ঢাকারবিবার , ১ জুন ২০২৫

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ১১ টি বাস

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জুন ১, ২০২৫ ১:০৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ১১ টি বাস।

 

প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও কাঙ্খিত পরিবহন সেবা পাচ্ছে না বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শিক্ষার্থীরা। নিজস্ব পর্যাপ্ত বাস না থাকায় ভাড়া করা বাস দিয়ে পরিবহন সেবা চালালেও রয়ে গেছে সংকট। প্রতিদিন শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের যাতায়াত হয়ে উঠেছে ভীষণ দুর্বিষহ। বাসে জায়গা না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরজায় ঝুলে বা গাদাগাদি করে ক্যাম্পাসে পৌঁছাচ্ছেন অনেকেই। পরিবহন সেবা নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন ধরে নতুন বাস সংযোজন, ফিটনেসবিহীন বাস বাদ দিয়ে আধুনিক বাস চালু এবং পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৫টি বিভাগে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত আছেন। তবে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য পরিবহন সেবার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এছাড়া পরিবহন সেবায় সংকট, ফিটনেসবিহীন গাড়ি,অদক্ষ চালক ও চালক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগও রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২২ সালের মধ্যে মোট ৩৫টি গাড়ি কেনার কথা ছিল উন্নয়ন পরিকল্পনায়। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, জিপ ও ছোট-বড় বাস মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে সর্বমোট গাড়ি রয়েছে ৩২টি । এগুলো প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনা নেওয়া করে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব গাড়ি রয়েছে ২২টি আর বাকি দুইতলা ও একতলা বিশিষ্ট ভাড়ায়চালিত বিআরটিসি বাস রয়েছে ১০ টি। শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য নির্ধারিত বাস রয়েছে মাত্র ১১টি। বাকিগুলো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবহনের জন্য।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ২২ টি গাড়ির মধ্যে একটি বাস অকেজো পড়ে আছে। শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকা বাসের মধ্যে দুটি বাস কখনো কখনো শিক্ষক কর্মকর্তাদের পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এদিকে ভাড়ায় চালিত বিআরটিসি বাসগুলো অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন। এই ১০টি বাস ভাড়ায়চালিত। এগুলোর জন্য গুনতে হয় বড় অঙ্কের টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ২২ টি গাড়ি থাকলেও ড্রাইভার রয়েছে মাত্র ১১ জন। ফলে পর্যাপ্ত চালক না থাকায় হেল্পারদের দিয়ে চালানো হয় গাড়িগুলো। অদক্ষ হেল্পারদের দিয়ে গাড়িগুলো চালানোর ফলে অনেক সময় নানা ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িগুলো মাত্র ৩টি রুটে চলে। রুটগুলো হলো : বিশ্ববিদ্যালয়-নথুল্লাবাদ রুট, বিশ্ববিদ্যালয়-নতুনবাজার রুট, বিশ্ববিদ্যালয়-বরিশাল ক্লাব রুট। শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকা ১১টি বাসের মধ্যে নতুন বাজার ও বরিশাল ক্লাব রুটে ৪টি এবং ৭টি বাস চলাচল করে নথুল্লাবাদ রুটে। নথুল্লাবাদ রুটে চলাচলকারী বাসগুলো বিআরটিসি থেকে ভাড়া নেওয়া হলেও বেশিরভাগই ফিটনেসবিহীন এবং যাতায়াতের জন্য অনুপযুক্ত।
বাংলাবাজার রুটে সকাল ও বিকেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবহনের জন্য শিক্ষার্থীদের ৪টি বাসের মধ্য থেকে ২টি ব্যবহার করা হয়। ফলে নতুন বাজার রুটে শিক্ষার্থীদের জন্য সকাল ও বিকেলে মাত্র ২টি বাস চালানো হয়। অথচ এই রুটে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার। বিপরীতে বাসে আসন সংখ্যা মাত্র ৭০টি। শুধু আসন সংকটই নয়, পুরনো বাসগুলোতে প্রায়ই দেখা দেয় যান্ত্রিক ত্রুটি। কখনো চালক থাকে না, কখনো বাস নষ্ট থাকে। নতুন বাজার রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ডালিয়া হালদার বলেন, সন্ধ্যা বাসটি ১০ দিন নষ্ট ছিল। আমরা মাত্র একটি বাসে করে যাতায়াত করেছি। অথচ আমরা পরিবহন ফি দিলেও সঠিক সেবা পাচ্ছি না।

নথুল্লাবাদ রুটে চলাচলকারী শিক্ষার্থী অনিমেষ সমাদ্দার বলেন, এই রুটে চলা বিআরটিসি বাসগুলো ধীরগতির, নোংরা এবং ভেতরে বসার পরিবেশ নেই। বৃষ্টির সময় ছাদ থেকে পানি পড়ে। আমরা গাদাগাদি করে যাতায়াত করি, কিন্তু তারপরও ভিজে যেতে হয়।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, এমনিতেই বাসের সংখ্যা কম, তার উপরে বাস নষ্ট হলেও ঠিক করা হয় না। জানালার কাঁচ ভেঙে গেলেও তা মেরামত হয় না। অভিযোগ করলে বলা হয় বাজেট নেই। অথচ আমরা প্রতিবছর পরিবহন ফি দেই , তবুও মিলছে না সেবা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল ম্যানেজার উজ্জ্বল হোসেন বলেন, লোকবল সংকট, বাজেট ঘাটতি এবং অদক্ষ জনবলই পরিবহন সংকটের মূল কারণ। আমাদের ড্রাইভার আছে ১১ জন, অথচ গাড়ি ২২টি। হেলপারদের দিয়েই চালকের কাজ করানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিবহন পুলের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ হোসেন বলেন, জনবল ও বাজেট সংকট আমাদের প্রধান সমস্যা। সন্ধ্যার বাসটি গত ৫ মাসে ৩ বার নষ্ট হয়েছে। শেষবার যান্ত্রিক যন্ত্রাংশ বাইরে থেকে আনতে হয়েছে বলে সময় লেগেছে।
উপাচার্য ড. মো: তৌফিক আলম বলেন, “বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, যেসব বাসে সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর সমাধান ঈদের ছুটির মধ্যেই করে ফেলা হবে। এছাড়াও, একটি বাস পরিবর্তন করে উন্নত মানের একটি বাস সরবরাহ করা হবে।