
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল-১ আসনের নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মো. কামরুল ইসলাম খানের বড় ছেলে এবং কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা আরাফাত বিল্লাহ খান সম্প্রতি এক জনসভায় বাবার বিপরীতে গিয়ে বিএনপি প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। শুধু তাই নয়, সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাবাকে ইউটিউব দেখে শেখা পাইলটের সঙ্গে তুলনা করেছেন ছেলে। এর প্রতিক্রিয়ায় ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াত নেতা কামরুল ইসলাম খান।
গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বরিশালের গৌরনদীর পাইলট স্কুল মাঠে বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব হুমায়ুন কবির। সমাবেশে বরিশাল-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনের উপস্থিতিতে জামায়াত মনোনীত প্রার্থীর ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান তার পিতাকে ইঙ্গিত করে একটি ভাষণ দেন। ভাষণটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে চাপের মুখে পড়েন ওই জামায়াত নেতা। এরপর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে স্ট্যাটাস দিয়ে ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেন তিনি।
ওইদিন ভাষণে বিএনপি নেতা আরাফাত বিল্লাহ খান বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমার বাবা কামরুল ইসলাম খান জামায়াত থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। আপনাদের কেউ যদি বলে, আপনি যে বিমানে ওঠেছেন সেই বিমানের পাইলট ইউটিউব দেখে বিমান চালানো শিখেছেন, তাহলে আপনারা কি সেই বিমানে ভ্রমণ করবেন?’
জনসভা থেকে এসময় সমস্বরে ‘না’ বলতে শোনা যায়। সঙ্গে সঙ্গে আরাফাত বিল্লাহ খান আবার বলেন, ‘কেন করবেন না? কারণ তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নাই, কোনো এক্সপেরিয়েন্স (অভিজ্ঞতা) নাই।’
তার এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পরে পিতা কামরুল ইসলাম খান ফেসবুকে লেখেন, ‘আমার বড় ছেলে আরাফাতকে শিবির করার জন্য অনেক বুঝিয়েছি, অনেক চাপ সৃষ্টি করেছি। আমি ব্যর্থ হয়েছি। তাকে দিয়ে শিবির করাতে পারিনি। আমি একজন ব্যর্থ পিতা। আমার বড় ছেলের সাথে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করলাম জামায়াতে ইসলামীর নমিনির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার জন্য।’
এর আগে, আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে ছেলের ভাষণের প্রেক্ষাপটে তিনি লেখেন, ‘আমাকে পিতা পরিচয় দিয়ে গতকাল ৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ গৌরনদী পাইলট স্কুল মাঠে বিএনপির পক্ষ নিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তাতে কেহ হতাশ হবেন না। আমি আজ চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরে দুই উপজেলার আমির, আসন পরিচালক ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দদেরকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব ইনশাআল্লাহ।’
ছেলের ভাষণের পরে নিজ দলের নেতাকর্মীদের দুই শ ফোন কল পেয়েছেন বলেও জানান কামরুল ইসলাম খান। তিনি একটি গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘আমি তো ওইদিন ঢাকায় ছিলাম। এইটার বিশাল ইফেক্ট পড়েছে এলাকায়। ছেলেটার বক্তৃতায় সব এলোমেলো হয়ে গেছে। আমি মুরব্বি মানুষ, হার্টে তিনটা রিং পড়ানো, একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। আমার পরিচয় দেওয়ার পরেই সে কথাটা বলেছে। এই কথাটা সে না বললেও পারতো ওখানে।’
অন্যদিকে ওই গণমাধ্যমে ছেলে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘বিষয়টা আমি পরিষ্কার করেছি শুধু। আমি আমার পার্টির প্রতি লয়াল (বিশ্বস্ত)। তিনি জামায়াত করেন এটা তাঁর পছন্দের বিষয়, আমি বিএনপি করি এটা আমার পছন্দের বিষয়। বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে আমাদের এই সুযোগটুকু দেওয়া উচিত। এটা নিয়ে আসলে বিরূপ মন্তব্য করার সুযোগ নেই।’


