ঢাকাসোমবার , ১ জানুয়ারি ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : বরিশালে ৩৫ প্রার্থীর ১৭ জনই ‘প্রচারে নেই’

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জানুয়ারি ১, ২০২৪ ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : বরিশালে ৩৫ প্রার্থীর ১৭ জনই ‘প্রচারে নেই’

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের ছয়টি আসনে মোট ৩৫ প্রার্থীর মধ্যে ১৭ জন প্রচার-প্রচারণায় নেই বললেই চলে। এই ১৭ জনের মধ্যে অন্তত ১৫ প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টার চোখে পড়েনি। শোনা যায়নি মাইকিং। ভোটের মাঠ সরব রেখেছেন শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দুই প্রার্থীর মনোনয়ন আদালতের আদেশের অপেক্ষায় ঝুলে আছে। তাঁদের সমর্থকরা মৌখিকভাবে প্রচার চালাচ্ছেন।

রিটার্নিং অফিসারের তথ্য বলছে, বরিশালের ছয়টি আসনের পাঁচটিতেই প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। একটি আসনে নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন আদালতের আদেশের অপেক্ষায় আছে।বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া বরিশাল-৩ আসন (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বরিশাল-১ (আগৈলঝাড়া-গৌরনদী) ছাড়া অন্য পাঁচটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতাসহ ১০ জন। তাঁদের মধ্যে প্রচারে নেই দুজন।
এ ছাড়া জাপার ছয়জন, তৃণমূল বিএনপির তিনজন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চারজন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের দুজন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একজন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের একজন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের তিনজন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির একজন করে প্রার্থী রয়েছেন।

১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর গতকাল শনিবার পর্যন্ত ১২ দিনের প্রচারে দেখা যায়, অন্তত ১৭ প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে নেই বললেই চলে। নিষ্ক্রিয় থাকা এসব প্রার্থী নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। ভোটকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল থেকে সুবিধা নিয়ে তাঁরা ভোটের মাঠে নাম লিখিয়েছেন বলেও উঠছে অভিযোগ।

বরিশাল-১ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ নৌকার প্রার্থী। তাই এই আসনে আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেই। জাপার ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী তেমন প্রচারে নেই।

 

জাপার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইকবাল হোসেন তাপস বরিশাল-২ (উজিরপুর ও বানারীপাড়া) ও বরিশাল-৫ (সিটি করপোরেশন ও সদর) আসনে দাঁড়িয়েছেন। দুটি আসনের গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকায় তাঁর লাঙলের পোস্টার দেখা যাচ্ছে না। এমনকি তিনি কোনো প্রচারে নেই। জানতে চাইলে ইকবাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচন করার মতো পরিবেশ নেই। তাই আমি নির্বাচন থেকে সরে যাব। রবিবার (আজ) সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে।’ কেন দুটি আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তে দুটি আসনে প্রার্থী হয়েছিলাম, কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তাই সরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছি।’বরিশালের ছয়টি আসনের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো ঘুরে ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল-২ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে আছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নকুল কুমার বিশ্বাস, স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে ফাইয়াজুল হক ও মো. মনিরুল ইসলাম। নকুল কুমার প্রতিদিনই গান গেয়ে ভক্তদের নিয়ে প্রচার চালান। আসনটিতে তৃণমূল বিএনপির শাহজাহান সিরাজ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সাহেব আলী প্রচার নেই। জানতে চাইলে শাহজাহান সিরাজ এবং সাহেব আলী বলেন, তাঁরা সীমিত আকারে পোস্টার ছাপিয়েছেন। দু-এক দিনের মধ্যে পোস্টার লাগানো ও মাইকিং শুরু করা হবে।
তবে জোর প্রচার চালাচ্ছেন তিনবারের এমপি আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নাতি ফাইয়াজুল। উজিরপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মী মেননের পক্ষে কাজ করছেন। তবে বানারীপাড়া আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে।

রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘জোট থেকে প্রার্থী হওয়ার পর বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বর্ধিত সভা করেছি। সভায় আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী নৌকাকে বিজয়ী করার অঙ্গীকার করেছেন। বেশির ভাগ নেতাকর্মী নৌকার পক্ষে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন। নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবেন।’

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে ছয় প্রার্থীর মধ্যে তিনজন প্রচারে একেবারেই নেই। বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাপার মিজানুর রহমান (লাঙল), সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের হৃদয় ইসলাম চুন্নু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথ। এখানে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে শাম্মীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার আবেদনের শুনানি ২ জানুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে হবে।

হৃদয় ইসলাম চুন্নু বলেন, ‘একতরফা নির্বাচনে কী হচ্ছে সবই আপনারা অবগত। তা ছাড়া দলীয় কোনো ফান্ড নেই। নিজের খরচে যতটুকু পেরেছি কিছু জায়গায় পোস্টার লাগিয়েছি।’ তবে এলাকা ঘুরে তাঁর ও জাপার মিজানুর রহমানের লাঙলের কোনো পোস্টার চোখে পড়েনি।

বরিশাল-৫ (বরিশাল সদর) আসনে ছয় প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের জাহিদ ফারুক (নৌকা), সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আসাদুজ্জামান ও স্বতন্ত্র মো. সালাহউদ্দিন রিপন প্রচার চালাচ্ছেন। অন্য তিন প্রার্থী প্রচার চালাননি। তবে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বাতিল হয়েছে। ২ জানুয়ারির সর্বশেষ শুনানিতে সাদিকের মনোনয়ন নিয়ে উচ্চ আদালত আদেশ দেবেন।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে ১০ প্রার্থীর মধ্যে প্রচারে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের আবদুল হাফিজ মল্লিক (নৌকা), জাপার নাসরিন জাহান (লাঙল), স্বতন্ত্র মো. শাহবাজ মিঞা ও শামসুল আলম চুন্নুকে।

বরিশাল সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশার বিপরীতে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও বেশ কিছু আসনেই শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন, তবে তাঁদের সবাই আওয়ামী লীগের। এই দুই গ্রুপের বাইরে অন্য প্রার্থীরা ধরেই নিয়েছেন, নির্বাচনী প্রচারণা করে সময় ও অর্থ নষ্ট হতে পারে। তাই প্রচারণায় তাঁরা পিছিয়ে। ছোট দলের কেউ কেউ প্রচারণায় আসেননি।’