
এম. লোকমান হোসাইন :: শ্রমিকদের বেতন নিয়ে নানা অভিযোগ। তবুও করেন বিলাসী জীবন-যাপন। চলাচল করেন সরকারি আনসার বাহিনী নিয়ে। শ্রমিকদের অতিরিক্ত কর্মঘন্টার অর্থ না দিয়ে করেন আত্মসাত। এমনকি শ্রমিকরা যেক’দিন অফিস করেন, তা থেকেও কেটে রাখা হয় অর্থ।
এভাবেই নানা অভিযোগে জর্জরিত ফরচুন সু কোম্পানি। যিনি শ্রমিকদের সময়মতো বেতন দিতে পারেন না, তিনি বিপিএলের ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণের নামে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন। যদিও এবার সুযোগ পাননি বিপিএলে। অথচ শ্রমিকদের দীর্ঘ পরিশ্রমের ঘামের অর্থ সঠিকভাবে পরিশোধও করছেন না।
শ্রমিকের বেতন আত্মসাত! অসরকারকে বিপাকে ফেলতে নাট্যমঞ্চ! অঅঘোষিত মাফিয়া! অশেখ হাসিনার বিদেশ সফরসঙ্গী! অপ্রশাসন ম্যানেজে চলছেন মিজান!
কিছু দিন পরপর বেতন, কর্মঘন্টা কেটে রাখা সহ বিভিন্ন অভিযোগে রাস্তায় নামেন শ্রমিকরা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যতবার না বেতন বন্ধ করেছেন, তার চেয়ে বেশি বেতন বন্ধ করে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করছেন এই এক বছরে। অভিযোগ আছেÑবর্তমান সরকারকে বিপাকে ফেলতেই এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছেন মিজান।
ফ্যাসিস্ট সরকারের দোষর ফরচুন মিজান বর্তমান সরকারকে বিপাকে ফেলতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। আর নিজে চলছেন সরকারি আনসার বাহিনী নিয়ে। ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে বরিশাল নগরীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মিজান।
প্রশাসনও বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যক্তি নিরাপত্তার জন্য যেখানে আনসার বাহিনী ব্যবহার করার নিয়ম নেই, সেখানে বেড়াচ্ছেন আনসার নিয়ে। এ যেন অঘোষিত মাফিয়া। শ্রমিকদের দাবিÑযেখানে তাদের বেতন-ভাতা সঠিকভাবে দিচ্ছে না, সেখানে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সরকারি আনসার বাহিনী নিয়ে ফ্যাক্টরিতে আসা-যাওয়া করা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই না।
অবৈধ গভর্নিং বডি কমিটিতে চলছে বরিশাল অমৃত লাল দে কলেজ
শেখ হাসিনার আমলে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে বরিশাল বিসিক শিল্পনগরীর সভাপতি পদ ভাগিয়ে নেন ফরচুন সু কোম্পানির মালিক মিজানুর রহমান মিজান। নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা দাবি করে একাধিকবার স্বৈরাচার সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে বিদেশে যান মিজান। সর্বশেষ ২০২৪-এর কথিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। মিজান নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক পরিচয় দিতেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে দাবি করতেন। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে মিজানের বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। সেখানে মিজান বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেন। মন্তব্যের একপর্যায়ে মিজান বলেন, “আমি যদি বিএনপি-জামাতের লোক হতাম তাহলে ২০১৩ সালের আন্দোলনে আমার ৪টি বাস পুড়িয়ে দেওয়া হত না, আমার ফ্যাক্টরিতে বোমা মারা হত না।
আমি নিজেও আওয়ামী লীগের লোক। বিগত মেয়র নির্বাচনের সময়ে আমি দিনরাত বর্তমান মেয়র (সাদিক আব্দুল্লাহ) মহোদয়ের পক্ষে কাজ করেছি। তবে আওয়ামী লীগের অল্পকিছু লোক রয়েছে যারা আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে”Ñবলে দাবি করেন।
নিজেকে আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা পরিচয় দেওয়া, জুলাই–২০২৪ এর ঘটনায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, বিএনপির পার্টি অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগের মামলা থাকার পরও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মাফিয়া খ্যাত ফরচুন মিজান।
৫ আগস্ট ২০২৪ সালে স্বৈরাচার সরকারের এমপি–মন্ত্রী, ব্যবসায়ীসহ নেতাকর্মীরা পালিয়ে গেলেও রহস্যজনকভাবে একই প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে আনসার বাহিনী নিয়ে বরিশাল নগরীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মিজান। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আনসার বাহিনী শুধুমাত্র কলকারখানা, ফ্যাক্টরি বা কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকতে পারে।
ফরচুন মিজান তার সু-ফ্যাক্টরির নামে আনসার বরাদ্দ এনে ব্যবহার করছেন ব্যক্তিগত বিলাসিতার কাজে। মিজান প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংক বরিশাল শাখার সামনে থেকে আনসারের বহর নিয়ে বিসিকে সু ফ্যাক্টরিতে যান। তিনি বাসায় ফেরার পথে বরিশাল নগরীতে আনসার বাহিনী নিয়ে মহড়া দিয়ে বাসায় আসেন।
এমনকি বিমানযোগে ঢাকা থেকে আসা-যাওয়ার সময়ও বরিশাল এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আনসার বাহিনী তাকে পৌঁছে দেয় এবং এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িবহরসহ তাকে বাসায় নিয়ে আসেÑযা সরকারি আইনগতভাবে বড় ধরনের অপরাধ। অথচ আনসার বাহিনীর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
আমেরিকার ১৫ টি সেরা দর্শনীয় স্থান
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, রেঞ্জ কার্যালয়, বরিশাল বিভাগের পরিচালক মো. আব্দুস সামাদ সময়ের বার্তাকে বলেন, “যদি কোনো বড় ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থাকে, সেখানে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য আনসার বাহিনী নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আনসার বাহিনী ব্যবহার করা অননুমোদিত।” তিনি আরও বলেন, “এ বিষয়ে তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
জেলা কমান্ড্যান্ট, আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়, বরিশালের জেলা কমান্ড্যান্ট মো. নাহিদ হাসান জনি সময়ের বার্তাকে বলেন, “আনসার বাহিনী মূলত প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য দেওয়া হয়। ফরচুন সু কোম্পানির ফ্যাক্টরির নিরাপত্তার জন্য অর্থের বিনিময়ে আনসার বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। আনসার বাহিনীকে ব্যক্তির স্বার্থে ব্যবহার করার নিয়ম নেই। কেউ যদি ফ্যাক্টরির জন্য বরাদ্দ নিয়ে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার নামে বিলাসিতা বা প্রভাব দেখানোর চেষ্টা করেন, তাহলে আনসার বাহিনী সরিয়ে আনা হবে।”
এ বিষয়ে ফরচুন কোম্পানির চেয়ারম্যান অভিযুক্ত মিজানুর রহমান মিজানের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
তবে অভিযোগ আছে, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা বিষয়টি জেনেও রহস্যজনক কারণে এড়িয়ে যাচ্ছেন।


