
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল বিভাগের একমাত্র ২০০ বেডের শিশু হাসপাতাল ভবনের নির্মানকাজের মেয়াদ শেষ হবার ৬ বছর পরেও চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ হাসপাতালের জন্য কোন জনবল বরাদ্দ হয়নি, বরাদ্দ নেই এর ট্রান্সফরমানসহ সাব স্টেশন নির্মানের। এ অবস্থায় বন্ধ রয়েছে ভবন হস্তান্তরের কাজ। কর্তৃপক্ষ বলছে বরাদ্দ পাওয়া গেলে সবই হবে।
বরিশাল বিভাগের একমাত্র শিশু হাসপাতালটির ভবন নির্মানের কাজ শেষ হয়েছে এক বছ আগে। এ হাসপাতালটি চালু হলে তা বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাথে যুক্ত হয়ে পরিচালনার কথা রয়েছে। শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে ২০০ শয্যার এই শিশু হাসপাতালটি পরিচালনায় অন্তত সাড়ে তিন শ জনবল দরকার। অথচ একজন জনবলেরও বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এছাড়া প্রয়োজন পৃথক সাব স্টেশন যা এখনো দেয়া হয়নি । তাদের মতে পরিপূর্ণতা ছাড়া একটি পৃথক হাসপাতাল পরিচালনা মাআত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, আমি নিজেও দেখে এসেছি হাসপাতালটি সুন্দর হয়েছে। তবে এটা বরিশাল মেডিকেল থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে। সরকারি সিদ্ধান্ত হলো এ হাসপাতাল পরিচালনা করবে মেডিকেল কলেজ এবং এখানকার শিশু ওয়ার্ডগুলো ওখানে শিফট করতে হবে। কিন্তু এমন ধরনের ২০০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনায় কমপক্ষে সাড়ে তিন শ’ পৃথক জনবল দরকার, যার কোন বরাদ্দ এখনো মেলেনি। হাসপাতালটিতে পৃথক সাব স্টেশন পর্যন্ত নেই যেটি ছাড়া আমি কিছুই করতে পারবো না। এ হাসপাতাল চালুর জন্য প্রধান সমস্যাই হলো জনবল না থাকা।
৩৬ শয্যার বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন একটি বেডের বিপরীতে বর্তমানে অন্তত ৫৭ শিশু চিকিৎসা নিতে আসে। প্রতি বছর এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, আন্ত:বিভাগ ও বহিঃবিভাগে প্রায় ৮ লাখ শিশু চিকিৎসা নেয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এসব শিশুদের জন্য এখন পৃথক হাসপাতাল দ্রুত চালুর কোন বিকল্প নেই। এখানকার জনবল ও স্বল্পস্থানে শিশুরা এক রোগ নিয়ে ভর্তি হয়ে অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছে। নতুন শিশু হাসপাতাল চালু হলে শিশু সেবার মান অনেক উন্নত হতো। একই হাসপাতালের সহকারি পরিচালক রেজওয়ানুর আলম বলেন, শের ই বাংলা মেডিকেল কলজ হাসপাতালে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গ্যাদারিং এর জায়গা হলো শিশু বিভাগ। যেখানে শুধু জরুরি বিভাগেই প্রতিদিন ৬ থেকে ৭শ শিশু এসে থাকে চিকিৎসার জন্য। এ ছাড়া আন্ত: ও বহিঃ বিভাগে আসে আরো দু হাজার শিশু। এতো শিশু সামাল দেয়া প্রায় অসম্ভব। এটা যারা সেবা দেয় এবং নিতে আসে উভয়ের জন্য কষ্টকর। প্রায়শই শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। নতুন শিশু হাসপাতালটি চালু হলে সব সংকটেরই সমাধান হবে। তখন শিশুদের বিশেষায়িত চিকিৎসা দেয়া যাবে ।
বরিশাল বিভাগের শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য এই ২০০ শয্যার একটি শিশু হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকায় ২ একর জমির উপর পুকুর ভরে একটি অত্যাধুনিক চারতলা ভবন, বিদ্যুতের সাব স্টেশন, অপারেশন থিয়েটারসহ হাসপাতালের ভবন নির্মানের কার্যাদেরশ দেয়া হয় ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি। প্রায় ২৪ কোটি টাকার এ ভবন নির্মানে গণপূর্ত বিভাগ কাজ সমাপ্তির তারিক নির্ধারন করে দেয় ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি । নকশা পেতে বিলম্ব, বার বার নকশা বদল ও পুকুর ভরাটে বিড়ম্বনা কাটিয়ে নির্ধারিত সময়ের ৫ বছর পর ভবন নির্মানের সব কাজ শেষ হলেও ভবন হস্তান্তর করতে পারছেন না ঠিকাদার। বর্তমান অবস্থায় হাসপাতাল পড়ে রয়েছে অবক্ষিত। হাসপাতালটি চালুর আগেই চুরি হচ্ছে এর মূল্যবান মালামাল। ঠিকাদারদের দাবী- ভবন নির্মানের আগে বার বার তাগাদা দেয়া হয়েছে দ্রুত নির্মানকাজ শেষ করার জন্য। আমরা এক বছর আগে আমাদের ভবন নির্মান কাজ শেষ করে ফেলেছি। এখন প্রতিরাতে মূল্যবান মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গণপূর্ত হস্তান্তর নিচ্ছে না।
বরিশাল গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমরা এখনো ভবনটি বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে হস্তান্তর করতে পারিনি। কিন্তু সাব স্টেশন, জেনারেটর ছাড়া নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেলে আমরা সব কিছু স্থাপন করে দিতে পারবো। ইতিমধ্যেই আমরা পুরো বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।
শিশু সংগঠক শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, বরিশালে একটি শিশু হাসপাতাল চালু ছিলো আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। এটি নির্মিত হলেও হস্তান্তর হচ্ছে না। আমরা মনে করি এর পেছনে একটি মহলের খারাপ কোন উদ্দেশ্য রয়েছে। আমরা অবিলম্বে এ হাসপাতাল চালুর প্রত্যাশা করি। আগামি তিনমাসের মধ্যে এ হাসপাতাল চালু না হলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।