
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সব গার্ডার বসানো, পিলার দাঁড়িয়ে গেছে, অ্যাপ্রোচ সড়কও প্রস্তুত। তবু বরিশালের বাকেরগঞ্জের চরাদি ও দুধল ইউনিয়নের মানুষকে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। কারণ, মাঝের দুটি স্প্যান না বসানোয় রাঙামাটি নদীর গোমা সেতুটি এতদিন চলাচলের অযোগ্য ছিল। অবশেষে মঙ্গলবার একটি স্প্যান বসানো হয়েছে। আরেকটি স্প্যান বৃহস্পতিবার উঠলেই ছয় বছরের অপেক্ষার অবসান হবে তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের।
২০১৮ সালে রাঙামাটি নদীর ওপর দুই হাজার ৫৪০ ফুট দীর্ঘ গোমা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, যা প্রাথমিক প্রাক্কলনের চেয়ে ৩৪ কোটির বেশি।
এদিকে, নদী পারাপারে এখনো একটিমাত্র ফেরির ওপর নির্ভর করতে হয় এলাকাবাসীকে। প্রতি ঘণ্টায় একবার ফেরি চলে। কোনো কারণে ফেরি বন্ধ থাকলে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে নদী পার হন অনেকে।
চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের বাসিন্দা রাছেল হাওলাদার বলেন, “রোগী অসুস্থ হলে সহজে এপার থেকে ওপারে নেওয়া যায় না।” অপর একজন বলেন, “ফেরি গেলে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়, সেতু থাকলে দুই মিনিটেই যাওয়া যেত।”
—
উচ্চতা নিয়ে দ্বন্দ্বেই থেমে ছিল কাজ
গোমা সেতুর নির্মাণকাজে দেরির মূল কারণ ছিল সেতুর উচ্চতা নিয়ে দুই সরকারি সংস্থার (সওজ ও বিআইডাব্লিউটিএ) মতবিরোধ।
২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বিআইডাব্লিউটিএর মতামত চেয়ে চিঠি পাঠায়। ১৫ ডিসেম্বর বিআইডাব্লিউটিএ জানায়, বর্ষা মৌসুমের পানির উচ্চতা থেকে ৭.৬২ মিটার উঁচুতে সেতুটি নির্মাণ করতে হবে। সেই অনুযায়ী নকশা তৈরি ও দরপত্র আহ্বান হয়।
কিন্তু ২০১৯ সালের ৮ মে বিআইডাব্লিউটিএ নতুন চিঠিতে আগের অনুমোদন বাতিল করে জানায়, রাঙামাটি নদী এখন দ্বিতীয় শ্রেণির নৌপথ, বড় নৌযান চলাচল করবে—তাই সেতুর উচ্চতা ১২.২০ মিটার করতে হবে। এ নিয়ে শুরু হয় টানাপড়েন। এক দপ্তর বলল, পুরনো নকশায় ঝুঁকি নেই; অন্য দপ্তর বলল, তাতে নৌপথ বন্ধ হয়ে যাবে।
ফলে সেতুর কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০২২ সালের ১৪ জুন উচ্চতা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হয় এবং সংশোধিত নতুন নকশায় কাজ শুরু হয়।
—
নকশা আর অনুমোদনের জট
সওজের তথ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ে সেতুর ৪৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছিল। কিন্তু উচ্চতা নিয়ে বিআইডাব্লিউটিএর আপত্তির পর পুরো প্রকল্পই থমকে যায়। নকশা পরিবর্তন ও নতুন বাজেট অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় কেটে যায় আরও দুই বছর।
সম্প্রতি একনেক সভায় নতুন নকশা অনুমোদনের মাধ্যমে প্রকল্পটি আবার গতি পেয়েছে।
বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম বলেন,
> “নদীর ধারা পরিবর্তন ও জমি অধিগ্রহণের কারণে বারবার নকশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। এখন কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। মঙ্গলবার একটি স্প্যান বসানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় স্প্যানটি বসাতে পারব। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সেতুটি চালু করতে পারব।”
—
সেতু চালুর অপেক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ
বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক শুভংকর শুভ বলেন,
> “একটি স্প্যান বসানো হয়েছে। অপরটি দ্রুত স্থাপন করে সেতুটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হোক। তা না হলে মানুষ কবে এর সুফল ভোগ করতে পারবে বলা যাচ্ছে না।”
উল্লেখ্য, গোমা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ এসেছিল সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের দেওয়া চাহিদাপত্রে (ডিও লেটার) অনুমোদনের মাধ্যমে। জাসদ নেতা মোহাম্মদ মোহসীনসহ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই সেতু।
সেতুটি চালু হলে বরিশাল সদর, বাকেরগঞ্জ ও পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে যাতায়াত, চিকিৎসা, বাণিজ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা স্থানীয়দের।


