ঢাকাশুক্রবার , ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সুস্থ তোফাজ্জল নিজেই খাবার দিতেন পাগল, পথশিশু ও ভবঘুরেদের

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪ ৮:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: সুস্থ তোফাজ্জল নিজেই খাবার দিতেন পাগল, পথশিশু ও ভবঘুরেদের

এমানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জল হোসেনকে (৩০) প্রথমে নির্মম নির্যাতন করা হয়। এরপর সে খাবার চাইলে তাকে খাবার খেতে দেয় হত্যাকারীরা। খাওয়া শেষে ফের তাকে মারধর করে, এরপর মারা যায়।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জল মাঝে মধ্যে মানুষের কাছে খাবার চাইতেন, আবার কখনো চাইতেন টাকা।

জানা যায়,  বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় এই তোফাজ্জলের বাড়ি। এক সময়ে তিনি ছিলেন সুস্থ-সবল তরতাজা যুবক।‌ সুস্থ থাকা অবস্থায় তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগল), পথশিশু ও ভবঘুরেদের খাবার খাওয়াতেন। একটি সুন্দর স্বাভাবিক পরিবার ছিল তোফাজ্জলের। ছিলেন মেধাবী শিক্ষার্থী।

২০০৯ সালে এসএসসি ও ২০১১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তোফাজ্জল। এরপর বরিশালের সরকারি বিএম কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স মাস্টার্স শেষ করে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু ল কলেজে অধ্যায়নরত ছিলেন।

তোফাজ্জলের বড় ভাইয়ের স্ত্রী শরীফা বেগম বলেন, তোফাজ্জলের বাবা আবদুর রহমান মারা যান ২০১১ সালে, মা বিউটি বেগম মারা যান ২০১৩ সালে এবং ভাই নাসির উদ্দিন (পুলিশের এএসআই) মারা যান ২০২৩ সালে। একের পর এক মৃত্যুর শোকের মধ্যে তার প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেন তার প্রভাবশালী বাবা। মেয়ের বিয়ের আগে তার চেয়ারম্যান বাবা সন্ত্রাসীদের দিয়ে মারধর করান তোফাজ্জলকে। এরপর থেকেই পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে তোফাজ্জল।

পাথরঘাটার সচেতন নাগরিক ইমাম হোসেন বলেন, তোফাজ্জল সুস্থ থাকা অবস্থায় পাথরঘাটার অনেক মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে খাবার খাওয়াতেন, ভবঘুরে মানুষ দেখলে খাবার খাওয়াতেন, পথশিশু দেখলে খাবার দিতেন আবার অনেক সময় নতুন পোশাক কিনে দিতেন।

তিনি আরও বলেন, যেই তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে খাওয়াতেন, সেই তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার পর নিজেই মাঝে মধ্যে অন্যের কাছে খাবার চাইতেন।

পাথরঘাটার মাছ ব্যবসায়ী ও প্রবীণ বাসিন্দা সুলতান ফরাজী বলেন, ছোট থেকেই তোফাজ্জলকে চিনি। ও কখনো কারোর ক্ষতি করেনি। দান করতো, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে খাবার কিনে দিতো। আমরা কল্পনাও করতে পারিনি তোফাজ্জল নিজেই মানসিকভাবে অসুস্থ হবে আর সে অন্যের কাছে খাবার চাইবে। তোফাজ্জলের মৃত্যু আমরা মানতে পারছি না। একটি নিষ্পাপ প্রাণকে যারা নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই আমরা।

বরগুনা জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু রাইজিংবিডিকে বলেন, তোফাজ্জলের কয়েকটা স্থিরচিত্র ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছে। কখনো তাকে নির্মমভাবে নির্যাতনের ভিডিও দেখছি, আবার কখনো সে সুস্থ থাকাকালীন মানসিক ভারসাম্যহীন, পথশিশু ও ভবঘুরেদের খাবার ও যত্ন নেওয়ার ছবিও দেখছি। এত নির্মম ঘটনা মানতে পারছে না বরগুনাবাসী। একজন মানুষকে যখন একদফা মারার পর সে মার‌ খেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় খাবার চাইলো, তখনো ওরা কিভাবে তাকে খাবার খাইয়ে আবার মারে!

তিনি‌ আরও বলেন, আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলাম। হাতেগোনা কয়েকজন মিলে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম করলো। হত্যাকারীদের শাস্তি চাই‌।