
নিউজ ডেস্ক :: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনে যারা বিলম্ব করতে চায়, তারা নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়, জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পক্ষের শক্তি নয়।
রোববার (৬ জুলাই) গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা মনে করি, জনগণ নির্বাচন চায়। এটা বহুবার বলেছি, এখনো বলছি। একটা আলোচনা হয়েছে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের অনুষ্ঠানের- আমরা আশা করি সেই লক্ষ্যেই দেশ এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বিএনপি একটি পরীক্ষিত রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক দল। বিএনপি একটি উদারপন্থি দল। এখানে কিন্তু আমাদের কোনো রাখঢাক নেই, সোজা কথা। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যেতে চাই, কোনো বিপ্লবের মাধ্যমে বা অন্য কোনো কিছুর মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ থাকার প্রশ্নই উঠতে পারে না। যেটা আমরা ১৫ বছর ধরে লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি। একটা মাত্র উদ্দেশ্য- আমরা গণতন্ত্রে ফিরে যেতে চাই। আমি আমার অধিকার চাই, বাকস্বাধীনতা চাই। আমার বিচারের অধিকার চাই। ন্যায়বিচারের অধিকার চাই।
একটা গোষ্ঠী বিএনপিকে ভুলভাবে চিত্রিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটাকে আমি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছাড়া কী বলব। কোনো একজন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর একটা ভুল মিথ্যা প্রচারণা সমানে করে যাবে আর সেটাতে তারা মনে করবে জনগণ সাড়া দিচ্ছে। জনগণ সাড়া দিচ্ছে না। বিএনপির সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া, সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করার চেষ্টা- এটাতে লাভ হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে চেনে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, কেউ তাদের (যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চান) কাছ থেকে শুনেছেন, তারা কেমন পিআর পদ্ধতি চায়? গণতন্ত্র যেমন একটা কনসেপ্ট। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের বিভিন্নভাবে অনুশীলন হয়। আমেরিকায় যেভাবে অনুশীলন হয়, ইংল্যান্ডে সেভাবে হয় না। ফ্রান্সে যেভাবে হয়, ভারতে তো সেভাবে হয় না। শ্রীলঙ্কায় যেভাবে হয়, বাংলাদেশ সেভাবে হয় না। একেক দেশে একেক রকম পদ্ধতি আছে গণতন্ত্র কার্যকর করার। তেমনি পিআর হলো একটা কনসেপ্ট, একটা ধারণা। বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে এটা কার্যকর হয়।
তিনি বলেন, এখন যারা পিআরের কথা বলছেন তারা কীভাবে সেই পিআর বাস্তবায়ন হবে- এ ব্যাপারে কোনো কথা বলছেন না। তাহলে এ সম্পর্কে একটা অস্পষ্ট ধারণাই থেকে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ রাষ্ট্র তো জনগণের। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক তো জনগণ। আমরা কীভাবে ভোটটা দেবো? এজন্য একটা ইভিএম পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। অনেক বছর হলো। এই ইভিএম পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার জন্য অনেক প্রচার প্রচারণা হয়েছে। যারা এই পদ্ধতিটা কার্যকর করবে তাদের অনেক প্রশিক্ষণ হয়েছে। সে প্রশিক্ষণে যারা গেছেন তারা যে ভাতা নিয়েছেন, এই নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগও হয়েছে। আবার তাদের মাধ্যমে সারাদেশে জনগণকেও প্রশিক্ষিত করার চেষ্টা হয়েছে। তারপরও আজ পর্যন্ত ইভিএম পদ্ধতি কিন্তু কার্যকর হয়নি।
পিআর পদ্ধতি হলো গোটা নির্বাচন ব্যবস্থা বদলে দেওয়া। এমন মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, এনিয়ে জনগণের সঙ্গে কি কোনো মতবিনিময় হয়েছে? এখনো ঐকমত্য কমিশনে শুরুই হয়নি, অথচ এনিয়ে আমাদের কিছু কিছু সহকর্মী বলছেন, এটা করতেই হবে। না করলে ইলেকশন করা যাবে না ইত্যাদি। এর মানেটা কী? যে কোনো একটা সিস্টেম ইন্ট্রোডিউস করতে হলে জনগণের সম্মতি নিতে হবে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনের নির্ধারিত সময়ের এখনো সাত মাস আছে। বিচারের ব্যাপারেও আমরা দৃশ্যমান অগ্রগতি সম্পন্ন করতে পারি এবং সংস্কারের কাজও আমরা শেষ করতে পারি। জুলাই সনদ আরও আগে করা সম্ভব ছিল। এখন যারা করছে না বা যাদের এটা দায়িত্ব, এটা তো আমাদের দায়িত্ব না। আমরা করতে পারব না। যাদের দায়িত্ব তারা যদি কোনো কারণে বিলম্ব করে, এই দায় বিএনপি নেবে না। আমরা বহু আগে আমাদের মতামত দিয়ে দিয়েছি।