ঢাকারবিবার , ১৩ জুলাই ২০২৫

শহীদ রাহুলের মায়ের আহাজারি : ‘টাকা তো মা ডাকে না’

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জুলাই ১৩, ২০২৫ ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: ‘মোর ছোয়াল (সন্তান) সব সময় মোক মা, মা করি ডাকেছিল। টাকা তো কাথা (কথা) কহে না বা। এত টাকা পানু, টাকা তো মা ডাকে না বা। এইলা টাকা পাই মোর কি হবে? ফটোখানও বুকত ধরি থাকেছো-একবারও তো মোক মা ডাকে না বা। এক বছর হইল, মুই তো মোর ছোয়ালের মুখ থাকি একবারও মা ডাকটা শুনা পাওনাই বা’। এমনই ভাবে কেঁদে কেঁদে বিলাপ করছিল জুলাই যোদ্ধা শহীদ রাহুলের মা ফরিদা বেগম।
তিনি জানান, তার ছেলে রাহুলের মৃত্যুর পর সরকারসহ বিভিন্ন সংগঠন খোঁজ নিতে এসেছে, টাকাও দিয়ে গেছে। তার প্রশ্ন-এই টাকা দিয়ে তিনি কি করবেন?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দিনাজপুর জেলার ৯ জন শহীদের মধ্যে দিনাজপুরের মাটিতে আন্দোলন করতে গিয়ে একমাত্র শহীদ হন রবিউল ইসলাম রাহুল। দিনাজপুর সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের বিদুর সাইগ্রাম তেলিপাড়া এলাকার মোছলেম উদ্দীন ও ফরিদা বেগমের তিন ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছেলে রবিউল ইসলাম রাহুল। রানীগঞ্জ এহিয়া হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল সে। সারা দেশ যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল। আন্দোলনে রংপুরে আবু সাঈদ শহীদ হলে তার মনে সাহস ও প্রেরণা জোগায় ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করার। তখন রাহুল বাড়িতে কাউকে না জানিয়েই যোগ দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে।
গত বছরের (২০২৪) ৪ জুলাই দিনাজপুর জেলা জজ আদালতের সম্মুখ সড়কে দুর্বৃত্তদের ছোড়া টিয়ারশেল আর গুলিবদ্ধ হয়ে আহত হয়ে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন রাহুল। তার শরীরে স্প্লিন্টার ও গুলি বের করে বিশেষ চাপের কথা বলে তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর ৬ আগস্ট রাহুলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা দ্রুত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবার ভর্তি করান। অবশেষে ৯ জুলাই সে সবাইকে কাঁদিয়ে মারা যায়।

প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে গত ৯ জুলাই এই প্রতিবেদন রাহুলের গ্রামের বাড়িতে গেলে তার মা ফরিদা বেগমের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে এলাকার পরিবেশ।

রাহুলের মা ফরিদা বেগম জানান, পরিবারের মধ্যে অভাব-অনটন ছিল। ছোট ছেলে রাহুল সবসময়ই সান্ত্বনা দিত-আমরা বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে, আমার মুখে হাসি ফোটাবে। রাহুলের বাবা মোসলেম উদ্দীন বলেন, সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়ে কবরস্থানে গিয়ে দাফন করার মতো বাবার ভাগ্যে এর বড় কি শাস্তি হতে পারে? এই শাস্তি আমি পেয়েছি।