ঢাকামঙ্গলবার , ১১ মার্চ ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে পানিবাহিত চর্ম রো.গের ভ.য়াবহ প্রাদুর্ভাব :: শতকরা ৬১ ভাগ আ.ক্রা.ন্ত

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
মার্চ ১১, ২০২৫ ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে পানিবাহিত চর্ম রো.গের ভ.য়াবহ প্রাদুর্ভাব :: শতকরা ৬১ ভাগ আ.ক্রা.ন্ত।

নগরীতে পানিবাহিত চর্মরোগ ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এই রোগ বস্তি এলাকাগুলোতে ছড়িয়েছে ঘরে ঘরে। ক্রমেই তা নগরীর অন্য আবাসিক এলাকাগুলোতেও ছড়াচ্ছে। নিচু এলাকাগুলোতে বিভিন্ন সময় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় পানির দূষণে এ রোগ ছড়াচ্ছে বলে দাবি করছে বিসিসি কর্তৃপক্ষ। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০% হলো শিশু, নারী ও বৃদ্ধ। চর্ম বিশেষজ্ঞরা আসন্ন গরমে পরিস্থিতির আরো অবনতির শংকা করছেন। বরিশাল নগরীর ৫ নং পলাশপুর বস্তির জনসংখ্যা ৬ হাজার ১৪৯ জন। গত একমাসে এখানে ৩ হাজার ৭৮৮ জন ফাংগাস জাতীয় চুলকানী রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এখানকার সবাই স্বল্প মজা খালের পানিতে গোসল, কাপড় ও বাসন ধোয়ার কাজ করে থাকেন। এলাকাটি নিচু হওয়ায় বর্ষা ও জোয়ারে বারবার জলাবদ্ধতার শিকার হয়। আক্রান্তরা দিয়েছেন তাদের বর্তমান অস্থির জীবন যাপনের বর্ননা। বলেছেন কোন অষুধে কাজ হচ্ছে না। তারা জানান, এতোদিন এ রোগ আমাদের এখানে ছিলো না। অল্প দিন হয় এ রোগ ছড়িয়েছে। প্রথমে দানা হয়, পরে চুলকাতে গিয়ে লাল হয়ে এর থেকে পানি বের হয়। তারপর এটি সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়। অনেক ওষুধ খেয়েছি কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। রোগাক্রান্তদের সারা শরীরে নিম পাতা, বরইপাতা ও কাচা হলুদ মাখিয়ে রাখছি। খালের পানি দূষিত বলে এটা হচ্ছে।
অপর একজন বলেন, বিকেল থেকে সারারাত সারা শরীর চুলকায়, ঘুমাতে পারি না। ওষুধে কাজ হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আজ কাচা হলুদ ও নিমপাতা মেখে দিয়েছি। আমাদের এলাকার সবার অবস্থাই এরকম।
অন্যজন বলেন, চুলকালে ভীষন জ্বলে, রক্ত বের হয়ে যায়। এরপর সারা শরীরে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ব্যাথা। ক্লাসভরে নিমপাতার রস খেয়েছি তাতেও কাজ হয়নি।

 

শরীরের চুলকানি সহ্য করতে না পেরে রাতে ঘুম থেকে উঠে গরম পানিতে নুন দিয়ে তা শরীরে ঢালি। যেখানে মলম লাগাই তার পাশ থেকে খুজলি ওঠে।
একই অবস্থা নগরীর স্টেডিয়াম কলোনী, নামার চর, ভাটার খাল, শিশু পার্ক ও বিডিএস বস্তির। নগরীর অন্য ১৮টি বস্তির সবগুলোতেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এসব বস্তির শতকরা ৮০ ভাগ শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
শেবাচিম হাসপাতালের চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: রেজওয়ান কায়সার বলেন, আগেও আমাদের কাছে এমন রোগী আসতো কিন্তু তার সংখ্যা ছিলো কম। তবে গত কয়েকমাস থেকে অনেক বেশি চর্ম রোগী আসছে। আমরা ভয় পাচ্ছি যে আসছে গরমে এ রোগীর সংখ্যা আরো বেশি বাড়বে। তখন এদের কিভাবে ম্যানেজ করা হবে এটাও চিন্তার বিষয়। শুধু ওষুধ নয় এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে কিছু নিয়ম মানতে হয়। বেশিরভাগ রোগী তা মানে না। বেশিরভাগ রোগী ওষুধ খাবার পর আরাম বোধ করলে ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছে। শুধু রোগী হয় এর সাথে যারা সংশ্লিষ্ট আছেন তাদেরও আরো সতর্ক হতে হবে।
বরিশাল সিটি এলাকার বস্তির সীমানা পেরিয়ে এই রোগ ক্রমেই অন্য আবাসিক এলাকাগুলোতেও সংক্রামিত হচ্ছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এখনো কোন দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তারা এটিকে পানি ও ড্রেনেজ সমস্যায় সৃষ্ট বলে দাবী করছে।

বিসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খন্দকার মঞ্জুরুল ইমাম বলেন, এইসব এলাকায় এ রোগ ছড়ানোর অন্যতম কারন পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং দূষিত পানি প্রবাহ। আমরা এ সমস্যা সমাধানে পানি পরীক্ষাসহ অন্য কাজ শুরু করছি। বেশিরভাগ বস্তিতে স্বাদু পানি এবং ড্রেনেজ সমস্যা রয়েছে। এসব স্থানে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের যাতে ব্যবস্থা হয় আমরা সে চেষ্টা করছি। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের চেষ্টাও আমরা করছি। আক্রান্তরা যাতে স্বাস্থ্যগত সুবিধা পায় তার জন্য আমরা বিভিন্ন এনজিও’র সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, অন্য সব বছরের চেয়ে এবছর ইস্কাবেজ আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। জনবহুল এলাকায় এ রোগ বেশি ছড়াচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় আমরা এ রোগে আক্রান্তদের সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে এক্ষেত্রে রোগীদের চিকিৎসকের দেওয়া সব উপদেশ মেনে চলতে হবে। রাখতে হবে পরিচ্ছন্নতা বজায়।