
নিউজ ডেস্ক :: ফরিদপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ‘সাহসী সম্মাননা’ পেয়েছেন শেখ ফয়েজ আহমেদ নামের এক সাংবাদিক। তিনি ফরিদপুরে জুলাই আন্দোলনে হামলা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার সাংবাদিকরা।
বুধবার (১৩ আগস্ট) শেখ ফয়েজের ফেসবুকে সম্মাননা পাওয়ার বিষয়ে একটি পোস্ট করা হয়। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, সাংবাদিকতায় ২০২৪ সালে সাহসিকতাপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও চেক প্রদান করা হয়েছে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ক্ষোভ প্রকাশে করেছেন জেলার সাংবাদিক মহল ছাড়াও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা। দুপুরে জুলাইযোদ্ধাদের একটি প্রতিনিধি দল জেলার সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত প্রতিবাদ জানায়। তারা বিতর্কিত এই ব্যক্তিকে দেওয়া সম্মাননা প্রত্যাহার ও প্রকৃত সাহসী সাংবাদিকদের মূল্যায়নের দাবি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ ফয়েজ আহমেদ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ফরিদপুর জেলা কমিটির সভাপতি। বঙ্গবন্ধু সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিষদের ব্যানারেও তাকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। সাংবাদিকতা পরিচয় ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষত, ওই সময়ে জেলার সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করা হয়। তাকে গ্রেফতারের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল ও মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। সমবায় ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের মামলায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গড়ে তুলে তিনি সে যাত্রায় রেহাই পান। তার বিরুদ্ধে ফরিদপুর সমবায় ব্যাংক ভবনের পাঁচটি দোকান কারসাজি করে বিক্রির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
জুলাইযোদ্ধারা জানান, গণঅভ্যুত্থানের সময়েও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি আস্থা জানিয়ে বিভিন্ন পোস্ট দিয়েছিলেন শেখ ফয়েজ। আন্দোলনকারীদের শিক্ষার্থীদের অনেককে তিনি ‘শিবির ট্যাগ’ দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিলেন সেসময়। জুলাই আন্দোলনের বিপক্ষে তার এই বিতর্কিত ভূমিকায় অনেকেই ক্ষুব্ধ হন।
গত বছরের ১০ অক্টোবর ফরিদপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন শেখ মুজাহিদুল ইসলাম। ফরিদপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার একমাত্র মামলা এটি। শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা ওই মামলায় শেখ ফয়েজ আহমেদ এজাহারভুক্ত ৯৭ নম্বর আসামি। এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে গণঅভ্যুত্থানে সাহসী সম্মাননা প্রদান করে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। গত ৩ আগস্ট রাজধানীর তথ্য ভবনের ডিএফপি অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক পরিবার ও আহত এবং সাহসী সাংবাদিকদের সম্মাননা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এতে ফরিদপুর জেলা শহরের সাংবাদিকদের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে সম্মাননা লাভ করেন শেখ ফয়েজ আহমেদ।
এদিকে এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে জেলার সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন জুলাইযোদ্ধাদের একটি প্রতিনিধি দল। এসময় সেখানে অন্যদের মধ্যে আবরার নাদিম ইতু, কাজী রিয়াজ, সোহেল রানা, মাহমুদুল হাসান ওয়ালিদ উপস্থিত ছিলেন। তারা এই ভুয়া সাহসী সাংবাদিকের সম্মাননা প্রত্যাহার ও প্রকৃত সাহসী সাংবাদিকদের মূল্যায়নের দাবি জানান। এ বিষয়ে শেখ ফয়েজ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করেই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এক কথায় কোনো অভিযোগই সঠিক না।’
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব পিয়াল বলেন, ‘এ খবর জানতে পেরে আমরা বিস্মিত। এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় অবদান রাখা সাহসী সাংবাদিকদের প্রতি অসম্মানের সামিল। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
জানতে চাইলে জেলা সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত নই। আমাদের কোনো মতামতও নেওয়া হয়নি। তিনি নিজেই হয়তো আবেদন করেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তাছাড়া ফরিদপুর জেলা থেকে একমাত্র আবেদনকারী ছিলেন তিনি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই না করার কারণে এমনটি হয়েছে।