
নিউজ ডেস্ক :: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় পোস্টার অপসারণকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌরসভার প্রশাসক ফয়সাল আহমেদকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির এক সাবেক নেতার বিরুদ্ধে। তাঁদের কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিএনপির ওই সাবেক নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তাঁর বাড়ি। তিনি এলাকায় ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল নামে পরিচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউএনও ফয়সাল আহমেদের নির্দেশে গত মঙ্গলবার পৌরসভার কর্মীরা উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের পোস্টার ও ফেস্টুন অপসারণ করেন। ওই দিন ইউএনওকে ফোন করে হুমকি দেন কে এম জুয়েল।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া অডিও রেকর্ডে কে এম জুয়েল বলেন, ‘আজ একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এ বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত–বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে? না ইচ্ছে করে?’
তখন মুঠোফোনের অপর প্রান্তে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।’ কে এম জুয়েল বলেন, ‘জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।’ এ সময় ইউএনও কিছু একটা বলতে চাইলে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল আবার বলেন, ‘শোনেন, আমি যেটা বলছি, লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক আনসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।’
একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে জুয়েল বলেন, ‘কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল, ঠিক আছে, মানে কি? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যে রকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।’ জুয়েল বলতে থাকেন, ‘নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি, এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।’
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার কে এম জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছবি তুলে ফেলুক, আপত্তি নেই, আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তাঁর কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, “যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন।” কিন্তু আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।’
ইউএনও ফয়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের উপজেলা সদরে ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার–ফেস্টুনে এমনভাবে ছেয়ে গিয়েছিল যে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল স্থানীয় জনগণের। তাঁরা এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার সরানোর জন্য। দুই–তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারেও জানানো হয়েছিল। আমার স্টাফ (পৌরসভার কর্মী) দিয়ে ব্যানার–ফেস্টুন অপসারণের ব্যবস্থা করেছি। সেখানে শুধু রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই পোস্টার ছিল না, অন্য পোস্টারও ছিল। সবই সরানো হয়েছে।’
বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা বা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ কোনো মন্তব্য করেননি।