নিউজ ডেস্ক :: যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার
ফরিদপুর শহরের আদর্শ বালিকা স্কুলের ছাত্রীদের যৌন হয়রানি নিপীড়নসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে প্রধান শিক্ষক জয়নুল আবেদীনকে (৪৬) গ্রেপ্তার করেছে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ। রোববার (১৪ জুলাই) রাত ৮টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে। বর্তমানে তিনি জেল হাজতে রয়েছেন।
ওই স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান কয়েকজন ছাত্রীর অভিযোগ, ২০১০ সালে বিদ্যালয়টিতে যোগদানের পর থেকে গত ১৪ বছরে বিভিন্ন সময়ে ওই স্কুলের ছাত্রীদের ওপর যৌন হয়রানি নিপীড়নসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন ওই শিক্ষক।
রোববার তাদের ১২ জন ফরিদপুরের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে হাজির হয়ে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো খুলে বলেন এবং লিখিত অভিযোগ দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা হয় ওই শিক্ষককে। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার রাতে জয়নুল আবেদিনকে ফরিদপুর শহর থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শহরের প্রাণকেন্দ্র ঝিলটুলি মহল্লায় অবস্থিত আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন দশম শ্রেণির একাধিক ছাত্রী।নিজের ও পরিবারের মানসম্মানের ভয়ে এতদিন যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া অনেকেই মুখ খোলেননি। প্রধান শিক্ষক হবার পর থেকে গত একযুগের বেশি সময় ধরে বিশেষ করে দশম শ্রেণির ছাত্রীরা জয়নুলের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
শ্রেণিকক্ষেই ছাত্রীদের গায়ে হাত দিতেন তিনি। নিজ বাসায় প্রাইভেট কোচিং করানোর সময় মেয়ে শিক্ষার্থীদের একাকী পেলে ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়া, ফেসবুক মেসেঞ্জারে উত্তেজনাপূর্ণ আলাপচারিতাসহ পর্ণ ছবি ও ভিডিও পাঠাতেন।
ফাঁদে পড়ে তার সঙ্গে অনেক ছাত্রী ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য হয়েছেন। যারা তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হত তাদের টেস্ট পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়ে পাস করিয়ে দিতো এবং যারা তার কুপ্রস্তাবে রাজি হতো না তাদের ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখানো হতো।
অভিযোগে শিক্ষার্থীরা জানান, শ্রেণিকক্ষে থাকা বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা, বিশেষ করে গত ১১ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই করা হলে অনেক কিছুই জানা যাবে। ক্লাস চলাকালীন মেয়েদের শরীরে স্পর্শ করতেন এই প্রধান শিক্ষক। এ বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষককে জানালেও তারা ভয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ফরিদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ মাহাতাব আলী মেথু বলেন, শনিবার (১৩ জুলাই) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমার সঙ্গে দেখা করলে আমি তাকে এ বিষয় নিয়ে রোববার মিটিং ডাকার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বিদ্যালয়ে আসেননি এবং মিটিং এর বিষয়ে কাউকে কলও করেনি।
সচেতন নাগরিক কমিটি ফরিদপুর এবং ফরিদপুর জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি শ্রিপ্রা রায় বলেন, এ প্রধান শিক্ষকে বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছে। অনতিবিলম্বে তাকে বরখাস্ত করা হোক। এটা নিয়ে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেব আমরা। ভুক্তভোগীদের পাশে আছি।