ঢাকাবুধবার , ১৬ জুলাই ২০২৫

ব্যবসা স*ম্প্র*সা*র*ণে কমলো নীতি সুদহার

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জুলাই ১৬, ২০২৫ ১:২৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতি সুদহার বা রেপো রেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক খাতে তারল্য বাড়ানো এবং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে গতি আনার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বুধবার (১৬ জুলাই) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এতে বলা হয়, তারল্য ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটারি পলিসি বিভাগ রেপো রেট দশমিক ৫০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে তা ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিন ধরে তারল্য ঘাটতির পাশাপাশি ঋণ বিতরণেও মন্থর গতি লক্ষ করা যাচ্ছিল। বিশেষ করে ব্যবসা ও বিনিয়োগে সুদহারজনিত প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। এতে উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বা রেপো রেট কমিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে গতি ফেরাতে চায়।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রেপো রেট যা আগে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ ছিল, তা দশমিক ৫০ শতাংশ হ্রাস করে ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আগের তুলনায় কম সুদে টাকা ধার করতে পারবে। এতে তাদের ব্যয় কমবে এবং তারা আরও সহজে ও সাশ্রয়ী শর্তে গ্রাহকদের ঋণ দিতে পারবে। এর ফলে বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়বে, যা বিনিয়োগ, উৎপাদন ও ভোগব্যয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তবে এই রেপো রেট কমানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক করিডোর-ভিত্তিক অন্যান্য সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে। স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ), অর্থাৎ নীতিগত ঋণের ঊর্ধ্বসীমা আগের মতো ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে স্থির রাখা হয়েছে। একইভাবে আভার নাইট রেপো রেট, যা নীতিগত নিম্নসীমা হিসেবে বিবেচিত, সেটিও ১০ শতাংশেই বহাল রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে মূলত সরাসরি ঋণ দেওয়ায় কিছুটা শিথিলতা আনা হলেও পুরো সুদহার কাঠামোয় বড় কোনো ধাক্কা আসছে না, বরং একটি ‘সন্তুলিত শিথিলতা’ বজায় রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, বর্তমানে দেশে বিনিয়োগপ্রবণতা কমে গেছে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ সুদের কারণে ঋণ গ্রহণে আগ্রহ হারাচ্ছে। এতে উৎপাদনশীল খাতে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সুদের চাপ কমানো জরুরি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার কমিয়ে অর্থনীতিতে গতি আনার চেষ্টা করছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ যুগোপযোগী ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

তবে কেবল রেপো রেট কমানোই যথেষ্ট নয়—এমন মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ঋণ পুনরুদ্ধার কার্যক্রম জোরদার, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ, সুদের ঊর্ধ্বসীমা বাস্তবায়ন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির মাধ্যমেও অর্থনীতিকে চাঙা করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি কালবেলাকে বলেন, রেপো রেট কমানো একটি ভালো উদ্যোগ হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলবে না। দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব তৈরি করতে হলে কার্যকর কাঠামোগত সংস্কার ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হয়।

তিনি আরও বলেন, সুদহার হ্রাসের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ঋণপ্রবাহ বাড়তে পারে, কিন্তু তারল্য বেশি হলে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কাও বাড়ে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত দেশের ব্যবসা, বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যদি তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়। অতিরিক্ত তারল্য যেন মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে না তোলে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। ফলে এই নীতি পরিবর্তন একদিকে যেমন ব্যবসায় আস্থা ফেরাতে ভূমিকা রাখবে, তেমনি প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ না করা হলে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।

এ জন্য মুদ্রানীতি প্রয়োগে আরও সংবেদনশীল ও বাস্তবভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করা প্রয়োজন বলেও করেন তিনি।