ঢাকাশনিবার , ৬ জুলাই ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বন্যার কারণে সিলেটে ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ 

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জুলাই ৬, ২০২৪ ৪:৪৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: বন্যার কারণে সিলেটে ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ

সিলেটে তৃতীয় দফার বন্যায় ভালো নেই সীমান্তবর্তী উপজেলার মানুষ। বন্যার কারণে দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না বানভাসিদের। একই সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি না হওয়ায় কষ্ট বাড়ছে বানভাসিদের। এমন পরিস্থিতির কারণে সেখানে প্রায় পাঁচশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতিতে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে। জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে ও বিভিন্ন এলাকায় ডাইক ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নগরীর আশ্রয়কেন্দ্রে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বন্যায় অসহায় হয়ে পড়া লোকজন। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবের পাশাপাশি পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। বন্যার কারণে সড়ক, কৃষি, মৎস্য, অবকাঠামোসহ নানা খাতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের উত্তর-পূর্বের এই জেলা। ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষা খাতেও। ফলে জেলার প্রায় পাঁচশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

জেলার ১৩ উপজেলায় ১০১টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ১১শ ৮০টি গ্রামের ৬ লাখ ২৬ হাজার ১৩৮ জন মানুষ বন্যায় পানিবন্দি রয়েছেন। মানুষদের সেবা দিতে ৪০৩ মেডিকেল টিম কাজ করছে। বন্যায় বিভিন্ন রোগে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৯১ জন।

শুক্রবার (৫ জুলাই) সকাল-সন্ধ্যা সিলেটের নদ-নদীর পানি কোথাও এক সেন্টিমিটার কমলেও অন্য পয়েন্টে বেড়ে গেছে । তাছাড়া লোভা, সারি ও ডাউকি নদীর পানিও অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম থাকলেও কমেনি সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি। নদীর পানি না কমায় বন্যার শঙ্কা কাটছে না সিলেটবাসীর মধ্যে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার ১৩ উপজেলায় ১০১টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ১১শ ৮০টি গ্রামের ৬ লাখ ২৬ হাজার ১৩৮ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। জেলার ৬৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৩২৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন ও প্রত্যেক উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে কন্ট্রোল স্থাপন করে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন করে বন্যার্ত অসুস্থ মানুষকে দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ৬টি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৭১ সে.মি. এবং সিলেট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৮ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে ১৫২ সে.মি, এ নদীর শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টে ৪৭, ১০৩ ও ১৫ সে.মি উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের অন্যান্য নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও গত দুদিন ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার মোট এক হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯৮টিতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ৩৭, বিশ্বনাথে ২, বালাগঞ্জে ৫৫ ফেঞ্চুগঞ্জে ৩২, গোলাপগঞ্জে ২৭, বিয়ানীবাজারে ৫৪, জকিগঞ্জে ২৩, কানাইঘাটে ৪, জৈন্তাপুরে ৩, গোয়াইনঘাটে ২, কোম্পানীগঞ্জে ৬৫, দক্ষিণ সুরমায় ২২ ও ওসমানীনগরে ৭২টি বিদ্যালয় রয়েছে।

জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার দিয়ে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদীর কয়েকটি স্থানে ডাইক ভেঙে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে জকিগঞ্জ উপজেলা সদরের ছবড়িয়া, রারাই, বাখরশাল, নরসিংহপুর ও পৌর এলাকা প্লাবিত হয়। এ ছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি ডাইক উপচে বাজারে প্রবেশ করেছে। এতে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারসহ মধ্যবাজার, পূর্ববাজারসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে বিয়ানীবাজার উপজেলার দেউলগ্রাম, গোবিন্দশ্রী, আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর, আলীনগর চরখাই এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। দেউলগ্রামের বাসিন্দা আহমদ হোসেন বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের বন্যায় তেমন সমস্যা না হলেও তৃতীয় ধাপে এসে তিন দিন ধরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপাকে আছেন। ঘরের মধ্যে প্রায় হাঁটুসমান পানি। পরিবারের সদস্যরা স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় গত বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিনটি উপজেলার সীমান্তবর্তী নদ-নদীগুলোর পানিও বৃহস্পতিবার কমেছে। নগরের ভেতরে বিভিন্ন এলাকা বৃহস্পতিবারও জলমগ্ন অবস্থায় ছিল। পানিবন্দি মানুষ নিজেদের স্বজনদের বাড়িতেই উঠছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটের মধ্য দিয়ে বয়েচলা প্রায় সকল নদী পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। যেকারণে উজানের পানি ধীর গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী ও হাওরগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে এখানকার বন্যা পরিস্থিতি। নগরীর আশ্রয়কেন্দ্রে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বন্যায় অসহায় পড়া লোকজন। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবের পাশাপাশি পানিবাহিত রোগবালাইয়ের শিকার হচ্ছেন তারা।

নগরীর ১৫নং ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হলেও কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি এখানে আশ্রয় নেওয়া লোকজন। স্থানীয় নারী কাউন্সিলরের দেওয়া কিছু শুকনো খাবার ছাড়া এই আশ্রয়কেন্দ্রে আর কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি তারা।

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বন্যা কবলিত বাসিন্দারা অসহায় সুরে বলেন, শুধু মহিলা কাউন্সিলর আমাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন আর কিছু ত্রাণসামগ্রীও আমাদের দিয়ে গেছেন। আর কেউই আমাদের কোনো খবর রাখেনি।

সিলেটের জকিগঞ্জের বাসিন্দা কাজী জুবায়ের জানান, এক মাসের মধ্যে ৩ বার এলাকাবাসী পানিবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন। আমাদের ঈদটাও ভালো যায়নি। মূল সড়কে হাঁটুর ওপরে পানি ভেঙে যাওয়া-আসা করতে হয়। এর থেকে পরিত্রাণ কবে পাব কে জানে।

ছবড়িয়া গ্রামের মনসুর আলী বলেন, মঙ্গলবার রাতে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রথমে ডাইক উপচে পড়ে। পরে তাদের এলাকায় ডাইক ভেঙে পানি ঢুকতে থাকে। এতে গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরবাড়িতে পানি ওঠে। এরপর থেকে পানি ঢোকা অব্যাহত আছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ বলেন, ৩৯৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আর বাকিগুলো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাইদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বন্যার কারণে জেলায় ৭৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয় রয়েছে ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়। কুশিয়ারা অববাহিকার এসব এলাকায় বন্যার পানি কমছেই না। দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। পানি কমলে বাড়তি ক্লাসের মাধ্যমে এই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

পাউবোর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর এলাকার সঙ্গে যুক্ত হওয়া নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। এতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলা চলে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পয়েন্টগুলোতে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।