ঢাকাশনিবার , ২ আগস্ট ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গ্রে*প্তা*র এড়াতে যে কৌশল নিয়েছিলেন চাঁ*দা*বা*জ অপু

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ২, ২০২৫ ১:৫৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে চাঁদা নেওয়ার ঘটনায় জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গ্রেপ্তার এড়াতে প্রতিনিয়ত অবস্থান পরিবর্তন ও একপর্যায়ে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকাদের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) সম্প্রতি বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় এই নেতা। তবে ঢাকা ছাড়ার আগমুহূর্তে প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় ডিবি পুলিশ।

অপুকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান। ডিবি ও থানা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৬ জুলাই গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহম্মেদের বাসায় গিয়ে চাঁদা দাবির সময় যখন পুলিশ উপস্থিত হয়, তখন সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যায় অপু। তারপর থেকে টানা সাত দিন গ্রেপ্তার এড়াতে নানা কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। প্রতিদিনই সে জায়গা পরিবর্তন, মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা এবং কোনো জায়গাতেই বেশি সময় অবস্থান করছিল না। এরই মধ্যে প্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাকে গোপীবাগ থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। যখন তাকে আটক করা হয়, তখন সে তার এক বন্ধুর বাসা থেকে বের হয়েছিল।

গ্রেপ্তার অভিযানে থাকা ডিবির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, শুক্রবার (০১ আগস্ট) ভোরে ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্য বন্ধুর বাসা থেকে বের হয়েছিল অপু। তার পরিকল্পনা ছিল ঢাকার বাইরে কোথাও গিয়ে দীর্ঘদিনের জন্য গা ঢাকা দেওয়ার। তবে তার আগেই প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় ডিবি পুলিশ।

গ্রেপ্তারের পর তাকে নিয়ে গুলশান থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে ডিবি। এরপর তাকে নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডির বিভিন্ন বাসায় অভিযানে যায় থানা পুলিশ। অপুকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল বিকেল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে একাধিক বাসায় ঘুরে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত বিভিন্ন আলামত পাওয়া গেছে বলে অভিযানে থাকা এক পুলিশ সদস্য কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার (০১ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই পুলিশ কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকার একাধিক বাসায় অভিযান চালানো হচ্ছে। অপুকে সঙ্গে নিয়ে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নানা আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গত ১৭ জুলাই সকালে জানে আলম অপু ও মো. আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রিয়াদ সাবেক এমপি শাম্মী আহম্মেদের গুলশানের বাসায় গিয়ে তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তারা নিজেদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে চাঁদা না পেলে আবু জাফরকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে ১০ লাখ টাকা নিয়ে ওই বাসা থেকে সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজনকে নিয়ে বেরিয়ে আসে রিয়াদ ও অপু।

চাঁদার টাকা ভাগাভাগির পর সেদিনই নিজের ভাগের টাকা দিয়ে ইয়ামাহা এফজেড-এক্স ব্র্যান্ডের ওই মোটর সাইকেলটি কেনে অপু। এর এক দিন পর ফের ওই বাসায় গিয়ে দাবি করা চাঁদার বাকি টাকার জন্য আবার হুমকি দেয়। সেদিন টাকা না পেয়ে তারা চলে আসে। কিন্তু তৃতীয়বারের মতো তারা গত ২৬ জুলাই আবার ওই বাসায় যায়। সেদিন তারা ১৫-২০ জন যুবককে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ‘বাকি রাখা’ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে শাম্মী আহম্মেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে জানালে সেখানে গুলশান থানা পুলিশ অভিযান চালায়।

সেদিন ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেপ্তার হয় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক সুলাইমান বিন রিয়াদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক একজন। এর পরপরই দুই সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়।

গ্রেপ্তার পাঁচজনসহ অপুর নামে সেদিনই মামলা করেন সিদ্দিক আবু জাফর। সে মামলারই পলাতক আসামি জানে আলম অপু ওরফে গৌরব জামান অপু। প্রথমে যে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছিল তাদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরকে বাদ দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাকি চারজনের সাত দিনের রিমান্ড চলছে। এর মধ্যে রিমান্ডের চার দিন পার হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রিমান্ডে নানা তথ্য দিচ্ছে রিয়াদ। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রিয়াদের দুটি ভাড়া বাসার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। সেসব বাসায় অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা এবং একটি বাসা থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে।