নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালের নলছিটি কুমারখালীর মরা নদীর চিংড়ি চাষ প্রকল্পের বেড়িবাধ কেটে লুটপাট ও ইজরাদারের অফিসে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ৩৯ বছর ধারবাহিকভাবে ইজারা নিয়ে প্রকল্পটি পরিচালনা করে আসা ইজারাদারের এ ঘটনায় ৫ কেটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন। প্রকাশ্য দিবালোকে শতাধিক লোক নিয়ে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এমন ঘটনা ঘটালেও এ বিষয়ে আইনানুগ সহায়তা পাচ্ছেন না বলে জানান ইজারাদার নূরুল ইসলাম (আসিফ) চৌধুরী। প্রতিকার চেয়ে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। লিখিত অভিযোগে ইজারাদার নূরুল ইসলাম (আসিফ) চৌধুরী জানান, ১৯৮৬ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে নলছিটি কুমারখালীর মরা নদীতে চিংড়ি চাষ প্রকল্পে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা নিয়ে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছেন তারা। এই প্রকল্প থেকে গত বছরের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় কোটি টাকা ইজারার পরিশোধ করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পটিতে দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ করা রয়েছে। প্রকল্পে ৬০ লক্ষ টাকা মাছের পোনা চাষ এবং নিয়মিত মাছের খাবার দেয়া হচ্ছিল। মূলত ১৯৯১-১৯৯২ সনে চিংড়িমহলটি বেড়িবাধ নির্মাণের জন্য সরকার ১০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেন এবং এর সাথে ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৪০১ টাকা অতিরিক্ত খরচ করে বেড়িবাধ নির্মাণ করণে সহায়তা করে।
সেই হিসাবে তৎকালীন জেলা প্রশাসক উক্ত জলমহলটিকে বদ্ধ জলমহল হিসাবে ঘোষণা করেন। যার পরিপেক্ষিতে আমরা নিয়মিত ভাবে চিংড়িসহ অন্যান্য সকল ধরণের মাছ চাষাবাদ শুরু করি এবং প্রকল্প থেকে দক্ষিণ অঞ্চলের বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠির মাছের চাহিদা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। এছাড়া সরকারের প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। এর আগে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী জুয়েল জমাদ্দার, মাসুদ, রশিদ, জাকির হাওলাদার, জামাল, সোহেল মুন্সীর নেতৃত্বে বেড়িবাধ কাটা সহ অগ্নীসংযোগ করে প্রকল্পের অফিস ঘর ও মাছের খাদ্যের গোডাউন পুড়িয়ে ফেলা সহ লুট-পাট করা হয়। এর পরে জেলা প্রশাসককে জানিয়ে পুনরায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করে বেড়িবাধটি সংস্কার করেন। তারপর চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্দ হয়ে আবার বেড়িবাধটি কাটতে আসে। পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় তখন বেড়িবাধটি কাটার থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হই। ঐ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলেও তিনি কোন রকম পদক্ষেপ নেননি। উল্টো সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ ও লুট-পাটের মামলা তুলে নিতে বলেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসককে আবারও গত বছরের আগস্টের ১১ তারিখ অবহিত করি। অতঃপর অরিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ৪ সদস্য বিশিষ্ট টিম করে জমি পরিমাপের ব্যবস্থা করেন।
এবছরের ৬ জানুয়ারি উপজেলা ভূমি অফিস, সার্ভেয়ার উপজেলা ভূমি অফিস নলছিটি, সার্ভেয়ার ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ঝালকাঠি, ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্তকর্তা পৌর ভূমি অফিস নলছিটি ঝালকাঠির সমন্বয়ে একটি প্রতিবেদন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদনে সন্ত্রাসীদের কোন জমির অস্তিত্ব মেলেনি লীজ নেওয়া জমিতে, যে দাবিতে তারা বারবার হামলা করছে। তারপরে আমরা আবার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করি। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি সকাল ১০ টায় পূনরায় আগের সন্ত্রাসীরা শতাধিক লোক নিয়ে এসে মূল বেড়িবাধটি জোর পূর্বক কেটে দেয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে এ বিষয়ে তিনি কোন আইনগত পদক্ষেপ নেয়নি। তারপরে আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করলে জেলা প্রশাসক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)- কর্মকর্তাকে পাঠান এবং পুলিশও তাকে অবহিত করেন। তিনি ঘটনাস্থলে এসে কোন প্রকার সহযোগিতা করেননি।
উল্টো বেড়িবাধটি কাটার পক্ষে সায় দেয়। পুলিশ সেখানে নিরুপায় হয়ে চলে আসেন। যার ফলে আমাদের প্রকল্পের অফিস ঘর ভেঙ্গে নগদ টাকাসহ আরো কিছু মূল্যবান আসবাবপত্র ও মাছের খাবার লুট-পাট করে নিয়ে যায় এবং অফিস ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এতে সর্বমোট ৫ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হই। ঘটনার পর আমরা জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করি। জেলা প্রশাসক আমাদের পূনরায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠায়। কিন্তু তিনি আমাদের সহযোগিতা না করে সাশিয়ে দেন এবং বলেন যে আমি এই ব্যাপারে কোন সহযোগীতা করতে পারবেন না। আমরা থানায় মামলা দিতে গেলে উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তার নির্দেশ ছাড়া মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অতপর আমরা অনুরোধ করে একটি অভিযোগ দাখিল করে আসি। এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে আবেদন জানান ইজারাদার নূরুল ইসলাম (আসিফ) চৌধুরী।