
নিউজ ডেস্ক :: গণপূর্ত বিভাগের পছন্দের ঠিকাদারের করা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো সংষ্কারের ৬ মাসেই আবারো চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এক বর্ষা যেতে না যেতেই বেশিরভাগ সড়কের অবস্থা বেহাল বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, রোগী, চিকিৎসক, স্টাফ সহ এসব সড়কে নিয়মিত চলাচলকারীরা। প্রতিদিন এসব সড়ক দিয়ে রোগী নিয়ে যাতায়াত করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে স্বজনদের। অবস্থা খারাপ হওয়ায় সড়কগুলো দিয়ে গর্ভবতী, হৃদরোগে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ন স্থানে ঠিকাদার কিভাবে এত নি¤œমানের দায়সারা কাজ করতে পারে এমন প্রশ্ন সবার। তবে গণপূর্ত বিভাগের মেডিকেল কলেজ উপ-বিভাগের দাবি ৬ মাসের মধ্যে রাস্তা ভেঙ্গে যওয়াটাই নাকি স্বাভাবিক। ভুক্তভোগিদের মতে রাস্তা ভাঙ্গলেই তা পুনরায় নির্মান হবে। হবে টেন্ডার প্রক্রিয়া। আবারো কাজ দেয়া হবে বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের সাথে সক্ষতা রেখে চলা দুর্নীতিগ্রস্ত ঠিকাদারদের। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বরিশাল গণপূর্ত মেডিকেল কলেজ উপ-বিভাগের পুকুর চুরির কৌশলী প্রক্রিয়া, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে নি¤œমানের দায়সারা কাজ করানো, একটি কাজকে একাধিক টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাগ বাটোয়ারা করার মত দুর্নীতির বিষয়গুলো।
গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল, সেবিকাদের সেবা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং সেবিকা, কর্মচারী ও শিক্ষকদের নিজস্ব আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এসকল প্রতিষ্ঠানের ব্যবহারকারীদের চলাচল সহ শহরের রোগীদের মেডিকেলে আসা-যাওয়ার জন্য ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন সব মিলিয়ে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এই সড়কগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ন হওয়ার পরেও অনেক আগ থেকেই এর সংস্কার হয় খুব নি¤œমানের। খুব অল্প দৈর্ঘ্যরে হলেও সড়কগুলো কখনোই একসাথে সংস্কার করা হয়না। প্রতি ৬ মাস পর পর সড়কের একেকটি অংশ আলাদা আলাদা টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংস্কার করায় গণপূর্ত বিভাগ। ওই অংশ ৬ মাস যেতে না যেতেই আরেকটি অংশে সংস্কারের প্রয়োজন হয়। আবারো হয় টেন্ডার। এমন করেই চলে আসছে বছরের পর বছর। এই প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিক টেন্ডার প্রক্রিয়া মনে হলেও এখানে চলে বড় ধরনের দুর্নীতি। রাস্তার যে কোন একটি অংশের সংস্কার প্রয়োজন হলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী এবং উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী কাজ করতে ইচ্ছুক তাদের পছন্দের ঠিকাদারদের আবদারে করে পরিমাপ। এর পর ইচ্ছে মত বাজেট করে তা ভাগ বাটোয়ারার পর মিলে মিশে করে নি¤œমানের সংস্কার। এরপর হয় ওই কাজের টেন্ডার। স্বাভাবিক টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যে ঠিকাদার কাজ পায় তারমধ্যে দুর্নীতিবাজ পছন্দের ঠিকাদারের মধ্যে মধ্যস্থতা করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী এবং উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী। যে ঠিকাদার কাজ পায় তাকে ৫ থেকে ১০ শতাংশ টাকা দিয়ে মধ্যস্থতার মাধ্যমে কাজটি দিয়ে দেয়া হয় পূর্বে কাজ শেষ করে রাখা ঘুষ দেয়া ঠিকাদারদের। এ ধরনের দুর্নীতি গণপূর্ত বিভাগে হর হামেশাই চলে এবং এটি একটি ওপেন সিক্রেট। আর এই দুর্নীতির সাথে গণপূর্ত বিভাগের উপর থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জড়িত বলে জানায় সূত্রটি। একটি কাজের ঠিকাদারের চুরির বেশিরভাগ টাকাই তাদের পকেটে যায় বলেও জানায় সূত্রটি। এ জন্য কাজ হয় খুবই নি¤œমানের।
মেডিকেল কলেজ উপ-বিভাগটিও এমন দুর্নীতির জালে আটকে আছে দির্ঘদিন। তাই নির্মানের ৬ মাসের মধ্যেই সড়কের অবস্থা বেহালে পরিনত হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে ব্যাপিস্ট মিশন রোড এর প্রান্ত থেকে শুরু করে ইন্টার্ন ছাত্রবাসের সামনে থেকে মর্গ হয়ে পুকুর পাড়ের সড়কটি মসজিদ পর্যন্ত এসেছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের টেন্ডার হওয়া সড়কের এই কাজ শেষ হয় গত বছর। কাজটি করে খান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই অংশের অবস্থা বর্ষার আগ থেকেই বেহাল। সড়কে বর্ষার পর এখন তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সামান্য পিচ দিয়ে রাস্তায় দেয়া নি¤œমানের পাথরগুলো আলগা হয়ে আছে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায়। মেডিকেলের অডিটরিয়াম ও পরিচালকের কার্যালয়ের সামনের গোল চত্বরটির সড়কের অবস্থাও শোচনীয়। মসজিদের পশ্চিম পাশ হয়ে মেডিকেলের পেছনের গেট অবধি সড়কটিরও একই অবস্থা। এসকল সড়কের কাজ স্থানীয় প্রভাবশালী, জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেল পরিচয়ের ঠিকাদারদের দিয়ে করানো হয়েছে। যা পাইয়ে দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে গণপূর্ত মেডিকেল কলেজ উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ওবায়দুল হক বলেন, এই সড়কগুলো ৬ মাস পর পর ভেঙ্গে যাবে এটাই স্বাভাবিক। বর্ষার কারনে সড়কের এই অবস্থা হয়েছে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল ক্যাম্পাসে সড়কের সঠিক পরিমান তার জানা নেই। যে সকল সড়ক ভেঙ্গেছে তা আবারো টেন্ডার দেয়া হবে। আপাতত তারা মেডিকেলের অডিটরিয়াম ও পরিচালকের কার্যালয়ের সামনের গোল চত্বরটির সড়কের কাজের টেন্ডার কল করেছেন। বিস্তারিত দুর্নীতির বিষয়ে আলাপের চেষ্টা করা হলে কার্যালয় ছেড়ে রিক্সাযোগে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন এই কর্মকর্তা।
অন্যদিকে একই বিষয়ে আলাপের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলমকে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।