ঢাকারবিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিভেদের দেয়ালে বন্দী সাংবাদিকতা : এখনই দরকার আত্মশুদ্ধি, ঐক্য আর ন্যায্যতার নতুন পথ”

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
নভেম্বর ২৩, ২০২৫ ৬:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

রিপোর্ট আসাদুজ্জামান মুরাদ :: মানুষ দুনিয়ার দুই দিনের অতিথি, এই সহজ সত্য আমরা যত দ্রুত ভুলে যাই, ততই নিজেদের মধ্যে বেড়ে ওঠে বিভাজন, দ্বিধা আর দোষারোপের সংস্কৃতি। এই সংকট আজ সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে সাংবাদিক সমাজে। যে সমাজের কাজ সত্য উদ্‌ঘাটন, সমাজকে আলোকিত করা, তারাই আজ নিজেদের অন্ধকারের ভেতর আটকে পড়ছে পরস্পরের দোষারোপে, ভুঁইফোঁড় সংগঠনের বন্যায়, অপসংবাদিকতার অভিযোগে।

একসময় যে পেশা ছিল সম্মান ও নীতির প্রতীক, আজ সেখানে অনিয়ম আর ধান্দাবাজির অভিযোগ ওঠে প্রতিনিয়ত। বরিশালে এখন ৫০ থেকে ১০০টি সাংবাদিক সংগঠনের অস্তিত্ব, এটা শক্তির পরিচয় নয়, এটা বিভক্তির প্রবল প্রমাণ। একটি সংগঠন ভাঙে, আরেকটি গড়ে, কেউ অন্যের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে, কেউ কম পাচ্ছে, এ নিয়ে হাস্যকর প্রতিযোগিতা আর পারস্পরিক কটাক্ষ চালু থাকে প্রতিদিন। যেন সংগঠন সংখ্যা বাড়ানোই প্রধান কাজ, সাংবাদিকতার মর্যাদা রক্ষা নয়।

বরিশালের বহু পত্রিকার মালিক সংবাদকর্মীদের ন্যায্য সম্মানী দেয় না, এটাই বাস্তবতা। মালিকপক্ষ মনে করে, সাংবাদিকদের বোধহয় পেট নেই, তাদের ন্যায্য উপার্জনের প্রয়োজন নেই। অথচ সত্য হলো, সবারই পেট আছে, সবারই পরিবার আছে, সবারই চাহিদা আছে।

ন্যায্য সম্মানী না পেয়ে যখন কেউ কেউ দৈনিক ২০০–৫০০ টাকার ‘অপসংবাদিকতা’ করে, তখন তাকে পুরো দোষ দেওয়ার আগেই প্রশ্ন উঠবে, কেন সাংবাদিককে সম্মানজনক আয়ের সুযোগ দেওয়া হলো না? কেন প্রতিষ্ঠানগুলো সৎ সাংবাদিকতার পথকে কঠিন করে রাখছে?

টেন্ডারবাজি, দালালি, ব্যক্তিস্বার্থ, এইসব পচনশীল কর্মই সংগঠন ভাঙনের কারণ। একেকটি গ্রুপ একেকটি ক্ষমতার বলয়ে যেতে চায়, আর প্রকৃত সাংবাদিকরা পড়ে থাকে উপেক্ষার অন্ধকারে। এর ধারাবাহিকতায় ১৫–৩৫টি সংগঠন গড়ে ওঠা মোটেই স্বাভাবিক নয়; এটি এক গভীর রোগের লক্ষণ।

সুশীল সমাজ বলছে, সাংবাদিকতার মূলশক্তি হলো বিশ্বাসযোগ্যতা। আর বিশ্বাস তখনই তৈরি হয় যখন সেই পেশার মানুষরা নীতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। বিভক্ত সংগঠন, অপসংবাদিকতা, অর্থনৈতিক সংকট,সব মিলিয়ে পেশার মর্যাদা ক্ষয়ে যাচ্ছে।”

আরেকজন প্রবীণ নাগরিকের অভিমত, সাংবাদিকদেরকে আমরা সমাজের বিবেক হিসেবে দেখি। কিন্তু যখন তারাই বিভেদে জড়িয়ে পড়ে, তখন সেই বিবেক দুর্বল হয়ে যায়। সাংবাদিকদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা চিনে তাকে দূর করা।”

একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য হলো, সাংবাদিকতাকে টিকিয়ে রাখতে হবে মানবিকতা এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে। প্রকৃত সাংবাদিকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগঠন গড়তে হবে। অপসংবাদিকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
সাংবাদিকদের বিকল্প আয়ের সুযোগ, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের পথ খুলতে হবে। মিডিয়া মালিকদের বাধ্য করতে হবে ন্যায্য সম্মানী দিতে।

যখন সাংবাদিকরা অভুক্ত থাকে বা অনিশ্চয়তার ভয় নিয়ে কাজ করে, তখন তার কলম কখনোই স্বাধীন হতে পারে না। ক্ষুধার তাড়া মানুষকে ভুল পথে নিতে পারে,এটাই বাস্তবতা। তাই সঠিক পথ দেখাতে হলে আগে তার পেট ভরাতে হবে, সম্মানী দিতে হবে, সুযোগ দিতে হবে।

সাংবাদিকরা সমাজের জন্য কলম ধরে, এ সত্য যদি স্মরণ করা যায়, তবে নিজেদের মধ্যকার বিভেদও সহজেই মুছে যাবে। সাংবাদিকতা পেশা সম্মানের; একে হাসির খোরাক, বিভেদের খেলার মাঠ বা অর্থের লেনদেনের কেন্দ্র বানালে ক্ষতি হবে সমাজেরই।

ঐক্যবদ্ধ হন, অপসংবাদিকতা দূর করুন, প্রকৃত সাংবাদিকদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিন—এটাই সময়ের দাবি।