ধর্ম ডেস্ক :: রাতের বেলায় চুল-নখ কাটা কি জায়েজ?
মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে চুল, দাড়ি কিংবা নখ বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ জন্য শখের বসে বড় চুল রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন অনেকে। খোদ রাসুলুল্লাহ (সা.) এরও মাথার চুল তার কাঁধ পর্যন্ত স্পর্শ করতো (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৪৮৪)। তবে বিভিন্ন বর্ণনায় উম্মতদের জন্য চুল ছোট রাখা যে উত্তম সে কথা এসেছে।
অন্যদিকে, চুল-নখ কাটা, গোঁফ ছোট করা এগুলো যেমন মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য তেমনি পরিচ্ছন্নতার অংশ। আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, ফিতরাত বা মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য পাঁচটি। সেগুলো হলো- খাতনা করা, ক্ষুর ব্যবহার করা (নাভির নিচে), বগলের পশম ফেলে দেয়া, নখ কাটা ও গোঁফ ছোট করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৪৭১)
এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গোঁফ ছাটা, নখ কাটা ও বগলের পশম ফেলে দেয়ার বিধান রয়েছে। আনাস ইবনু মালিক (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুল (সা.) আমাদের জন্য গোঁফ ছাটা, নখ কাটা, বগলের পশম ফেলা এবং নাভির নিচের পশম কাটার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন যে, চল্লিশ দিনের অধিক যেন না রাখি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৯২; তিরমিজী, হাদিস: ২৭৫৯)
তবে জন্মদিনে কিংবা রাতের বেলায় চুল-নখ কাটা অশুভ- এমন কথা প্রায়ই শোনা যায়। যদিও এসব কথা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তাছাড়া ইসলামে অশুভ বলতে কিছু নেই। ইরশাদ হয়েছে, হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো কিছুতে অশুভ নেই। প্যাঁচার মধ্যে কু-লক্ষণ নেই এবং সফর মাসেও কোনো অশুভ নেই। তবে কুষ্ঠরোগী থেকে পলায়ন করো, যেমন তুমি বাঘ থেকে পালিয়ে থাকো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৩০২; মেশকাত, ৪৫৭৭
প্রখ্যাত আলেম-ওলামারাও এ বিষয়ে একমত। শায়খ আহমাদুল্লাহ, মিজানুর রহমান আজহারীর মতো জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তারাও এ বিষয়ে একাধিক বক্তব্য দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, চুল, নখ কাটার কোনো নির্দিষ্ট দিন নেই। যেকোনো দিন এগুলো কাটা যায়। এমনকি জুমার দিনেও পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে চুল-নখ কাটা যাবে। সুতরাং, জন্মদিন, শনিবার, মঙ্গলবার, অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমায় চুল কাটা যায় না- এগুলো ভিত্তিহীন কথা, কুসংস্কার।
তবে মনে রাখতে হবে, জিলহজ মাসে যে ব্যক্তি কুরবানি করতে চান তার জন্য ১০ দিন চুল-নখ কাটায় নিষেধ রয়েছে। উম্মু সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন (জিলহজ মাসের) প্রথম দশ দিন উপস্থিত হয়, আর তোমাদের কেউ কুরবানি করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন তার চুল ও নখের কিছু স্পর্শ (কর্তন) না করে। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ২৭৮২; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৯৫৫)