নিউজ ডেস্ক :: গণভবনে এমপি-মন্ত্রী ও স্বজনদের ভাগ্য নির্ধারণ আজ
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের তালিকা তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর।
জানা গেছে, বৈঠকে দলের নির্দেশ অমান্য করে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের যেসব স্বজন প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশ আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা আভাস দিয়েছেন।প্রসঙ্গত, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিজের শ্যালককে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশনা দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। নাটোরের সিংড়া উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মন্ত্রীর শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল।
তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাসহ একাধিক এমপি-মন্ত্রীকে বিপরীত অবস্থান নিতেও দেখা গেছে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান ও চাচাতো ভাই পাভেলুর রহমান শফিক খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। শাজাহান খান একাধিকবার সাংবাদিকদের বলেছেন, আত্মীয়দের প্রার্থী হওয়া দোষের নয়। আত্মীয় প্রার্থীরা যদি আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘ সময় জড়িত থাকেন, তাদের যদি জনপ্রিয়তা থাকে, তাহলে তারা কেন ভোট করতে পারবেন না? তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আজকের বৈঠকে এ বিষয়ে নিজের যুক্তি তুলে ধরবেন বলেও জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আগে দলীয় সিদ্ধান্ত যারা অমান্য করেছেন তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিয়েছে, যদিও তা সবার ক্ষেত্রে সমান হয়নি। অর্থাৎ সবাইকে বহিষ্কার কিংবা অব্যাহতি দেয়া হয়নি। তবে কোনো না কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের যারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি তাদের বিষয়ে দল অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। তবে কার ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তার সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ গণমাধ্যমে বলেন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে দল। এ বিষয়ে কড়া বার্তা দেবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দেশি-বিদেশি অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি আলোচনায় গুরুত্ব পায়। উপজেলা নির্বাচন নিয়েও কথা হবে। বিশেষ করে এমপি-মন্ত্রী যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বজনদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন এবং যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাস্তি সব সময় সমান হয় না। সামনে দলের সম্মেলন রয়েছে, থানা-জেলায় কমিটি হবে, নির্বাচন রয়েছে, নেতাদের কার্যক্রমের ওপর দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এমপি-মন্ত্রী ও তাদের স্বজনদের তালিকা তৈরি করেছেন। দলের দপ্তরে তা জমা দেওয়া হবে। দলের কেন্দ্রীয় বৈঠকে তালিকা অনুযায়ী কথা হবে।
এদিকে প্রথম ধাপের নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের বিষয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার না হওয়ায় উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপেও ১১ জন স্বজনের প্রার্থী হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে কুমিল্লা সদর দক্ষিণে প্রার্থী হয়েছেন গোলাম সারোয়ার। তিনি কুমিল্লা-১০ আসনের এমপি সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সহোদর। এ জেলার বরুড়া উপজেলায় প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের শ্যালক হামিদ লতিফ ভূঁইয়া।
নিজের ভগ্নিপতিকে প্রার্থী করায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খানের স্ত্রীর বড় ভাই মো. শরীফুল হক। নরসিংদীর শিবপুরের এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্ত্রী ফেরদৌসি ইসলাম শিবপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন। তিনি শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছোট ভাই।
নাটোর-১ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা শামীম আহমেদ সাগর লালপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোট করছেন লালমনিরহাট-২ আসনের এমপি সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ ও ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন জামিল হাসান দুর্জয়। তিনি গাজীপুর-৩ আসনের এমপি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় ভাই।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন নঈম হাসান জোয়ার্দার। তিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দার ছেলুনের ভাতিজা।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আবদুল সালাম মল্লিক। তিনি বরিশাল-৬ আসনের এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিকের আপন ভাই।