
সাইফুল ইসলাম, বাবুগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি :: চিকিৎসক নেই, নেই পর্যাপ্ত নার্সসহ কর্মচারী। দীর্ঘদিন অচল থাকা এক্সরে মেশিনটি সচল করা হলেও রেডিও গ্রাফার না থাকার কারণে এটিও ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না । এ অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চিকিৎসক রয়েছেন ৯ জন, যা ৫০ শয্যার মান অনুযায়ী অপ্রতুল। জরুরি বিভাগ চালু থাকলেও নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না জনবল ঘাটতির কারণে। দীর্ঘদিন অচল থাকা এক্সরে মেশিনটি সম্প্রতি সচল হলেও, রেডিওগ্রাফার না থাকায় সেটি এখনো ব্যবহার অযোগ্য।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির মোট অনুমোদিত কর্মকর্তা-কর্মচারী সংখ্যা ১০০ হলেও কর্মরত রয়েছেন তারও কম, বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও নার্স সংকট প্রকট। এতে করে হাসপাতাল পরিচালনায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।
ঘাটতি রয়েছে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, কম্পাউন্ডার ও নার্সেরও। তাই বর্তমানে দৈনিক প্রায় দু’ শতাধিক বহিঃবিভাগের রোগী দেখতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তাররা।
উপজেলা সদর থেকে সুগন্ধা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের মানুষ বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী উজিরপুর ও বরিশাল জেলায় চলে যাচ্ছে। এতে করে গরিব অসহায় মানুষগুলোর চিকিৎসাসেবা পেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় রোগী যাত্রাপথেই মারা যাচ্ছে।
বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা দেহেরগতি ইউনিয়নের দক্ষিণ রাকুদিয়া এলাকার বাসিন্দা আরিফ হোসেন ফরাজী বলেন, এখানে এলে সময়মতো ডাক্তার পাওয়া যায় না।কোনো টেস্ট দিলে বাইরে থেকে করাতে হয়। তাই আমরা বাধ্য হয়ে বরিশাল জেলা শহরে যাই। কিন্তু সেখানে যেতে অনেক সময় লাগে আবার খরচও অনেক বেশি।
জাহাঙ্গীরনগর (আগরপুর) ইউনিয়নের রমজান কাঠি এলাকা থেকে আসা বাবলু মিয়া বলেন,
বাবুগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত সেবা না পাওয়ার কারণে আমরা গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডাক্তার দেখাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।
বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সংকট ও এমন বেহাল অবস্থা নিয়ে ০৬ সেপ্টেম্বর শনিবার কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাক্তার সুবাস সরকার এর সঙ্গে।
তিনি বলেন, উপজেলা সদরের সাথে নদী বেষ্টিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এখানে কোনো ডাক্তার থাকতে চান না। মাত্র ৪ জন চিকিৎসক ও সামান্য কিছু কর্মচারী দিয়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল চালাতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে হাসপাতালটির দৃশ্যমান উন্নতি হয় এবং তা দিন দিন অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতাল এলাকাকে আবর্জনামুক্ত করে ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধি করে – দৃষ্টিনন্দন এনসিডি কর্নার, আইএমসিআই কর্নার, এএনসি-পিএনসি কর্নার, এডোলেসেন্ট কর্নার ও সচল ডেন্টাল ইউনিট করা হয়েছে।
চিকিৎসা নিতে আসা বহির্বিভাগের রোগীরা জানান, এখন আগের তুলনায় দ্রুত চিকিৎসা সেবা মিলছে এবং কিছু ঔষধ এখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে। খাবারও মোটামুটি সন্তোষজনক।
ডা. সুবাস সরকার আরো জানান, হাসপাতালটি ৫০শয্যার হলেও এখনো ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। তাই জনবল সংকটে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের । হাসপাতালকে যদি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয় ও সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা এবং হাসপাতালের আন্তঃ যোগাযোগ রক্ষার জন্য ইন্টারকম সার্ভিস চালু করা হয় তাহলে এখান থেকেও উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বর্তমান অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির যথাযথ ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল দ্রুত পদায়ন দিলে স্বাস্থ্যসেবার মান আরও বাড়বে এবং পুরো বাবুগঞ্জ উপজেলার মানুষ উপকৃত হবেন।