ঢাকামঙ্গলবার , ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বরিশাল সদর হাসপাতালে গত দুই দিন ধরে পানি নিয়ে চরম দুর্ভোগে রোগী ও  চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪ ১১:২৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

রবিউল ইসলাম রবি :: গত দুই দিন ধরে পানি নেই ১০০ শয্যার বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালে। যে কারণে চিকিৎসাধীন প্রায় দেড় শতাধিক রোগী ও তাদের সাথে থাকা স্বজনরাসহ শত শত দর্শনার্থী এবং হাসপাতাল কোয়ার্টারে বসবাসকারীদের এবং দায়িত্বরত চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এমনকি দুই দিনে স্নানও করতে পারেনি অনেকে। বাইরে থেকে পানি নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করছে। নোংরা হয়ে গেছে হাসপাতাল ওয়ার্ডের শৌচাগারগুলো। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে পানির কল থেকে কাদা ও বালি মিশ্রিত পানি উঠলেও সেই পানি ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ে।

উপরোক্ত বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, অফিসিয়ালভাবে ঢাকায় ট্রেনিং এ রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) ছিলাম। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বরিশাল এসে এ পরিস্থিতি শোনামাত্রই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে জানাই। তারা সরেজমিন পরিদর্শনও করেছে এবং বর্তমানে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ঠিকাদার মো. রেজাউল করিম পলাশ জানান, বর্তমানে অচল নলকূপটির ১০০ ফুট মাটির নিচে ঢালাই বা পাইপ ফেটে যাওয়ার কারণে নোংরা পানি উঠছে। হাসপাতালের পেছনে কোয়ার্টারে ঢুকতে প্রবেশ পথের পাশে থাকা পানির পাম্পটির নিচের এমনটা হয়েছে। এমন অবস্থায় হাসপাতালের পূর্ব পাশে থাকা নলকূপের লাইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে সেটি সচল রয়েছে। সেখান থেকে লাইনের সংযোগ দিতে যতটুকু সময়। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় মালামাল আনা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় অস্ত্রোপচারসহ রোগীদের চিকিৎসাসেবার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি পানি সংকটে অন্তর্বিভাগে রোগী ভর্তি প্রায় বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
গাইনি বিভাগে ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের শৌচাগার প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী। মলমূত্র শৌচাগারের মেঝেতে ছড়িয়ে রয়েছে। দুর্গন্ধে আশপাশ দিয়েও চলাচল করা যায় না। শৌচাগারে গিয়ে বের হলে এই ময়লা পানি পায়ে পায়ে ছড়িয়ে পড়ছে ওয়ার্ডের ভেতরে। এতে ওয়ার্ডে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চিকিৎসাধীন রোগী মোঃ হারুন হাওলাদার (৫৫), মহিউদ্দিন খান (৫২), সেতারা বেগম (৫০) বলেন, পানি না থাকায় গোছল-বাথরুম গত দুই দিনে করতে পারেনি। টয়লেট করতে হলে বাহির থেকে পানি আনতে হয়। দুগন্ধে ভরে যাচ্ছে ওয়ার্ড। নিউমোরিয়ায় আক্রান্ত শিশু তানহা (২ ) ও সাফওয়ান আবদুল্লাহ (৪) মা-বাবা বলেন, শিশুরা বাথরুম করে সেই মলমূত্র পরিষ্কার করার জন্য পানি প্রয়োজন। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ডায়রিয়া ও গাইনী বিভাগে।

ভর্তি রোগীর স্বজন সাবিনা (৩২), জুই (৩০), সবুজ (৩৫) ও আবুল (৪৮) জানান, পানি না থাকায় চরম কষ্ট হচ্ছে। নানা কাজে ব্যবহারের জন্য বাইরে থেকে পানি বয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে। খাবার পানির বোতল কিনতে হচ্ছে। সোমবার থেকে পানির কলে বালু ও ময়লা আসছে। ওই পানি খাওয়া তো দূরের কথা ব্যবহারও সম্ভব নয়। মাত্রারিক্ত বালি উঠার কারণে ব্যবহারের পর পানি নেমে যাওয়ার সচল লাইন অচল হয়ে গেছে। ভেসিনগুলোতে হাত ও মুখমন্ডল ধৌত করা যাচ্ছে না। জমে আছে পানি। বালুর জমে থাকায় পানি নেমে যেতে পারছে না।

হাসপাতালের কর্মরত একাধিক সেবিকা (নার্স) জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ১০টা থেকে পানি নিয়ে দুর্ভোগ শুরু হয়। চিকিসাধীন ভর্তি রোগীর সংখ্যা থাকে ১ শ’প্লাস। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ভর্তি হয় ৫০ থেকে ৬০ জন রোগূী। পানি না থাকার কারণে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান মুঠোফোনে বলেন, সদর হাসপাতালের পানিতে বালু ও কাদা উঠছে বিষয়টি শোনার পর- মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে। আজকে রাতের মধ্যেই মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টম্বর) হাসপাতালে পানি সমস্যার সমাধান হবে।

বরিশাল স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী জানান, গভীর নলকূপের ফিল্টার নষ্ট হয়ে পানির সঙ্গে বালু উঠছে। পানি সরবরাহ করতে বিকল্প ব্যবস্থা ও গভীর নলকূপ মেরামত সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।