ঢাকামঙ্গলবার , ৫ আগস্ট ২০২৫

বড় ভাইকে বলেছিলেন শ হী দ ফরহাদ ‘চলেন ভাই শ হী দ হয়ে আসি’

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ৫, ২০২৫ ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: ৪ আগস্ট, ২০২৪। মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালী এলাকায়  শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিল ছাত্র-জনতা। আন্দোলনকারীদের কণ্ঠে বৈষম্যবিরোধী নানা প্রতিবাদী স্লোগান চলছিল। একপর্যায়ে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে চলে ঘাতকের গুলি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ফরহাদ হোসেনের (২২) মাথায় গুলি লাগে । হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মৃত্যুর আগে অর্থাৎ ৪ আগস্ট সকালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলেছিলেন ফরহাদ। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ফরহাদ তার বড় ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘চলেন ভাই, শহীদ হয়ে আসি।’ এটি ছিল বড় ভাইয়ের সঙ্গে তার শেষ কথা।

শহীদ ফরহাদ মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর গ্রামের বাসিন্দা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ফরহাদের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। বড় দুই বোন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। তাদের বাবা গোলাম মোস্তফা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। 

পরিবার ও প্রতিবেশীদের মতে, ফরহাদ ভাইদের মধ্যে ছোট হলেও ছিলেন পরিপক্ব, দায়িত্বশীল ও সাহসী। তিনি সক্রিয়ভাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন এবং এটিকে নৈতিক দায়িত্ব মনে করতেন। এ কারণে পরিবার কিংবা কেউই তাকে আন্দোলনে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

শহীদ ফরহাদের বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, ফরহাদ প্রতিদিনই পরিবারের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলতো। আন্দোলনের সময়েও নিয়মিত ফোনে খোঁজখবর দিত এবং কী ঘটছে তা জানাতো। 

তিনি বলেন, ছেলের চিন্তাভাবনা স্পষ্ট ছিল, ভয় পেত না। তার এমন আত্মবিশ্বাস ও সাহস একজন বাবার গর্ব হলেও আজ তা হৃদয়বিদারক স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুর দিন সকালে পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলেছিল, কেউই ভাবেনি এটাই হবে শেষ কথা।

শহীদ ফরহাদের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া বলেন, ৪ আগস্ট সকালে ফরহাদ আমাকে আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলেছিল এবং শহীদ হওয়ার ইচ্ছার কথা উল্লেখ করেছিল। ভাইয়ের এ কথা শুনে নীরব ছিলাম। 

তিনি জানান, তার মায়ের হার্টের সমস্যা থাকায় সবসময় তার পাশে লোক থাকতে হয়। সে কারণে তিনি নিজে বাসায় ছিলেন। কিন্তু ছোট ভাই ফরহাদকে তিনি আটকাননি। এরপর ফরহাদ তাকে বলেছিলেন, তার জন্য দোয়া করতে যেন আল্লাহ তাকে কবুল করেন। শহীদ ফরহাদের চাচা মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ফরহাদ ধর্মচর্চায় ছিল অগ্রগামী। সবসময় তার সঙ্গে একটি ছোট কোরআন শরিফ থাকতো। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই নয়, তাহাজ্জুদ নামাজও পড়তো। ধীরস্থীরভাবে নামাজ আদায় করতো। যার মধ্য দিয়ে তার ভক্তিপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ পেত।

ঘটনার দিন সকালে রায়নগর থেকে সাতজনের একটি দল ইজিবাইকে করে কয়েক দফা বাধা অতিক্রম করে পারনান্দুয়ালী এলাকায় পৌঁছে। তাদের মধ্যে ফরহাদের স্কুলবন্ধু ও ফরিদপুর রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেনও ছিলেন।

ইমতিয়াজ জানান, বেলা ১১টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। মহাসড়কে আগুন ও সংঘর্ষ দেখে অনেকে ভয় পেলেও নির্ভিক ফরহাদ মোটেই ভয় পাননি। দুপুর ২টার দিকে তারা মিছিলের একেবারে সামনে চলে গেলে হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে ধাওয়া শুরু হয়। তখন একপর্যায়ে একটি গুলি এসে ফরহাদের মাথায় লাগে। নছিমন যোগে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফরহাদের পরিবার জানায়, ফরহাদের দাফন ময়নাতদন্ত ছাড়াই করা হয়েছে। তারা মামলা করেননি, কারণ তারা ফরহাদের মরদেহ আবার কবর থেকে উঠানো হোক তা চান না।

এ ঘটনায় সদর উপজেলার বীরপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. জামাল হোসেন ২১ আগস্ট সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার বাদী জানান, ঘটনার সময় ফরহাদ তার সামনেই গুলিবিদ্ধ হন।

মামলায় আসামি হিসেবে মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর ও মাগুরা-২ আসনের সাবেক সাংসদ শ্রী বীরেন শিকদারসহ ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।