নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস গ্রামের আব্দুল্লাহ আল আরাফ। বয়স দেড় বছর। গত ১০ সেপ্টেম্বর অসাবধানতাবসত গরম পানি পড়ে ঝলসে যায় আরাফের শরীর ও মুখমন্ডল।
সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে রেফার করে। আরাফকে নিয়ে তার অভিভাবকরা দ্রুত শেবাচিম হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন।
আরাফের বাবা শামিম হোসেন জানান, সন্তানকে নিয়ে এতদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, অথচ এখানে তেমন কোনো ভালো চিকিৎসা পাচ্ছি না।
তাছাড়া শেবাচিম হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ফলে সংকট আর দুর্ভোগের মধ্য দিয়েই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
শুধু শামিম হোসেন নয়, এমন অভিযোগ এ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন প্রতিটি রোগীর। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সূত্র জানায়, ৩৫ বেডের এ ইউনিটটিতে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর ভরসা করে চলছে ওয়ার্ডটি।
সূত্রে জানা গেছে, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যতম নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১৯৬৮ সালে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা হলেও এখনো অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ ইউনিট চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
ফলে সাধারণ ভুক্তভোগী রোগীদের সামান্য চিকিৎসার জন্য হতে হয় ঢাকামুখী। বিভাগীয় শহর হওয়া সত্ত্বেও এ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটটি চলছে চিকিৎসকবিহীন।
জানা গেছে, তিন বছর আগে ঝালকাঠিতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের পর কয়েকশ যাত্রী আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই ঘটনার পরপরই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক প্রাথমিকভাবে একটি বার্ন ইউনিট চালু করেন।
তৎকালীন সময়ে বার্ন ইউনিটে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিলেও তিনি (ডা. মারুফুল ইসলাম) বদলিজনিত কারণে গত একমাস আগে ঢাকায় চলে যান। ফলে ৩৫ বেডের এই ইউনিট এখন অভিভাবকহীনভাবে চলছে।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিট ঘুরে দেখা যায়, ওয়ার্ডটিতে নেই পর্যাপ্ত সেবিকা ও আয়া বুয়া। নেই পর্যাপ্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। ওয়ার্ডটিতে এয়ারকন্ডিশন থাকলেও তা নষ্ট হওয়ায় রোগীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
বৈদ্যুতিক ফ্যান যেকয়টি রয়েছে তারও অধিকাংশই চলে না। ফলে চরম ভোগান্তি আর দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে দূরদূরান্ত থেকে আসা পোড়া মানুষগুলোর।
বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আরেক রোগীর স্বজন রাসেল বলেন, ওয়ার্ডটির মধ্যে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা ও রোগীর দর্শনার্থীদের অবাধে প্রবেশ, সঠিকভাবে পরিচ্ছন্ন কর্মী না থাকার কারণে তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।
এসব সমস্যার কথা অকপটেই স্বীকার করলেন বার্ন ইউনিটে দায়িত্বরত সেবিকারা। তারা বলেন, ওয়ার্ডে ঠিকমতো আয়া ওয়ার্ডবয় থাকে না, তবুও চিকিৎসা চালিয়ে নিতে হয়। রোগীদের চাহিদা মতো সবকিছু দিতে পারি না, আমাদের এতে বিভিন্ন সময় নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
এ ব্যাপারে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক রেজোওয়ানুল আলম বলেন, হাসপাতালে বার্ন ইউনিটসহ একাধিক বিভাগে চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া বরিশালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট নির্মাণের জন্য দশতলা ভবনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেটি পাস হলে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর আগুনে পোড়া রোগীদের আর ঢাকায় যেতে হবে না।