গিয়ে মাঝে মাঝে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন। এতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হলেও তারা প্রভাবশালী ঠিকাদারের ভয়ে কিছুই বলতে পারছেন না।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গেছে, উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল কলেজের শিক্ষার্থীদের পারাপারের সুবিধার জন্য ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল ২৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬শত ১৮ টাকা ব্যয়ে ওয়পদা খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডারে মুলাদী উপজেলার বান্দ রোডের মেসার্স পাপ্পু এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়ে ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট কাজ শুরু করেন।
চলতি বছরের মার্চ মাসে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ করেন।
কিন্তু দীর্ঘ ছয় মাস ধরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্রিজের দু’পাশের ত্রিপোষ সড়ক নির্মাণ না করায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ লোকজনের পারাপার হতে হচ্ছে বাঁশের মই বেয়ে। আর বাঁশের মই বেয়ে উঁচু ব্রিজে অনেকে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের। শুধু তাই নয়, এই ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন শতশত লোকজন যাতায়াত করছেন।
বাশাইল কলেজের ফাতেমা আক্তারসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, এই মই বেয়ে ব্রিজ পারাপার হতে আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় আমরা মইয়ের নিচের পানিতে পড়ে যাই। এতে কলেজের ড্রেস ও বই ভিজে যায়। তার পরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়াপাড় হতে হয় ব্রিজটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর পথ ধরে কৃষিজমির পাশ দিয়ে সরু রাস্তা। ওই পথ দিয়েই চলাচল করছে মানুষজন। আবার সেতুর উত্তর দিকে রয়েছে বসতবাড়ি ও খাল। সেখানেও নেই মাটির সংযোগ রাস্তা। তাই দুপাশের মানুষের চলাচল করতে হয় এই সেতু দিয়ে। তবে মই বেয়ে সেতু পার বয়স্ক নারী-পুরুষদের জন্য কষ্টকর হওয়ায় তারা মই বেয়ে যাতায়াত করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বলেন, ২৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্রিজ তৈরি করে যদি মই দিয়ে পারাপার হতে হয়, তাহলে ব্রিজের তো দরকার ছিল না। আমাদের অনেক কষ্ট হয় এই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে। মই বেয়ে বাইসাইকেল, রিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেল তো পারাপার করা যায় না। এ জন্য আমরা চাই দ্রুত ব্রিজের দুপাশে মাটি ফেলানোর ব্যবস্থা করা হোক। তা না হলে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ব্রিজ কোনো কাজে আসবে না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অয়ন সাহা বলেন, টেন্ডারটি আমি আসার পূর্বে হয়েছে। তার পরেও আমি সরেজমিন দেখে দ্রুত ব্রিজের এপ্রেস সড়ক নির্মাণ করার ব্যবস্থা করবো। তিনি আরো বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর দুই পাশের রাস্তায় মাটি ভরাট করে দ্রুত সময়ের মধ্যে চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হবে।
অন্যদিকে কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. বাদল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ হলেও আমি কাজ করতে পারিনি। যারা কাজ করেছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্রিজের ত্রিপোষ সড়কের কাজ করার ব্যবস্থা করে দেবো।