
নিউজ ডেস্ক :: ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল সিং স্থানীয় সময় শুক্রবার (৪ জুন) দাবি করেছেন, গত মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সংঘর্ষের সময় চীন ইসলামাবাদকে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবস্থান সম্পর্কে ‘লাইভ ইনপুট’ দিয়েছে। তিনি এ সময় দেশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে ‘আপগ্রেড’-এর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
গত এপ্রিলে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে চার দিনব্যাপী সংঘর্ষ হয়, যাতে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও আর্টিলারি ব্যবহৃত হয়। ভারত প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই হামলার দায় চাপালেও, ইসলামাবাদ তা সরাসরি ‘অস্বীকার’ করে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিং নয়া দিল্লিতে এক প্রতিরক্ষা শিল্প সম্মেলনে বলেন, ‘এই সংঘর্ষে ভারত দুটি শক্তির মুখোমুখি হয়েছিল—পাকিস্তান ছিল ‘সামনের মুখ’, আর চীন প্রদান করেছিল ‘সম্ভাব্য সব সহায়তা’।’
লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিং দাবি করেন, ‘সামরিক অপারেশন প্রধান (ডিজিএমও) পর্যায়ের আলোচনার সময় পাকিস্তান জানিয়েছিল, ‘আমরা জানি অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত আপনারা (ভারত)’। নিশ্চিত তারা (পাকিস্তান) এই তথ্য ‘চীন’ থেকে লাইভ পেয়েছিল।’
তবে কিভাবে ভারত এই ‘লাইভ ইনপুট’ শনাক্ত করল, তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেননি লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিং।
এমন গুরুতর অভিযোগের পর চীনের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রেস উইং থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
২০২০ সালে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষের পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে টানাপোড়েন থাকলেও, ২০২৩ সালের অক্টোবরে সেনা প্রত্যাহারের চুক্তির পর উত্তেজনা কিছুটা কমে।
ভারত আগে বলেছিল, পাকিস্তান চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও সংঘর্ষে বেইজিংয়ের প্রত্যক্ষ সহায়তার প্রমাণ তারা পায়নি।
পাকিস্তান চীনের কাছ থেকে স্যাটেলাইট ইমেজারি বা রাডার সহায়তা পেয়েছে কি না, তা নিয়ে সরাসরি মন্তব্য থেকে বিরত থেকেছে ভারত।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিং দাবি করেন , তুরস্ক পাকিস্তানকে বায়রাক্টার ড্রোন ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করে এবং কর্মী প্রশিক্ষণ দিয়েছিল।
সংঘর্ষের সময় আঙ্কারা ইসলামাবাদের প্রতি সংহতি জানায়, যার জেরে ভারতীয়রা তুরস্কের পণ্য বয়কট শুরু করে।
মে মাসে যুদ্ধবিরতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে চীন, যা ২০১৩ থেকে অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তানকে তার বিনিয়োগ ও আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দেয়।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুদ্ধবিরতির পর পাকিস্তানের সমকক্ষের সঙ্গে বৈঠকে ‘জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায়’ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন।
এই অভিযোগ ‘ভারত-চীন-পাকিস্তান’ ত্রিমুখী উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন যদি সত্যিই পাকিস্তানকে রিয়েল-টাইম গোয়েন্দা তথ্য দেয়, তা এশিয়ার জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।