ঢাকাশনিবার , ১২ জুলাই ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিদেশে ২৯ সচিবদের ৪৩  সন্তান, অথচ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তারাই চালান!

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জুলাই ১২, ২০২৫ ৯:০০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর নীতিনির্ধারকদের আস্থাহীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ২৯ জন সচিবের অন্তত ৪৩ জন সন্তান বর্তমানে বিদেশে পড়াশোনা করছেন। এ তথ্য প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাঁরা দেশের শিক্ষানীতি নির্ধারণ করেন, শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার রূপরেখা ঠিক করেন, তাঁরাই যদি নিজেদের সন্তানদের এই ব্যবস্থার ভরসায় না রেখে বিদেশে পাঠান—তাহলে দেশের মানুষের সন্তানের ভবিষ্যৎ তারা কীভাবে নিরাপদ করবেন?

অভিযোগ রয়েছে, দেশে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা ও পেশাগত সম্মান এখনও নিশ্চিত হয়নি। পাঠ্যবই প্রায় প্রতি বছর পরিবর্তন হচ্ছে, পাঠদানে আধুনিক পদ্ধতির ঘাটতি রয়েছে, পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নেই, প্রযুক্তির সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয়ও এখনো যথেষ্ট পিছিয়ে। অথচ এই বাস্তবতা নিয়েই চলছে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নির্মাণের খেলা।

এ নিয়ে এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,

> “আমার সন্তান সরকারি স্কুলে পড়ে। প্রাইভেট টিউশন ছাড়া সে কিছুই বুঝতে পারে না। অথচ যাঁরা এই শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেন, তাঁদের সন্তানেরা বিদেশে! তাহলে এটা কার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা?”

 

শিক্ষাবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু শিক্ষায় নয়, গোটা রাষ্ট্রীয় চিন্তা-চেতনার দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করছে। নীতিনির্ধারকরা নিজেরাই যদি শিক্ষাকে মূল্য না দেন, তাহলে শিক্ষকদের মর্যাদা, বেতন বৈষম্য বা মানসম্মত পাঠ্যক্রম—এসবের উন্নয়ন হবে কীভাবে?

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম বলেন,

> “নিজের সন্তানকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় না রেখে বিদেশে পড়ানো মানে হলো—আপনি নিজেই স্বীকার করছেন যে এই ব্যবস্থা নিরাপদ নয়। তাহলে আপনি যেটা জনগণের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, সেটা আপনি নিজে বিশ্বাস করেন না। এটা আত্মঘাতী দৃষ্টিভঙ্গি।”

 

তিনি আরও বলেন, “এই নীতিনির্ধারকরা জানেন, তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সাথে জড়িত নয়। ফলে তাঁরা শিক্ষা খাতে বড় ধরনের সংস্কার বা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখান না।”

তথ্য বলছে, সচিবদের সন্তানদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো উন্নত দেশের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন।

📌 শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আত্মসমালোচনার সময় এখন

বিশ্লেষকদের মতে, এখনই সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের নিজেদের কাজকর্ম পুনর্মূল্যায়নের। দেশের মানুষের সন্তানের জন্য একটি আস্থাশীল ও মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করতে হলে, নীতিনির্ধারকদের নিজেদের মধ্য থেকেই উদাহরণ তৈরি করতে হবে।

> “শিক্ষা কোনো সেবামূলক খাত নয়—এটি একটি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার মূল ভিত্তি। এই ভিত্তি যদি দুর্বল হয়, তাহলে টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নও এক অর্থহীন কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়।” — মন্তব্য এক শিক্ষানীতিবিদের।