
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরীর কাউনিয়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি কোচিং সেন্টারে রুপান্তিত। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজেই এই কোচিং বাণিজ্যের পরিচালক। কোচিং ক্লাসের জন্য বিদ্যালয়ে একটি রুম নির্দিষ্ট করে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক এ কে এম কামরুল আলম চৌধুরী। এদিকে সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ের কক্ষে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কোচিং করেছে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিক আবু সালেহ ও ওয়াজেদ আলী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকল কোচিং বাণিজ্য অবৈধ ঘোষণা থাকলেও প্রধান শিক্ষকের ছত্রছায়ায় বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমে শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২৪ সালের কোচিং সেন্টার নীতিমালা অনুসারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোনো বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারের সাথে যুক্ত হতে পারবেন না। এছাড়াও, শিক্ষকরা তাদের নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে পারবেন না, তবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন, যেখানে তাদের নাম, রোল এবং শ্রেণি সম্পর্কে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জানাতে হবে।
জানা গেছে- ওই বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস রুমে কোচিং বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবু সালেহ ও ওয়াজেদ আলী। তাদের সহযোগিতা করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম কামরুল আলম চৌধুরী। তাদের কাছে কোচিং করলে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায় বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
অভিবাবকদের অভিযোগ- সহকারি শিক্ষক আবু সালেহ ও ওয়াজেদ শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল পাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। স্কুল রুমে কোচিং বাণিজ্য করতে রুমের ভাড়া দিতে হয় না এবং বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় না, তাই তারা কোচিং বাণিজ্য করে হাজার হাজার টাকা আয় করছে।
তারা আরও বলেন, ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে ১২শত টাকা করে আদায় করছে সহকারী শিক্ষক আবু সালেহ ও ওয়াজেদ আলী। এখানে কোচিং করলে সেখানকার পরীক্ষার ফি দিতে হয় শিক্ষার্থীদের, এমনকি তার পছন্দের গাইড কিনতে বাধ্য করেন আবু সালেহ ও ওয়াজেদ আলী।
শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুলের কক্ষে আবু সালেহ ও ওয়াজেদ স্যার আমাদের কোচিং করায়। আমাদের কাছ থেকে মাস শেষে ১২০০ টাকা করে নেয়। এই টাকার ভাগ প্রধান শিক্ষকও পান।
এ ব্যাপারে সহকারি শিক্ষক আবু সালেহ’র মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন- আমি একটা মিটিংয়ে আছি, পরে আপনার সাথে কথা বলবো। এরপর একাধিক বার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি।
এ ব্যাপারে সহকারি শিক্ষক ওয়াজেদ বলেন- আমরা পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কোচিং বা অতিরিক্ত ক্লাস নেই। এটা বিদ্যালয় থেকে অনুমোদিত। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে সকল নিয়ম-নীতি মেনেই অতিরিক্ত ক্লাস নেই।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১২০০ টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- হ্যা ১২০০ টাকাই নেই। এই টাকার ১০% প্রধান শিক্ষক নেন।
প্রধান শিক্ষক এ কে এম কামরুল আলম চৌধুরী বলেন- দুইজন সহকারি শিক্ষক পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে অতিরিক্ত ক্লাশ নেনে। এটার বিধান রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১২০০ টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন- কত টাকা করে নেয় সেটা আমার জানা নেই।
অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ানোর অনুমতির কথা থাকলেও ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কোচিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: হারুনুর রশীদ জানান, শিক্ষরা নিজের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পরাতে পারেন না। তাতে বিদ্যালয়ের ভিতরে বা বাহিরে হউক।