ঢাকাশুক্রবার , ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বরিশাল আদালতে জমা দেয়া কোন চার্জশিট সঠিক ?

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪ ৯:৫২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

রবিউল ইসলাম রবি :: ‘আকাশে যত তারা, পুলিশের তত ধারা’– প্রচলিত এ কথার সত্যতা মিলেছে বরিশালে থানা ও আদালতে দায়েরকৃত ৩টি মামলার পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদনের মধ্যে। একই ঘটনার অনুকূলে স্বামী-স্ত্রী তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে থানা-আদালতে দায়েরকৃত আলাদা মামলার বর্ণনায় দুই তদন্তকারী কর্মকর্তা একে অপরের উল্টো চার্জশিট প্রদান করেছেন। যে কারণে, স্বামী-স্ত্রীর ওই ২টি মামলার দায়েরের ৪ দিন আগে তাদের প্রতিপক্ষের দায়েরকৃত অপর মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে । অনুসন্ধানকালে বরিশাল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্তৃক আদালতে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সত্যতা মিলেছে। সরেজমিন পরিদর্শনকালে সংগ্রহ করা হয়েছে ঘটনার তথ্য প্রমাণ সহ ভিডিও ফুটেজ। ২০২৩ সালের ৩ ও ৭ জুন নগরীর চকবাজার বিউটি রোডে দুইটি ঘটনায় দায়েরকৃত ওই ৩টি মামলার ঘটনায় উপরোক্ত ঘটনা ঘটে।

“দায়েরকৃত দুইটি মামলার বর্ণনা, ঘটনাস্থল, সময়, আসামী ও স্বাক্ষী একই। পার্থক্য মামলা একটি থানায় অপরটি আদালতে দায়ের হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা দুই পুলিশ কর্মকর্তা একে অপরের উল্টো চার্জশিট দিয়েছে। আইন সকলের জন্য সমান হলেও এমন হবার কারণ সম্পর্কে জানতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিলে প্রথমে ঘটনা শুনলেও মাঝ পথে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরবর্তীতে কল দিলেও ধরেননি।”

বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. খান মো. মোর্শেদ একই ঘটনায় দু’টি মামলার পরস্পর বিরোধী দুইটি চার্জশিট দেখে বলেন, “এমন হবার কারণ সম্পর্কে তদন্তকারী কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবে।”

তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, “তদন্তে যা পেয়েছি তা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে দিয়েছি।”

” পিবিআই’র তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন সঠিক? নাকি আদালতে আপনার দেয়া চার্জশিট সঠিক? মুঠোফোনে এমন তথ্য শোনা মাত্রই ব্যস্ততার কথা বলে এড়িয়ে যান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিএমপি’র পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আমানুল্লাহ আল-বারী। পরবর্তীতে তাকে একাধিকবার কল দিলেও ধরেননি। বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় এ চার্জশিট দিলেও বর্তমানে তিনি বিএমপি’র কাউনিয়া থানায় কর্মরত রয়েছেন। ওই স্বামী-স্ত্রীর প্রতিপক্ষের দায়েরকৃত অপর মামলাটিরও তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন আমানুল্লাহ আল-বারী। “

বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ঘটনাস্থলে দুই তদন্তকারী কর্মকর্তা যে যেমন তথ্য পেয়েছেন, সে তেমন প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছেন। বিষয়টি এখন আদালত দেখবেন।”

কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন,”ঘটনার বিষয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আমানুল্লাহ আল-বারী ভালো বলতে পারবে।”

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৭ জুন সকাল সাড়ে ১১ টায় সৈয়দ আশিক চৌধুরী (৪০) ও তার স্ত্রী আমিনা বেগম ওরফে সুমি (৩০) বরিশাল চকবাজার বিউটি রোডস্থ তার মালিকানাধীন ভবনের অফিস কক্ষে ছিলেন। এ সময় একদল লোক এসে অফিস কক্ষে ভাঙচুর চালায়। ক্ষতি সাধন হয় অনেক মালামাল। বাঁধা দিলে হামলাকারীরা আশিকের মারধর করে এবং তার স্ত্রীকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। হামলাকারীরা এ সময় আশিকের অফিসে থাকা ভবন সংস্কারের টাকা ও সুমির ব্যবহৃত মোবাইলসহ শরীরে থাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। ৯৯৯ ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা আশঙ্কাজনক অবস্থায় আশিকের স্ত্রীকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনার অনুকূলে ১৮ জুন আশিক চৌধুরী বাদী হয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ২৯ এবং জিআর নং ৩৯৬/২৩। দায়েরকৃত মামলায় নামধারী ৪ আসামী হলেন- কালাম মল্লিক (৪০) ও তার ছেলে রাকিব মল্লিক (২৪), হোসনেয়ারা আক্তার (৪০) ও শাহিনুর আক্তার (৩৫) সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন পুলিশ পরিদর্শক আমানুল্লাহ আল-বারী।

আবার ওই আসামীদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনে ১৮ জুন আশিক স্ত্রী আমিনা বেগম সুমি বাদী বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত একটি মামলা দায়ের করেন। যার এমপি নং ১৯২/২৩। এ মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন পিবিআই’র সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ রফিকুল ইসলাম।

২০২৩ সালের ৩১ আগষ্ট অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট আদালতে কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত আশিক চৌধুরীর মামলার চার্জশিট প্রদান করেন পুলিশ পরিদর্শক আমানুল্লাহ আল-বারী। তদন্ত প্রতিবেদনে দায়েরকৃত মামলার ৯টি ধারার মধ্যে পেনাল কোড ১৪৩/৩২৪/৩৭৯ ধারাকে বাদ দিয়ে অন্য ধারাগুলোতে ৪ আসামীকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলার মূল বর্ণনাগুলোতে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যাইনি বলে উল্লেখ করেন। আহত সুমি তাকে চিকিৎসার সনদ দেয়নি। পিবিআই’র তদন্তে দিবেন বলে জানান।

২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে আমিনা বেগম সুমির দায়েরকৃত মামলার চার্জশিট প্রদান করেন পিবিআই’র সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ রফিকুল ইসলাম। তদন্ত প্রতিবেদনে পেনাল কোড ১৪৩ ধারাকে বাদ দিয়ে অন্য ধারাগুলোতে ৪ আসামী অভিযুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়। তদন্তকালে নিরপেক্ষ ৬ স্বাক্ষীকেও যুক্ত করেছেন তিনি এবং প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন তিনি।

২০২৩ সালের ৭ জুন এ্ ঘটনার পূর্বে অর্থাৎ ৩ জুন সকাল ১০ টায় নগরীর চকবাজার বিউটি রোডে নির্মানাধীন ৩ তলা ভবনের কার্যক্রম চলমান অবস্থায় ১ম তলায় ভাঙচুর ও হামলা চালিয়ে মালামাল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন রাকিব মল্লিক। ১৫ জুলাই বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত মামলাটি দায়ের করলে বিচারক বিএমপি’র কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এফআইআর এর নির্দেশ দেন। দায়েরকৃত মামলার আসামী হলেন, সৈয়দ আশিক চৌধুরী (৪০) ও তার স্ত্রী আমিনা বেগম, শারমিন বেগম (৫৫) ও আপন চৌধুরী (২৫)সহ অজ্ঞাত ২০/২৫ জন।

এ মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন পুলিশ পরিদর্শক আমানুল্লাহ আল-বারী। তদন্তকালে দায়েরকৃত মামলার সকল বর্ণনার অনুকূলে সত্যতা পেয়েছেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন। দায়েরকৃত মামলার বাদী রাকিব মল্লিক ঘটনার দিনই বরিশাল বাজার রোড এলাকায় অবস্থিত কেএমসি হাসপাতাল এর মেডিকেল অফিসার পদে স্বাক্ষরিত তারেক নামের এক চিকিৎসকের সনদ নিয়ে মামলাটি দায়ের করেন।