ঢাকাশুক্রবার , ২৮ নভেম্বর ২০২৫

অসহায় নূরে আলম মৃধার পাশে দাঁড়াল প্রশাসন : পেলেন নতুন ঘর ও হুইলচেয়ার

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
নভেম্বর ২৮, ২০২৫ ৮:৪২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....
সাইফুল ইসলাম, বাবুগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি :: বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের হতদরিদ্র নূরে আলম মৃধা—জীবনযুদ্ধের রণাঙ্গনে বারবার পরাজয়ের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এক অসহায় পিতা। সমাজে আর দশজনের মতো বিত্ত-বৈভব না থাকলেও দিনমজুরি করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্ত্রী, শারীরিক প্রতিবন্ধী এক পুত্র ও দুই কন্যাকে নিয়ে কোনোমতে দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি।
দৈনন্দিন খরচের চাহিদা মেটাতে না পেরে একসময় বাকপ্রতিবন্ধী স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন রাজধানী ঢাকায়। কিন্তু সেখানে অবস্থানকালে নূরে আলম নিজেও ধীরে ধীরে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। জীবনের তাগিদে কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে আবার ফিরে আসেন জন্মগ্রাম ইসলামপুরে।
পৈত্রিক ভিটে থাকলেও ছিল না বসবাসের জন্য কোনো ঘর। বাধ্য হয়ে আশ্রয় নেন প্রতিবেশীর ঘরে। জীবিকার প্রয়োজনে শুরু করেন ভ্যান চালানো। এর মধ্যেই দুই কন্যাকে বিয়ে দেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর হাত-পায়ের হাড় বাঁকা হতে থাকে, কর্মক্ষমতা হারিয়ে একসময় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে থাকেন। স্ত্রী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী, নিজেও হাঁটতে-চলতে অক্ষম—এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েন নূরে আলম মৃধা।
অবশেষে মাথা গোঁজার একটু আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন বাবুগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসে। বিষয়টি আমলে নেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারুক আহমেদের সাথে আলোচনা করে নূরে আলমকে ‘নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ও বস্তিবাসীদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প’ থেকে একটি নতুন বাড়ি অনুমোদন দেওয়া হয়।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফারুক আহমেদ নূরে আলম মৃধার হাতে নতুন ঘরের চাবি তুলে দেন। পাশাপাশি তাঁর চলাচলের সুবিধার জন্য উপহার দেন অত্যাধুনিক হুইলচেয়ার।
মানবিক সহযোগিতায় নুরে আলম মৃধার হাতে ঘরের চাবি ও হুইলচেয়ার তুলে দিতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফারুক আহমেদ বলেন সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের সর্বশেষ প্রান্তে থাকা মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়, সুরক্ষা ও মর্যাদার জীবন উপহার দেওয়া। নূরে আলম মৃধার মতো অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। একজন মানুষ তার পরিবার নিয়ে যেন অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই ও চলাফেরার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা পান—এটাই রাষ্ট্রের প্রত্যাশা। আমরা চাই কেউ যেন অনাহারে-অবহেলায় দিন না কাটায়। ভবিষ্যতেও এমন সব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে উপজেলা  প্রশাসন সর্বদা প্রস্তুত।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল আহসান হিমু, ইউপি সদস্য মো. আলাউদ্দিন হোসেন, মো. কাইয়ুম হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও নূরে আলমের পরিবারের সদস্যরা।
নতুন ঘরের চাবি হাতে পেয়ে আবেগে ভেঙে পড়েন প্রতিবন্ধী নূরে আলম মৃধা। কান্না জড়িত কণ্ঠে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সমাজসেবা কর্মকর্তার জন্য। মানবিকতার এমন দৃষ্টান্তে ইসলামপুর গ্রামের অসহায় এই পরিবারে নেমে আসে স্বস্তির হাসি, ফিরতে শুরু করে বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন।