ঢাকাশনিবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাবা-চাচা রাজাকার নারী এমপি হচ্ছেন দিলোয়ারা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪ ৩:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: বাবা-চাচা রাজাকার নারী এমপি হচ্ছেন দিলোয়ারা

চট্টগ্রাম থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দিলোয়ারা ইউসুফ। দুই যুগের অধিক সময় থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। এক দশকের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তবুও যেন অতীত পিছু ছাড়ছে না তার। অভিযোগ রয়েছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় দিলোয়ারা ইউসুফের বাবা নূর আহমেদ কেরানী ও চাচা আলী আহমেদ টি কে ছিলেন চিহ্নিত এবং সক্রিয় রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল আওয়ামী লীগ থেকে সংরক্ষিত আসনে দিলোয়ারার মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। বাবা-চাচা মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার হিসেবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার পরও দিলোয়ারা কীভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন—তাদের প্রশ্ন।

গত বুধবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম থেকে তিন নারীকে সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনীত করা হয়। তাদের একজন দিলোয়ারা ইউসুফ। তাকে মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকেই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মহলে তৈরি হয়েছে চাপা ক্ষোভ ও মিশ্রপ্রতিক্রিয়া। স্থানীয়দের ভাষ্য—ফতেপুরের রাজাকার আলী আহমদ যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেওয়া, নারীদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে তাদের সন্তুষ্ট করে পেয়েছিলেন ‘টি কে’ পদবি।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দলিল অনুযায়ী, ‘টি কে’ অর্থ ‘তকমায়ে খেদমত’। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আনুগত্যের নিদর্শন হিসেবে দেওয়া হতো বিশেষ এই উপাধি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মতে, আলী আহমদ এতই দুর্ধর্ষ ছিলেন যে, স্বাধীনতার পরপরই ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা উপর্যুপরি পাথরের আঘাতে তার মাথা থেতলে হত্যা করেছিলেন। দিলোয়ারা ইউসুফের বাবা নূর আহমেদকেও এলাকা ছাড়া করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফেজ কামাল কালবেলাকে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় আলী আহমেদ রাজাকার হিসেবে পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেই এই ‘টি কে’ উপাধি পেয়েছিলেন। দিলোয়ারা ইউসুফের বাবাও ছিলেন রাজাকার। আমি একদিন বাসে করে যাচ্ছিলাম। এ সময় একই বাসে নূর আহমেদও ছিলেন। তিনি আমাকে হাটহাজারী থানায় ধরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি। তিনি রাজাকার না হলে মুক্তিযোদ্ধাকে কেউ পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিতে চায়? সেই পরিবারের মেয়ে হয়ে দিলোয়ারা ইউসুফ কীভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান?”

এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিলোয়ারার স্বামী ইউসুফ সিকদার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম কলেজে মিছিল থেকে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবরণ করেন। ১৯৯৪ সালের অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নির্বাচনে মহিলা কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সংগঠক হিসেবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন দিলোয়ারা ইউসুফ। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন।চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সালাম কালবেলাকে বলেন, ‘এই জেলা থেকে অনেকেই মনোনয়ন চেয়েও পাননি। তাই হয়তো কারও কারও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’ তবে দিলোয়ারা ইউসুফের চাচা মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ছিলেন, সেটা স্বীকার করেছেন তিনি।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন কালবেলাকে বলেন, ‘তিনি (দিলোয়ারা) দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এতদিন তো তার ব্যাপারে কেউ আপত্তি তোলেনি, এখন কেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘দিলোয়ারা ইউসুফ দলবিরোধী ভূমিকা রেখেছেন কি না, দলের জন্য দুঃসময়ে তার অবদান কী ছিল, সেই বিবেচনায় নারী আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ কালবেলাকে বলেন, ‘রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিহিংসা থাকে। চট্টগ্রাম থেকে অনেকেই দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি। তাই হয়তো কেউ কেউ আমার বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যেসব বিষয়ে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই, সব ভুয়া। আমি তো বহু বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এগুলো ঈর্ষাকাতরতা ছাড়া কিছু নয়।’