ঢাকাবুধবার , ৩০ অক্টোবর ২০২৪

বরিশাল নগরীর ভাটারখাল কলোনিতে হা*মলা-পাল্টা হা*মলায় দু’পক্ষের আহত, ১২

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
অক্টোবর ৩০, ২০২৪ ১০:৪২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরীরভাটারখাল কলোনিতে হামলা-পাল্টা হামলায় দু’পক্ষের আহত ১২।

নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ভাটার খাল কলোনী। প্রায় দুইশতাধিক ঘরে যাতায়াতের জন্য রয়েছে চুলের ফিতার মতো ১৫/২০টি সরুগলি। প্রতিটি গলিতেই নিজস্ব উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে বস্তির নেতারা। নেতাদের ঘরের সামনেও রয়েছে পৃথক সিসি ক্যামেরা। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। এখানেই সোমবার দুপুর ও বিকেলে ঘটেছে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এতে আহত হয়েছে দুপক্ষের ১২ জন। আটক হয়েছে বিএনপির সমর্থক ৬ জন।
আশেপাশের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই বস্তি এলাকার আধিপত্য যার হাতে থাকবে সেই হবে ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। লঞ্চঘাট, স্প্রীডবোট ঘাট এবং বস্তি এলাকার মাদকের নিয়ন্ত্রণ হবে তার।

জানা গেছে, দু’জন মহিলার চাপকল ব্যবহার নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকে ঘটনার সূত্রপাত। সুমি এবং শিল্পী নামে দুই নারীর ঝগড়াকে কেন্দ্রকে করে একদল দুর্বৃত্ত এসে হামলা চালিয়ে প্রথমেই সিসি ক্যামেরা ও বৈদ্যুতিক মিটার ভাংচুর করে। এরপর বাসাবাড়িতে ঢুকে টেলিভিশন-ফ্রিজ সহ দামী আসবাবপত্র ভাংচুর ও লুটপাট চালায় বলে একাধিক বস্তিবাসী অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় গত সোমবার সন্ধ্যায় ৬ জনকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এর আগে তুচ্ছ ঘটনায় বেলা তিনটার দিকে শিল্পী গ্রুপের কয়েকজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। পুলিশ শিল্পী গ্রুপের ৬ জনকে আটক করেছে।

সরেজমিনে ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে বরিশালের ডিসিঘাট সংলগ্ন ভাটার খাল বস্তিতে গিয়ে জানা যায়, বিএনপি নামধারী মাসুম, সোহেল, জসিম লোক ভাড়া করে এনে সুমি, রশ্নি সহ কয়েকজন প্রতিবেশীদের বাড়িতে এই হামলা ও লুটপাট করে। তারা প্রথমে ডিসিঘাট এলাকার ও বস্তির ভিতরে থাকা সিসি ক্যামেরা ও বিদ্যুৎএর মিটার ভাংচুর করে। তারপর বাসাবাড়িতে হামলা চালায় বলে জানান কয়েকজন মহিলা। এসময় তারা বলেন, সুমি ও শিল্পী চাপকল নিয়ে ঝগড়া করছিল। তখন তাদের মধ্যে হাতাহাতি ঘটে। এসময় শিল্পীসহ ৩ জন আাহত হয়। সুমি আহতদের নিয়ে চিকিৎসা দিতে গেলে সন্ধ্যার পর বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে এনে শিল্পীগ্রুপ বিএনপির মাসুম, সোহেল, জসিম, রুবেল সহ কয়েকজন ক্যাডার নিয়ে এই হামলা চালায়। একপর্যায়ে স্প্রীডবোট মালিক মোবারক হোসেন জিন্নি ও তার স্ত্রী রোশনির উপর হামলার চেষ্টা চালানো হয়। কুপিয়ে জখম করা হয় রোশনির ভাইয়ের স্ত্রী মুন্নি বেগমকে। তাদের চোখের সামনেই ঘরের ফ্রীজ টেলিভিশন সহ দামী আসবাবপত্র ভাংচুর করে ও লুটপাট চালায়। রোশনি বলেন, ১৫ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ ১০ লক্ষ টাকা ওরা নিয়ে গেছে। সিসি ক্যামেরায় ওদের আসতে দেখে দরজা আটকানোর চেষ্টা করে আমার ভাবী। তখন তাকেও আঘাত করে ওরা।

এতো টাকা ঘরে রাখার কারণ সম্পর্কে বলেন, আমার স্বামী ও ভাইয়েরা সবাই ব্যবসায়ী। তাই আমাদের নগদ টাকা রাখতে হয়। তাদের ৮টা স্প্রীডবোট রয়েছে।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং ৩ জনকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। বস্তির বাসীন্দা সুমি বলেন, কল পাড়ের ঝগড়া আসলে পূর্বপরিকল্পিত। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে স্প্রীডবোট ঘাটের দখল নিতেই তারা এই হামলা চালিয়েছে। ৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা বহুবার এই ঘাট দখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সব বোট ব্যক্তি মালিকানাধীন। তাদের (বিএনপি সমর্থকদের) বোট না থাকায় তা পারছে না। ফলে তারা প্রতিদিন ১ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করছে। ঘাটে ইয়াবা মাসুম ও তার ভাই চাঁদাবাজি করছে। তাদের চাঁদা না দেওয়ার কারণে তারা বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের সাথে ঝামেলা তৈরি করছে বলে জানালেন সুমি। বিএনপির লোকজন শিল্পীকে দিয়ে এসব করাচ্ছে। এসময় শিল্পীর খোঁজে তার ঘরের সামনে গিয়ে তালা ঝুলতে দেখা যায়।

স্প্রীডবোট ঘাট এলাকা ও বস্তি সংলগ্ন দোকানের ব্যবসায়ীরা বলেন, এখানে আসলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে এই মারামারির ঘটনা ঘটেছে। সুমি, রোশনি এরা সবাই আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন মহিলালীগের নেত্রী। সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র থাকাকালীন সময়ে এই বস্তিতে একটি চাপকল বসিয়েছিল। সেই চাপকলতো আওয়ামী লীগের চাপকল, এর পানিও আওয়ামী লীগের পানি এ জাতীয় কথাবার্তা থেকে গতদিন ঝগড়ার সূত্রপাত হয়েছে। এর আগেও বহুবার এখানে ঘাট ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মারামারি হয়েছে বলে জানালেন আশেপাশের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।
এই আমলেও বিএনপির লোকজন সমানে মার খাচ্ছে দাবী করে ১০ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহাবুদ্দিন তোতা বলেন, ডিসিঘাট এলাকার স্প্রীডবোট ঘাট দখল কিংবা মাদকের নিয়ন্ত্রণ এখনো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতেই রয়েছে। বিএনপির কেউ এখানে যায়নি। তিনি বলেন, বিএনপির সমর্থক আজম, রইয়া, মামুন, জসিম, জাহাঙ্গীর মাঝির ঘর ভাংচুর হয়েছে।

তানিয়ার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রেজাউল ইসলাম এবং শিল্পীর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুর রহমান। বরিশাল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল রাতে ভাটার খাল বস্তির তানিয়া বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে । সেই মামলায় ৬ জন আটক হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে শিল্পী পক্ষ একটি মামলা করেছে।

মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, দু’পক্ষই অভিযোগ করেছে। এটি আপাত দৃষ্টিতে একটি পারিবারিক ঘটনা মনে হলেও এর পিছনে আরো কিছু আছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখছি। তারপর কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবেনা এবং কারো কোনো সুপারিশও গ্রহণযোগ্য হবে।