ঢাকামঙ্গলবার , ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযুদ্ধের ২১তম প্রদর্শনী

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫ ৬:৩৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সদর রোডে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির নিজস্ব কার্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, চিত্র ও দলিলপত্রের ২১তম প্রদর্শনীতে এক দর্শনার্থী। মঙ্গলবার তোলা।City & Local Guides

মঙ্গলবার, সকালটা শুরু হয়েছিল নীরব শ্রদ্ধায়। ঘড়ির কাঁটা তখন ৯টার ওপর। বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্মৃতিফলকে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে বরিশাল রিপোটার্স ইউনিটির সদস্যরা। লাল সবুজের মাঝে মাথা নত করে তাঁরা যেন ফিরে দেখছিলেন ১৯৭১-এর রক্তাক্ত দিনগুলো।

এরপর পথ বদলাল ইতিহাস। সদর রোডে বরিশাল রিপোটার্স ইউনিটির নিজস্ব কার্যালয়ে শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, চিত্র ও দলিলপত্রের ২১তম প্রদর্শনী। মহান বিজয় দিবসে দিনব্যাপী এ আয়োজন যেন এক জীবন্ত আর্কাইভ।

প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান সরোয়ার তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুধু বইয়ের পাতায় নয়, এ দেশের মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে থাকুক। নতুন প্রজন্মকে সেই স্মৃতির কাছাকাছি আনতেই এমন আয়োজন জরুরি।

বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রদর্শনী কক্ষে ঢুকলেই চোখ আটকে যায়। সারি সারি বই তিন শতাধিক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ। পাশে তিন শতাধিক দুর্লভ ছবি। কোথাও অভিযানের মুহূর্ত, কোথাও প্রশিক্ষণের দৃশ্য, কোথাও শহীদের মুখ। তবে বাদ পড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থেকে শুরু করে ইতিহাসনির্ভর বই প্রদর্শনী।

পাশেই শত্রুপক্ষের নৌযান ডুবিয়ে দিতে ব্যবহৃত মাইনের খণ্ডাংশ। দর্শনার্থীদের ভিড় জমে যায় সেখানে। স্কুল পড়ুয়া‌দের কেউ কেউ থমকে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেন, সত্যিই কী এগুলো ব্যবহৃত হয়েছিল যুদ্ধে? উত্তর আসে নীরব ইতিহাসের ভেতর থেকে।

সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ প‌থের ডান দি‌কে এগোলে দেখা মেলে রেডিও, সাইক্লোস্টাইল মেশিন। বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে স্থাপিত দক্ষিণাঞ্চলীয় সচিবালয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন নির্দেশনার নথি। হাতে লেখা বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান আলাদা করে দৃষ্টি কাড়ে। পাতায় পাতায় কালি, শব্দে শব্দে স্বাধীনতার শপথ।

প্রদর্শনীতে রয়েছে চারটি বন্দুক, নৌ কমান্ডোদের ব্যবহৃত কস্টিউম, মুক্তিযুদ্ধের পর বরিশালে নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য ‘বিজয় বিহঙ্গ’ এর নকশা। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকালীন ব‌রিশাল থে‌কে প্রকা‌শিত পত্রিকা বিপ্লবী বাংলা‌দেশ ও শান্তি কমিটির একটি চিঠিও রাখা হয়েছে। ইতিহাসের দুই বিপরীত মুখ যেন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।

মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্থিরচিত্রের পা‌শে দাঁড়ায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। কেউ মোবাইলে ছবি তোলে, কেউ নীরবে দেখে। প্রশ্ন করে, শোনে, শেখে। বেশকিছু শিক্ষার্থীকে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়ে ছবি তুলতে দেখা যায়।

আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আনিচুর রহমান খান স্বপন, সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, বিজয় দিবস উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক সুশান্ত ঘোষ, সদস্যসচিব রবিউল ইসলামসহ সংগঠনের নেতারা।

দিন শেষে বোঝা যায়, এটি শুধু প্রদর্শনী নয়। এটি এক প্রজন্মের সঙ্গে আরেক প্রজন্মের সেতুবন্ধন। বরিশালের এই একদিনে মুক্তিযুদ্ধ যেন আবার হাঁটছিল সদর রোডের ভেতর দিয়ে। ইতিহাস বইয়ের পাতা ছেড়ে নেমে এসেছিল মানুষের চোখের সামনে।