নিজস্ব প্রতিবেদক :: মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের অভিষেকের দিনেই উত্তপ্ত বরিশাল নগরী! সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রুপ
বরিশাল সিটি কপোরেশনের (বিসিসি) পঞ্চম পরিষদের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের অভিষেকের দিনেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রুপ। একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। অভিষেক অনুষ্ঠান চলাকালে পেছন থেকে বেশ কয়েক ধাপে কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে তারা চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাঙচুর করেন। অবশ্য ওই কর্মীদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ওই ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়- অভিষেক অনুষ্ঠান চলাকালে পেছন থেকে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী হট্টগোল করে হাতে চেয়ার নিয়ে দৌড়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ চেয়ার ছুড়ে মারছেন। এ সময় অপরদিক থেকে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী এগিয়ে এসে তাদের বেরিকেট দিয়ে সামনে যেতে বাধা দিলে পিছু হটতে বাধ্য হয়। তখন সকলে ছত্রভঙ্গ হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছুটতে শুরু করে।
অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়- নগরীর কাকলীর মোড় এলাকায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ৫/৬ জনকে ধরে মারধর শুরু করেন। এ সময় তারা দৌড়ে পালাতে গেলে ধাওয়া করে রাস্তায় ফেলে মারধর করেন।
অন্য একটি ভিডিওতে দেখা গেছে- অভিষেক অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে এক যুবককে রাস্তায় ফেলে ২০/২৫ জনের একটি দল বেধম কিল-ঘুষি দিচ্ছে। তখন আশপাশ থেকে কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতাকর্মী এসে তাকে ছাড়িয়ে দেন আর বলতে থাকেন ‘ওকে আর মারিস না, ও মরে যাবে। তোরা কি ওকে মেরে ফেলবি’। পরে সেই যুবক ছাড়া পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
আয়োজকদের তথ্যে জানা গেছে, ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে ওই ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে অভিষেক অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেড়ার পথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে দুটি গ্রুপ। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) কথিত শ্রমিক নেতা সুমন মোল্লার ভাই মিলন মোল্লা দলবল নিয়ে ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদের স্বজন এক যুবককে এলোপাতারি কুপিয়েছে। নয়া মেয়রের দায়িত্বগ্রহণের প্রথমদিনেই সংঘটিত এ সকল ঘটনা পুরো শহর জুড়ে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, মোল্লাবাহিনীর হামলায় রক্তাক্ত ওই যুবকের নাম পিয়াল। তিনি কাউন্সিলর সুলতানের সমন্ধির ছেলে এবং তারা উভয়ে বরিশাল সদর আসনের এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী।
কাউন্সিলর সুলতান জানান, নতুন মেয়র এবং তিনিসহ পরিষদের সদস্যরা ১৪ নভেম্বর বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে দায়িত্বগ্রহণ করেছেন। এই আয়োজনকে ঘিরে যে যার মতো লোকবল নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সম্মুখে যায়। সেখানে তার লোকজনও যেমন গিয়েছে, তেমনি সুমন মোল্লাও তার বাহিনী নিয়ে গেছে। আয়োজন শেষ করে রুপাতলী ফিরে আসার পর সুমন মোল্লার ভাই মিলন মোল্লা ১০ থেকে ১৫ জনের একটি দল নিয়ে পিয়ালকে তার বাসার সামনে মোল্লা মার্কেটে কোপায়। তখন আত্মরক্ষার্থে পিয়াল দৌঁড়ে গিয়ে রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডের পাশে হুমাহুম রেস্তোরাঁর সম্মুখে অবস্থান করলে সেখানে গিয়েও মিলন মোল্লা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে। রক্তাক্ত অবস্থায় পিয়ালকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
নতুন মেয়রের অভিষেকের প্রথমদিনেই কি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে দু’গ্রুপে এমন রক্তারক্তির ঘটনা তৈরি করল, তা কাউন্সিলর সুলতান খোলসা করেননি। শুধু তিনি বলছেন, সুমন মোল্লা একজন সন্ত্রাসী এবং তিনি নিজেকে নতুন মেয়রের অনুসারী দাবি করে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সিটির পঞ্চম পরিষদের কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ দায়িত্বগ্রহণের পরপরই তার স্বজনসহ অনুগতরা মাহিন্দ্রা স্ট্যান্ড দখল নিতে যায়। তখন তাদের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে মেয়র সমর্থিত সুমন মোল্লার ভাই মিলন মোল্লাসহ ১০ থেকে ১৫ জন। এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সুমনের ভাই মিলন নিজেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাউন্সিলর সুলতানের স্বজন পিয়ালকে আঘাত করে। একপর্যায়ে পিয়াল দৌড়ে পালিয়ে যেতে চাইলে অস্ত্রধারীরা তাকে ধাওয়া করে রুপাতলী হুমাহুম রেস্তোরাঁর অভিমুখে নিয়ে যায়। এবং সেখানে মাটিতে ফেলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে।
এই তথ্য স্বীকার করে সুমন মোল্লা বলছেন, মেয়রের অভিষেক আয়োজনে কাউন্সিলর সুলতানের লোকজনের অপেক্ষা তার কর্মীবাহিনী বেশি অংশ নেন, যা দেখে তিনি সংক্ষুব্ধ হন। এবং আয়োজন শেষে তিনি মাহিন্দ্রা স্ট্যান্ডটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সন্ত্রাসীদের পাঠিয়ে দেন। তখন তাদের সাথে শ্রমিকদের সংঘাত হয় এবং এতে তার পক্ষের অন্তত ১০ জনের বেশি রক্তাক্ত হয়েছেন। এছাড়া খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে তাকেও পেটানো হয় বলে দাবি সুমন মোল্লার।
কোতয়ালি থানা পুলিশের এসআই আরাফাত রহমান হাসান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গেছে। কিন্তু এর আগেই উভয়গ্রুপের সদস্যরা সটকে পড়েছে, ফলে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে এই ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।