ঢাকারবিবার , ৪ মে ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

৫ আগস্টের স্কুল-কলেজের ৫৫ শিক্ষক প*লা*ত*ক : তুলছেন বেতন

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
মে ৪, ২০২৫ ১:৫৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: জুলাই বিপ্লবের সফলতার পর বরিশালের ১০ কলেজ ও ১৩ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫৫ জন শিক্ষক সাড়ে ৮ মাস ধরে বিনা নোটিশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত রয়েছেন। এদের মধ্যে ১০ কলেজের ৩৭ জন এবং ১৩ স্কুলের ১৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। বিগত সরকারের সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাপটের সাথে রাজনীতির প্রভাব বিস্তার করায় জনরোষের ভয়ে এরা আর আসছেন না বলে দাবি  সংশ্লিষ্টদের।

 

বরিশালের মেঘনা পাড়ের দুর্গম এলাকার শেখ হাসিনা সরকারি কলেজের ২২ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৯ জনই ৫ আগস্টের পর অনুপস্থিত রয়েছেন। এরা সবাই প্রাক্তন এমপি পংকজ দেবনাথের অনুসারি ছিলেন। ক্যাম্পাসে গিয়ে পাওয়া যায় জেলেরা জাল বুনছে। কোন শিক্ষক বা শিক্ষার্থী নেই। পরে স্থানীয় একটি স্কুলে অস্থায়ি ক্যাম্পাসে পাওয়া যায় অধ্যক্ষকে। অধ্যক্ষ বলেছেন বর্তমান অবস্থায় তিনি নিজেও বিব্রত। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ফুসে রয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও অভিভাবকরাও।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডক্টর আব্দুস কুদ্দুস বলেন, আমি নিজেও দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখেছি ক্লাশে জেলে আর জাল, কোন শিক্ষার্থি নেই। আমি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। এটা নিয়ে আমি কাজ করবো। শিক্ষক অনুপস্থিত প্রসঙ্গে বলতে হয় যে প্রতিষ্ঠানে আপনি চাকরি করবেন সেখানে লাগাতার অনুপস্থিতি কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। ৫ আগস্টের পরে আট মাস হলো, অথচ প্রতিষ্ঠান এভাবে চলছে, এগুলো সরকারকে জানাতে হবে। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমি এগুলো নিয়ে কথা বলবো। অবশ্য একেবারে সব শিক্ষক অনুপস্থিত নয়, গড়ে একটা সংখক অনুপস্থিত।
গ্রামবাসির একজন বলেন, আমরা এখানে কোন ক্লাশ দেখিনা, শিক্ষকরা পালিয়েছে তাওতো দেখিনা। আমরা শুনেছি অন্য এক স্থানে যেনতেনভাবে ক্লাশ করে।
অন্যজন বলেন,  শিক্ষকরা পালিয়েছে শুনেছি। হয়তো তারা কোনভাবে দোষি ছিলো, তা না হলে পালাবে কেন। এখানে তো কোন শিক্ষক দেখিনা। তৎকালীন এমপির ক্ষমতায় এরা কাজ করেছে।
এদের মতে ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটা কলেজ। এটা শিক্ষকদের পিকনিক স্পট ছিলো, ছাত্র-ছাত্রীদের তো এরা পড়ায়ই না। ওরা ছিলো লুটপাটে ব্যস্ত। এমন চললে শিক্ষার্থিদের পড়ালেখা আর হবে না। এদেরকে বাদ দিয়ে আমরা নতুন নিয়োগ চাই।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তর থেকে বলা হয়েছে অনুপস্থিত ৩৭ কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে বরিশালের ৩ কলেজের ২২ জন,  ভোলার ৪ কলেজের  ৬ জন, পটুয়াখালীর ২ কলেজের ৮ জন,  এবং পিরোজপুরের একটি কলেজের একজন শিক্ষক দীর্ঘদিন অনুপস্থিত। এদের অধিকাংশই বেতন ভাতা নিয়মিত তুলছেন। তদন্ত করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া পটুয়াখালীর ৮টি স্কুলের ৮ জন, ভোলার একট স্কুলের তিনজন, বরগুনার একটি স্কুলের ২ জন এবং বরিশালের ৫টি স্কুলের ৫ জনসহ মোট ১৮ জন শিক্ষক অনুপস্থিত রয়েছেন। রাজনীতির কারনে এরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তি পরিস্থিতিতে বরিশাল অঞ্চলের ১০টি কলেজের ৩৭ শিক্ষক অনুপস্থিত রয়েছে রাজনৈতিক কারনে। বার বার বলার পরেও তারা প্রতিষ্ঠানে আসছেন না। কিছু নীতিমালার সুযোগে তারা বেতনভাতা গ্রহণ করছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নির্দেশ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত ১৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু তদন্তকারি নির্দিষ্ট করে না দেয়ায় কোন তদন্ত হয়নি। তদন্ত হলেই ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, বরিশাল অঞ্চলের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গির হোসাইন বলেন, কিছু শিক্ষক যারা অতীতে এমন কিছু কর্মকান্ড করেছে যার ফলে ওরা নিজেরাই নৈতিক মনোবল হারিয়েছে। এ কারণে ৫ আগস্ট থেকে এরা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত আছে। এটা দুঃখজনক। এরা এদের কৃতকর্মের জন্য রোষ বা ক্ষোভের শিকার হতে পারে। দেশের প্রচলিত আইনেই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।
এ ব্যাপারে বাকশিস এর বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, বেসরকারি শিক্ষকরা যে কত নির্যাতিত তা কেবল তারাই জানেন। গভর্নিং ও ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের চক্ষুশুল হতে হয় শিক্ষকদের। যিনি এই কমিটিগুলোতে আসতে পারবেন না তিনিই যন্ত্রনা শুরু করেন। ৫ আগস্টের পর বরিশালে এ যন্ত্রনা ভয়াবহ হয়েছে। তবে শিক্ষকদের অনেক নৈতিক ত্রুটি রয়েছে। আমরা এ নিয়ে অনেক কথা বলেছি প্রশাসনের সাথে। মব জাস্টিসের নামে অবৈধভাবে শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে আসতে দেয়া হচ্ছে না, রীতিমতো চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। এজন্যই শিক্ষকরা পালিয়েছেন।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষকরা অনুপস্থিত থেকে বেতন তুলছে এটা অনিয়ম। সরকারি বেতন নিয়ে রাজনৈতিক কারনে পলাতক রয়েছে। বিগত দিনে এরা এমন রাজনীতি করেছে যে এখন ভয়ে তারা ঐ এলাকায় আসতে পারছে না। বঞ্ছিত হচ্ছে শিক্ষার্থিরা। এদের অনুপস্থিতি আমাদের রেজাল্টের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। বাসায় বসে শিক্ষার্থিরা সব পড়া পড়তে পারে না। আসন্ন পরীক্ষায় ওরা কি পরীক্ষা দেবে ? এবার বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের রেজাল্ট আগের চেয়ে খারাপ হবে। যদি এমন হয় তবে অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যা দরকার তা করা হবে। আমরা একটি কমিটি গঠন করে তদন্ত রিপোর্ট উর্ধ্বতনদের কাছে পাঠাবো।