ঢাকাশনিবার , ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

২০ কোটি টাকা খরচের পর বরিশাল শিশু হাসপাতাল হচ্ছে শিশু ওয়ার্ড!!

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
ডিসেম্বর ৬, ২০২৫ ১:৩২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল বিভাগের একমাত্র ২০০ বেডের শিশু হাসপাতাল ভবনের নির্মানকাজের মেয়াদ শেষ হবার ৬ বছর পরে এটি শিশু ওয়ার্ড হিসেবে চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এতে নারাজ বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা, দেখা দিয়েছে বিপত্তি। এ অবস্থায় হাসপাতালটি আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। যদিও ইতিমধ্যে ব্যয় হয়ে গেছে ২০ কোটি টাকা। বিভাগের একমাত্র শিশু হাসপাতালটির ভবন নির্মান কাজ শেষ হয়েছে গত বছর। দেশের ৮ বিভাগে একটি করে শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে বরিশাল নগরীর আমানতগঞ্জে ২ একর জমির উপর এটি নির্মান কাজ শুরু হয়। বলা হয়েছিলো ‘এটি হবেশিশুদের জন্য আরোগ্যো স্থান। কিন্তু এ বছরের শুরুতে এটি বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাথে যুক্ত করে চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে নড়ে বসেছে শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে-২০০ শয্যার এই শিশু হাসপাতালটি পরিচালনায় অন্তত সাড়ে তিন জনবল দরকার। অথচ আজ পর্যন্ত একজন জনবলের বরাদ্দ এখনো দেয়া হয়নি। এমনিতেই মেডিকেলে হাসপাতালটি চলছে জনবল সঙ্কট নিয়ে। এর উপর হাসপাতালটির অবস্থান মেডিকেল থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে। এমন অবস্থায় এর দায়ভার নেয়া সম্ভব নয়।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন-আমি নিজেও দেখে এসেছি যে হাসপাতালটি সুন্দর হয়েছে তবে এটা বরিশাল মেডিকেল থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে। সরকারি সিদ্ধান্ত হলো এ হাসপাতাল পরিচালনা করবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং এখানকার শিশু ওয়ার্ডগুলো ওখানে শিফট করতে হবে। কিন্তু এমন ধরনের ২০০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনায় কমপক্ষে সাড়ে সাড়ে ৩শ পৃথক জনবল দরকার, যার কোন বরাদ্দ এখনো মেলেনি। এমনিতেই আমরা চলছি ১৯৬৪ সালের অর্গানোগ্রামের জনবলে, আমাদেরই রয়েছে জনবল সঙ্কট। সহায়ক শক্তির সঙ্কট, অর্থের যোগান ও দূরত্ব বড় বাধা হয়ে গেছে। উচিত হবে এটিকে পৃথক হাসপাতাল হিসেবে চালানো।

 

বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন অন্তত ৫২৭ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রতিবছর এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, অন্ত:বিভাগ ও বহি:বিভাগে প্রায় ৮ লাখ শিশু চিকিৎসা নেয়। এখানকার জনবল ও স্বল্পস্থানে শিশুরা এক রোগ নিয়ে ভর্তি হয়ে অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছে। সর্বোপরি মেডিকেল হাসপাতাল হচ্ছে শিশু রোগ গবেষনার একটি কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দাবি শিশু ওয়ার্ড অন্যত্র নেয়ার কোন যুক্তি নেই। শিশু হাসপাতালটি দূরে স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রভাবশালীর প্রভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ অবস্থায় শেবাচিন হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এম আর তালুকদার মুজিব বলেন- বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হচ্ছে একটি টিচিং হাসপাতাল। এটা ডাক্তার তৈরির কারখানা, শিশু রোগ থেকে শিক্ষার্থিরা শিখবে। এখান থেকে শিশু ওয়ার্ড অন্যত্র নেয়ার কোন যুক্তি নেই। সংশ্লিষ্ট কেউ ওখানে যাবে না। কথা ছিলো আমানতগঞ্জে বরিশাল বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল হবে, সবকিছু আলাদা হবে। এখন কি চিন্তা করে এটিকে মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ড করা হচ্ছে তা আমরা বুঝি না। তাছাড়া মেডিকেল থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে এ হাসপাতাল স্থাপনের সিদ্ধান্তও ছিলো রাজনৈতিক প্রভাবিত। বরিশালে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য এই ২০০ শয্যার একটি শিশু হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকায় ২ একর জমির উপর পুকুর ভরে একটি অত্যাধুনিক চারতলা ভবন, বিদ্যুতের সাব স্টেশন, অপারেশন থিয়েটারসহ হাসপাতালের ভবন নির্মানের কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি। প্রায় ২৪ কোটি টাকার এ ভবন নির্মানে গণপূর্ত বিভাগ কাজ সমাপ্তির তারিক নির্ধারন করে দেয় ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি । যদিও নকশা পেতে বিলম্ব, বার বার নকশা বদল ও পুকুর ভড়াটে বিড়ম্বনা কাটিয়ে নির্ধারিত সময়ের ৫ বছর পর ভবন নির্মানের সব কাজ শেষ হলেও ভবন হস্তান্তর করতে পারছে না ঠিকাদার। বর্তমান অবস্থায়ও হাসপাতাল পড়ে রয়েছে অরক্ষিত।
এক ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন-একাধিক ওয়ার্ডের সংযুক্তিতে হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ড চলে থাকে। এর একটিকেও আলাদা করে শিশু ওয়ার্ড চালানো যায়না। এখানে শিশু রোগী অনেক বেশি। এতো দূরে শিশুদের নেয়া যাবে না। শেষ পর্যন্ত অনেক সমস্যা দেখা দেবে যা এক সময় জাতীয় ইস্যুতে পরিনত হবে।
শিশু হাসপাতালে ওয়ার্ড চালু হলে সবার মধ্যেই ভোগান্তি দেখা দেবে।

গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন-২০১৭ সালে শুরু হওয়া এ হাসপাতাল নির্মানের কাজ নানা কারনে দীর্ঘায়িত হয়েছে। তবে এখন নতুন আঙ্গিকে এর অসমাপ্ত সব কাজ শেষ হবে দ্রুতই।

হাসপাতাল নির্মানে ইতিমধ্যেই ২০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। অবশিষ্ট কাজের জন্য আরো প্রায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।