
নিজস্ব প্রতিবেদক :: দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর শাসকগোষ্ঠীর আস্থার ঘাটতি ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি তথ্য অনুযায়ী, দেশের ২৯ জন সচিবের ৪৩ জন সন্তান বিদেশে পড়াশোনা করছেন। এই পরিসংখ্যান শুধু একটি তথ্য নয়, এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার একটি উন্মুক্ত স্বীকৃতি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এ নিয়ে শিক্ষাবিদরা বলছেন, যাঁরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার নীতিনির্ধারক, তাঁরাই যদি নিজের সন্তানদের দেশের বাইরে পাঠাতে বাধ্য হন, তাহলে সাধারণ মানুষের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিরাপদভাবে এই ব্যবস্থায় গড়ে ওঠার প্রশ্নে বড়সড় সংশয় থেকেই যায়।
বর্তমান বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, পাঠ্যক্রম প্রায় প্রতি বছর বদলানো হচ্ছে, পাঠদানে আধুনিক পদ্ধতির অভাব প্রকট, এবং প্রযুক্তির সাথে শিক্ষার সংযুক্তি এখনও সীমিত। এর পাশাপাশি শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা, পেশাগত মর্যাদা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও রয়েছে গুরুতর ঘাটতি।
সাবেক একজন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, “শিক্ষার মানোন্নয়নের দায়িত্ব যাঁদের হাতে, তাঁদের যদি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি নিজের সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য আস্থা না থাকে, তাহলে এটা দেশের জন্য উদ্বেগজনক বার্তা বহন করে। এটি কেবল শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, বরং রাষ্ট্রীয় চিন্তাধারার সংকটের দিকেই ইঙ্গিত দেয়।”
শিক্ষা খাতে এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু একটি শ্রেণিবৈষম্যই তৈরি করছে না, বরং শিক্ষাকে একটি পরীক্ষাগার বানিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকরা। তাঁদের দাবি, “আমাদের সন্তানরা বারবার শিক্ষা পরীক্ষার গিনিপিগ হয়ে যাচ্ছে, আর নীতিনির্ধারকদের সন্তানরা সুরক্ষিত অবস্থানে থেকে উন্নত বিশ্বের শিক্ষায় বেড়ে উঠছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, এখন সময় এসেছে আত্মসমালোচনার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার উচিত—নিজেদের সিদ্ধান্ত ও দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন ঘটানো। নীতিনির্ধারকদের নিজেদের সন্তানদেরও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত করা উচিত, যাতে তাঁরা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারেন কোথায় সমস্যা এবং কীভাবে সমাধান সম্ভব।
একজন বিশিষ্ট গবেষক বলেন, “শিক্ষা কেবল সেবামূলক খাত নয়, এটি একটি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার প্রধান স্তম্ভ। যে রাষ্ট্র নিজ সন্তানের শিক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারে না, সে কখনোই টেকসই উন্নয়নের পথে এগোতে পারে না।”
সূত্র মতে, সচিবদের সন্তানদের মধ্যে অনেকেই যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছেন।