ঢাকামঙ্গলবার , ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে প্রধান শিক্ষিকার অপসারণের দাবিতে মাহমুদিয়া স: প্রা: স্কুলে অভিভাবকদের তালা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩ ৬:৩৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে প্রধান শিক্ষিকার অপসারণের দাবিতে মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক স্কুলে অভিভাবকদের তালা।

নগরীর আমানাতগঞ্জ এলাকার ৪নং ওয়ার্ড-এর ৮৩নং মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাহামুদা খানম’র বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে অবিভাবকরা।

আজ (১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার) সকাল ৯ টায় ভিতর থেকে দুটি তালা দিয়ে বন্ধ ফটকের সামনে আন্দোলন করে অবিভাবকরা। এ সময় ক্লাসে আসা সহকারী শিক্ষিকারা উপস্থিত হলে তারা প্রাধান ফটকে তালা দেয়ার কারনে ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি, অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষিকা দীর্ঘদিন যাবত আমাদের বাচ্চাদের মারধর করে।

এমন কি সরকারী কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি ছাত্র-ছাত্রীদের। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর মা অভিযোগ করে বলেন আমার স্বামী নেই আমার মেয়েটা এই স্কুলে দীর্ঘ দিন ধরে পরাশুনা করে প্রধান শিক্ষিকাকে বলেছি উপবৃত্তির কথা তা না দিয়ে আমাকে অপমান করে তার কক্ষথেকে বের করে দেয়। ছাড়পত্র নিতে হলে দিতে হয় টাকা।

অবিভাবকরা অভিযোগ করে আমদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে। প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারণে ধ্বংসের পথে এই সনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আলামিন নামে এক ছাত্র স্কুল মাঠে ফুটবল খেলার সময় প্রধান শিক্ষিকার মেয়ের গায়ে আঘাত লাগিলে তার পরক্ষনে প্রধান শিক্ষিকা আলামিনকে ডেকে নিয়ে মারধর করে এবং তার মেয়ের পা ধরিয়ে মাফ চাওয়ায়।তার মেয়ে একই স্কুলের ছাত্রী।

অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের একক সিদ্ধান্ত ও নিজের ইচ্ছেমতো স্কুলের নিয়মনীতি চালু করায় নানা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।আর এসব বিষয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীসহ অবিভাবক এবং এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়টির একাধিক সহকারি শিক্ষক।

৮৩নং সরকারি মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪৭ সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় থেকে ওই বিদ্যালয়টি সুনামের সাথে পথ চলে আসছে।

কিন্তু বর্তমানে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা খাতুনের একক সিদ্ধান্ত ও তার স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণে স্কুলটি আজ বেহাল দশায় পড়িনত হয়েছে । আর এতে করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া এখন হুমকির মুখে।

লিখিত অভিযোগে আরো জানা যায়, ওই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন স্কুলে নিয়মিতভাবে না এসে বরং হাজিরা খাতায় নিজের মতো করে সময় বসিয়ে স্বাক্ষর দিয়ে পূরন করতেন। নিজের খেয়ালখুশি মতো শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতেন।

এ নিয়ে সভাপতি মহাদয় কঠিন হলে মাহমুদা খাতুন স্কুল কমিটির বারাবর নিজের অনিয়মের কথা স্বীকার করে একটি মুসলেকা দিয়ে আর এমন হবে না বলে জানান, কিন্তু পরের দিন থেকেই একই অনিয়ম করতে থাকেন।

এ নিয়ে উক্ত স্বনামধন্য বিদ্যালয়টির ১১ জন সহকারি শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

বর্তমানে ওই বিদ্যায়লটির বর্তমান সভাপতি হিসেবে সাইদুল হক পলাশ দায়িত্বভার গ্রহন করেন।

বর্তমান সভাপতি সাইদুল হক পলাশ বলেন অনেক দিন ধরে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের প্রেক্ষিতে কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েও সুফল পাচ্ছি না। তার খুটির জোর কোথায় এটা আমার জানা নেই ? গত তিন বছরে ১৫টির বেশী প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না। সে তার ইচ্ছেমত স্কুলে আসা যাওয়া করে, সরকারি ফাণ্ড তার ইচ্চেমত খরচ করে। আমি তার বর্তমান কর্মকান্ডে ক্ষুদ্র।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষিকা বলেন, “আমরা পাঠদানে মানসিক প্রস্তুতি হারিয়ে ফেলেছি। প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন যোগদান করার পর আমাদের নানাভাবে হয়রানী করছে। স্কুলের নিয়ম-নীতি পাল্টে ফেলেছে।

বেশ কিছুদিন যাবৎ প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা খাতুন আমাদের না জানিয়ে শিক্ষকদের কথা বিনা অনুমতিতে রেকর্ডিং, ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারন করছেন। আমরা নিজের বিষয় আলোচনা করেও তিনি সেই কথা ও ভিডিও চিত্র ধারন করছেন।” আর এসব রেকর্ডিং ও ভিডিও দিয়ে আমাদের জিম্মি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

তাই আমরা সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাছে অভিযোগ দিয়েছি। তারা আরও জানান যে স্কুলে সরকারী বরাদ্ধে ষ্টেশনারী খাতা কলম কাগজ দেওয়ার কথা থাকলে আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে এসব অভিযোগের বিষয় মাহমুদা খাতুন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বলেন, তার কথা কেউ শোনে না।

তাকে তাড়ানোর জন্য সবাই এক হয়েছে। এছাড়া শ্রেণীকক্ষ দখলের বিষয় তিনি আরো বলেন, “আমার কোন রুম নেই, তাই এখানে আমি বসি। আমি সরকারি চাকুরী করি কোন সভাপতির কথায় চলতে পারবো না। আমি অসুস্থ তাই কথা বলতে পারব না, আমি আপানার সাথে পরে কথা বলব এই বলে ফোন কেটে দেয়।

এসব বিষয়ে জানতে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন যে আমি নতুন এসেছি তার বিষয়ে আমি অবগত নেই। তবে শিক্ষাকর্মকর্তা পাঠিয়ে আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এসব অভিযোগের বিষয় ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ শামসুদ্দোহা বলেন, একজন ব্যক্তির জন্য সরকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা যায় না। প্রধান শিক্ষক যদি অন্যায় করে উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশের কথা জানান।

এসব অভিযোগের বিষয় বরিশাল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সাল জামিল বলেন আমি এসে দেখি স্কুলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলানো নির্বাচনের পরে তার ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়। অভিভাবক আশ্বস্থ হলে কাউন্সিলর মাধ্যমে গেটের তালা খুলে দেয়।

সূত্র জানান, মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে এর পূর্বেও একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়মের দায়ে ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল পরিচালক ( পলিসি ও অপারেশন) যুগ্ন সচিব স্বাক্ষরিত কাগজে বরিশাল সদর উপজেলার ৮৩নং মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বদলী করে নরকাঠি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হলে সেখান থেকে ৩ দিন পরে আবার পূর্বের জায়গায় চলে আসে, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার জন্য জোর সুপারিশ করেন।

এ বিষয় বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি’র ছোট ছেলে সাইদুল হক পলাশ জানান যে আমি প্রধান শিক্ষিকার অনৈতিক আবদার না শোনায় স্কুল আজ ধ্বংসের পথে।

আমি স্কুলের সার্থে প্রধান শিক্ষিকাকে অন্য কোথায় বদলি করার দাবি জানাচ্ছি। তার বিরুদ্ধে আমার কাছে অনেক অভিভাবক লিখিত আকারে দিয়েছে আমি তা আমি উপরস্থ কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।

আশা করি উপরস্থ কর্মকর্তা তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নিবে। জরাজীর্ণ বিদ্যালয়টি ক্রমশ প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতা এবং স্বেচ্ছাচারিতা বিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খানমকে দ্রুত অন্যত্র বদলীর দাবিও জানান তারা।