স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেট নগরীতে হবিগঞ্জের আরমান আহমেদ (২৫) নামক যুবকের উপর হামলার ঘটনার সাথে ছাত্রলীগ জড়িত নয় বলে স্পষ্ট জানাগেছে।
গত ১৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) মধ্যরাতে সিলেট নগরীর জালালাবাদ মেইন পয়েন্ট এলাকায় রক্তাক্ত ও গুরুর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের মো: আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আরমান আহমেদ (২৫) নামক এক যুবককে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় দূর্বৃত্তদের আক্রমণে এমন নৃশংস অবস্থা হয়েছে তাঁর।
এসময় স্থানীয় লোকেরা পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানান, পথচারী আরমানের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে একদল সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁরা তাঁকে জোড় করে ধরে নিয়ে যায় জালালাবাদ এলাকার ভিতর সাইডের চিপাগলিতে। হাত ও পা দ্বারা আঘাত ছাড়াও বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র এবং লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তাঁর সাড়া শরীরে জখম ও রক্তাক্ত করা হয়। একপর্যায়ে আরমানের হুঁশ চলে যায়, কিন্তু তারপরও তাঁকে মারতে থাকে দুর্বৃত্তরা। তখনই হঠাৎ সেখানে রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া এক ব্যবসায়ী দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে বিষয়টি লক্ষ্য করেন ও আরও কিছু স্থানীয় মানুষ তাৎক্ষণিক জেগে উঠে, সকলে টর্চ লাইটের আলো মারতেই দূর্বৃত্তরা মাটিতে লুটিয়ে থাকা অচেতন আরমানকে পিঠানো বন্ধ করে দেয় এবং মোটর সাইকেল স্টার্ড দিয়ে উক্ত স্থান ত্যাগ করে। কিন্তু চলেযাওয়ার সময়ও তাঁদের মধ্যে একজন আরমানের শরীরে আরকয়েকয়েকটি লাথি দিয়ে বাইকে উঠে ও ঐখান থেকে চলেযায়। পরে স্থানীয় লোকেরা মিলে থানায় ফোন করেন ও গুরুতর আহত অবস্থায় ঐ যুবক আরমানকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।
এসময় একজন ভদ্রলোক আরও বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে যারা ছিলেন তাঁদের কয়েকজনই নাকি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় তিন শীর্ষ নেতা সাদ্দাম হোসেন, শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও জুবরান চৌধুরীর নামও বলেন তিনি। তাঁর ধারণা ছিলো সংগত কারণে বর্তমান সময়ের সবথেকে প্রভাবশালী এই তিন ছাত্রলীগের নেতাদের হুকুমেই পথচারী যুবক আরমানের উপরে নৃশংস হামলা হয়েছে তাই তিনি সাদ্দাম-ইনান-জুবরান এর কয়েকজন কর্মীদের চেহারা দেখতে পেয়েছেন বলেই তিনি জানান।
তবে অবশেষে এরুপ সব জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ও ছড়াছড়ির ভাবনা-ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কেউই বিন্দুমাত্র যুক্ত নয়। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক ইনান ও সিনিয়র সদস্য জুবরান বা তাঁদের কর্মীরা কেউ এসম্পর্কে কিছুই জানতেন না। এই ঘটনায় তাঁদের কখনও কোনো সংপৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখানে অযথা তাঁদের মানহানি করার উদ্দেশ্যেই তাঁদের নাম আনা হয়েছে বলে জানা যায়। পুলিশি অভিযানের প্রেক্ষিতে আরও জানাগেছে, আহত আরমান আহমেদ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সে ছিনতাইকারীদের হামলার স্বীকার হয়। ছিনতাইকারী দলের সাথে জোড়াজুড়ি করতে গিয়েই সে তাঁদের হাতে বর্বর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। ডাক্তারদের কাছ থেকে জানাযায় তাঁর ডান হাতের আঙুলে একটি আংটির চাপ পাওয়া গেছে, গলায় চেনের চিহ্ন দাগ পাওয়া গেছে সম্ভবত এটি স্বর্ণের বা মূল্যবান কোনো আংটি ও চেন ছিলো যা চিনিয়ে নেওয়ার জন্যই জোড়াজুড়িতে ছিনতাইকারীদের হাতে আরমান নির্দয়ভাবে আহত হয়েছে।
আজ সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেন, “আমি গতরাতে এই ঘটনার কথা শুনেছি। এবং শুনামাত্র কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখানে একটা ছিনতাই কেসে ছাত্রলীগের নেতাদের নাম ভিত্তিহীনভাবে প্রচার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশ ইতিহাস। তবে ছাত্রলীগের নাম – পরিচয় ব্যবহার করে কেউ কোনো অপরাধ করলে তাঁকে নিশ্চয়ই শাস্তি দেওয়া হবে। কিন্তু অযৌক্তিক মিথ্যে অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাদের বিরুদ্ধে এরকম প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো অন্যায়। বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তী সূর্যসন্তান আমাদের সকলের প্রিয় ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব প্রয়াত জননেতা শোয়েব আহমদ চৌধুরী’র ছেলে জুবরান যেকিনা এই কিশোর বয়সেই দেশ ও জাতির কল্যাণে, অসহায় সাধারণ মানুষেরর সেবায় এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট প্রজন্ম গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে প্রতিনিয়ত ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাঁর নামে এরকম মিথ্যা অভিযোগ আনলে তা মেনে নেওয়া দায়। আর ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তো এরকম ঘটনার দ্বারেকাছেও নেই এইসব শোনাটাও আজগুবি। যে বা যারা এরকম অভিযোগ তুলেছেন এবং মনগড়া কথা বলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মতো উপমহাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ও তাঁর নেতাকর্মীদের নামে দূর্নাম ছড়ানোর অপচেষ্টা করেছেন তাঁদেরকে ধরে কঠিন জিগ্যেসাবাদ করা প্রয়োজন। তবেই আসল ঘটনা কি এবং ষড়যন্ত্রটার কারণ সবকিছুই বেড়িয়ে আসবে। আর খুব শীঘ্রই আহত ছেলেটার উপর যারা হামলা করেছে সেসকল সত্যিকারের অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।”
ডিবি প্রধান জনাব হারুনর রশীদ দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, “সম্প্রতি সিলেট টাউনে আরমান আহমেদ (২৫) নামক যুবকের উপর অকাম্য হামলার ঘটনা ঘটেছে। যা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু এটাকে ইস্যু বানিয়ে নির্দোষ ছাত্রলীগ নেতাদের নামে মিথ্যে অভিযোগ ছড়ানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী এটা অপরাধের সামিল। আমাদের চৌকস পুলিশ অফিসার ও ডিবি কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু তদন্তের অভিযানে বেড়িয়ে এসেছে উক্ত হামলার ঘটনার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বা ছাত্রলীগের সিনিয়র তিন নেতার নাম সহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের জড়িয়ে যেসকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা পুরোপুরি অসত্য এবং মিথ্যা। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয়, এটা জলের মতো পরিষ্কার।”
সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি জনাব শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, “গত ১৪ই জুলাই রোজ বৃহস্পতিবার রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত আসল দোষীদের বিরুদ্ধে একশন নিতে আমরা সদা সক্রিয়। পথচারী ঐ যুবককে গুরুতর আঘাত ও তাঁর এমন হাল করার পেছনে যারা যারা ছিলো তাঁদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। এলক্ষ্যে আমাদের দ্বায়িত্বাধীন অফিসারদ্বয়ের একটি বিশেষ টিম কাজ করছেন। ঘটনার রাতে প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি করা ভাষ্য সম্পূর্ণ ভূল। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর পরিষদপর সভাপতি জুবরান চৌধুরী ঘটনার সময় মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী স্যারের সঙ্গে দরগাহ হয়রত শাহজালাল (রহঃ) এর মাজার জেয়ারত শেষে মন্ত্রী মহোদয়ের সিলেট শহরস্থ টিলাগড় বাসভবনে অবস্থানরত ছিলেন এবং সেখানেই তিনি রাত্রিযাপন করেছেন। আর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান ঘটনার কালে ঢাকায় অবস্থানরত ছিলেন এবং এখনও তাঁরা রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছেন। তাঁদের কর্মী কাউকেও এঘটনার সাথে জড়িত বলে কোনো প্রমাণ মিলেনি। নিশ্চিত এটাই জানাগেছে যে, তাঁরা কেউই এঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নন। সুতরাং সকলকে বলবো আপনারা মিথ্যে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। বাকি সঠিক তদন্তের স্বার্থে এবং আসল আসামীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি প্রদানে আপনাদের সকলেরই সহযোগিতা আমরা কামনা করি।”
এবিষয়ে সিলেট কোতওয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, “এই কেসটি আমার কাছে প্রথমেই ছিনতাই কেস মনেহয়েছিলো। আর সেটাই সত্য প্রমাণিত হলো। ওরা ছিনতাইকারীদে একটা বিশাল ও মারাত্মক দল ছিলো। ছিনতাইকারীদের হামলার স্বীকার আহত আরমান হবিগঞ্জ সদরের বাসিন্দা হিসেবে হবিগঞ্জ জেলার মাননীয় পুলিশ সুপার এবং হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি সাহেবও এই কেসটির তদন্তে কাজ করছেন। এছাড়াও আমাদের বাংলাদেশ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাগণের (স্যারেরা) নেতৃত্বেও ও বিভিন্ন ইউনিটের অফিসারদের অনুসন্ধান শেষে আমরা অতিশীঘ্রই ছিনতাইকারী অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো। ধন্যবাদ।”
এদিকে আরমানের বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকগণ জানান, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। এখনও আগের অবস্থাতেই আছে। জ্ঞান ফিরলেও নড়াচড়া করতে বা কথা বলতে পারছেনা সে। গুরুতর ভারি জিনিসের আঘাতের কারণে তাঁর বাম হাত এবং দুই পা অবসের পথে চলেযাচ্ছে। তার পেটের সাইডে চুরিরআঘাতের জন্য ইনফেকশন হয়ে পচন ধরেছে ইতিমধ্যে, এরজন্য অপারেশ করতে হতে পারে। তবে তাঁর এরকম অবস্থা না পাল্টালে অপারেশন করা সম্ভব নয়। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা তাঁর অবস্থান বিবেচনা করে তাঁকে ঢাকায় রেফার করতে পারেন।
আরমানের মা-বাবার সাথে কথা বলতে গেলে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং তাঁদের ছেলের সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চান। তাঁরা আরমানের উপর হামলার ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করেন। তাঁরা বলেন, তাঁদের ছেলেকে ব্যবহার করে যেন কোনো নোংরা রাজনীতি করতে দেওয়া না হয়। ক্ষমতাসীন দলের ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সম্মানী নেতাদের ফাঁসানোর অপচেষ্টা যেন সফল না হয় এটাই তাঁদের আবদার। যেসকল ছাত্রলীগ নেতাদের নাম অযৌক্তিকভাবে অযথা আনা হয়েছিলো তাঁদের নিকট ক্ষমা চান আরমানে বাবা-মা। তাঁরা চান যেন প্রকৃত দোষীরা ধরা পড়ে এবং ওদের বিচার হয়।