ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৯ জুন ২০২৫

বরিশাল মেডিকেলের কয়েক কোটি টাকা মূ*ল্যে*র করোনার সর*ঞ্জা*ম অকে*জো হয়ে পড়ে আছে

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জুন ১৯, ২০২৫ ২:১২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: অযত্ন আর অবহেলায় বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা থেকে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম অকেজো হয়ে পড়ে আছে।  করোনার নতুন ঢেউ আসার খবরে এগুলোকে সচল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মূল্যবান এসব সরঞ্জাম রক্ষার বিধিমালাও কারো জানা নেই।

২০২০ সালের ১২ মার্চ বরিশালে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ১২ এপ্রিল চালু করা হয় পি সি আর ল্যাব। সেই থেকে সরকারি বরাদ্দ ও অনুদানে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যায়ক্রমে ২টি পিসি আর মেশিন, ৭২টি আইসিইউ বেড, ৬৮টি হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলা, ৮০০টি অক্সিজেন পয়েন্ট, দুই শতাধিক অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৬১টি ভেন্টিলেটর, ৪১টি কার্ডিয়াক মনিটর, ৪টি অক্সিজেন প্লান্টসহ অনুসাঙ্গিক মেশিনারিজ স্থাপন করা হয়। গতকাল হাসপাতালটিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় শতকরা ৯৫ ভাগ হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলা অচল পড়ে আছে। ২৮টি আইসিইউ বেডের বেহাল দশা, দুটি পিসিআর মেশিনেরই কার্যক্রম বন্ধ, কয়েকটি মনিটর নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বার বার এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি।

কর্তব্যরত এক নার্স বলেন, হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলা মেশিনের ভেতরে নির্দিষ্ট একটি ডিভাইস আছে যা তিনমাস পর পর পরিবর্তন করতে হয়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে করোনা শেষ হবার পর সে কাজটি আর করা হয়নি। যার কারনে সব মেশিন অচল অবস্থায় পড়ে আছে। আমরা চিঠি দিয়েও কোন ফল পাইনি। দু /একটি মেশিন ভালো করা হয়েছে যা দিয়ে সাধারন রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে।

অন্যজন বলেন, এই মেশিনগুলো যখন চালু ছিলো তখন মুমূর্ষু রোগীকে ৮০% ফ্লোতে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া গেছে। অনেক রোগীর প্রান রক্ষা হয়েছে। কিন্তু করোনা যাবার পর কোন নির্দেশনা না থাকায় মেশিনগুলো এ অবস্থায় পড়ে আছে। নতুন করোনায় এই মেশিনগুলো কিভাবে কাজ করবে তা আমরা বলতে পারছি না।

একই অবস্থা হয়েছে এ হাসপাতালের পিসিআর মেশিন দুটির। করোনার জীবানু শনাক্তের ছোট আকারের প্রতিটি মেশিনের দাম অন্তত ৩০ লাখ টাকা। করোনাকালে এই মেশিন দিয়ে সোয়া লক্ষ নমুনা পরীক্ষায়   প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার জনকে শনাক্ত করা হয়। অথচ গত দু’বছর থেকে এর কার্যক্রমের কোন ফলোআপ না করায় এর ভবিষ্যত এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বরিশালে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও পিসিআর ল্যাব প্রধান এ কে এম আকবর কবীর বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আমরা সর্বশেষ পরীক্ষা করেছি। পরে কীটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে আমরা আর পরীক্ষা করিনি। প্রতিবছর বায়ো সেপ্টি কেবিনেট কেলিব্রেশন করতে হয়। এগুলো কিছুই করা হয়নি। এসব করা হলে বলা যাবে যে এই মেশিন দিয়ে কতোটা কাজ করা যাবে।

এদিকে বরিশালে ইতিমধ্যেই করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ বেডের করোনা ওয়ার্ড খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন করোনায় জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম কিছুটা নষ্ট হয়েছে, বাকিগুলো সারানোর ব্যবস্থা চলছে। পরবর্তিতে মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হাসপাতালের উপপরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান বলেন,  মেশিনগুলো ২০২২ সালের পর আর সচল নেই। এগুলো আমাদের স্টোরে ছিলো, দীর্ঘদিন ব্যবহার হয়নি। নতুন করে করোনার সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় আমরা মেশিনগুলো ওপেন করছি। এরমধ্য কিছু ভালো আছে এবং কিছু সংষ্কার করতে হবে। সবগুলো নিয়েই আমরা নতুন করোনা ওয়ার্ড চালু করছি। প্রাথমিক অবস্থায় সামাল দেয়ার মতো আমাদের ব্যবস্থা আছে। পরবর্তিতে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

করোনার প্রথম ধাপে বরিশালে ৫৪ হাজার ২৬৯ জন রোগী শনাক্ত হয় যাদের মধ্যে ৬৯৩ জন মারা যায়।