
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বরিশাল-৫ আসনকে ঘিরে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৈরি হয়েছে টানটান উত্তেজনা। এই আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি—অন্যদিকে শক্ত ভোটঘাঁটি ও ক্রমবর্ধমান জনসমর্থন নিয়ে মাঠে নেমেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসলামী দলগুলোর সম্ভাব্য ঐক্য বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে বরিশাল-৫ শুধু একটি সংসদীয় আসন নয়—এটি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। বিভাগীয় সদর দপ্তর হিসেবে এই আসন থেকে নির্বাচিত এমপি প্রায় অলিখিতভাবেই বিস্তৃত অঞ্চলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা চারবার বরিশাল-৫ আসনটি নিজেদের দখলে রেখেছিল বিএনপি। এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান সরোয়ার। তবে মনোনয়ন ঘোষণার পর প্রকাশ্যে একতা দেখালেও তৃণমূলে ‘অনৈক্যের স্রোত’ দলটির বিজয়কে কঠিন করে তুলছে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে।
মজিবুর রহমান সরোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, আমি দায়িত্বে থাকার সময়ে বরিশালে অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি, এখানে যত উন্নয়ন হয়েছে বিগত দিনে বিএনপির আমলেই হয়েছে। ইনশাআল্লাহ বরিশালের মানুষ এবারও ধানের শীষে ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবে।
অপরদিকে বরিশাল সদর উপজেলায় অবস্থিত চরমোনাই দরবার শরীফ—ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান কেন্দ্র। ফলে আসনটি সবসময়ই তাদের কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিম এবারও এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার মতে, “মানুষ এখন নতুনভাবে নির্বাচনের অঙ্ক কষছে; পুরোনো ভোটের হিসাব আর কাজে দেবে না।”
মুফতী ফয়জুল করিম বলেন, মানুষ এখন আর দখলদারি-চাঁদাবাজি চায় না- মানুষ পরিবর্তন চায়। এজন্য ইনশাআল্লাহ হাতপাখায় ভোট দিবে মানুষ।
দীর্ঘদিন পর নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে ফিরে এসেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসাইন হেলাল বরিশাল-৫ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং নিজস্ব ভোটব্যাংকের ওপর আস্থাশীল থেকে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী মন্তব্য করছেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল বলেন, আমরা আশা করছি আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ, আগামীর বরিশাল হবে দাঁড়িপাল্লার বরিশাল।
বরিশাল-৫ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৫০ জন। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জামায়াতে ইসলামী—দুই দলেরই একটি সুসংগঠিত ও সুনির্দিষ্ট ভোটব্যাংক রয়েছে, যা কোনো দিক থেকেই উপেক্ষণীয় নয়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াত যদি বোঝাপড়ার মাধ্যমে কোনো একক প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়, তাহলে তাদের সম্মিলিত ভোট বিএনপিকে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারে। সবমিলিয়ে বরিশাল-৫ আসনটি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে আলোচিত ও কঠিন লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। শেষ কে হচ্ছেন এ আসনের পরবর্তী সংসদ সদস্য-সেটিই এখন দেখার পালা।


