ঢাকাসোমবার , ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে প্রকৌশলীর ছত্রছা.য়ায় আদালতের নি.ষেধা.জ্ঞা অমা.ন্য করে চলছে মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫ ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে নির্বাহী প্রকৌশলীর ছত্রছা.য়ায় আদালতের নি.ষেধা.জ্ঞা অমা.ন্য করে চলছে মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ অমান্য করে চলমান রয়েছে পিরোজপুর জেলার দুটি মডেল মসজিদের নির্মান কাজ। কাজে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে। পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও কাজটির পার্টনার ইনচার্জ পিরোজপুর জেলা আওয়ামীলীগ সহ সভাপতি, সাবেক পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক এর যোগসাজশে এই কাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পলাতক থাকার পরেও হাবিবুর রহমান মালেক পিরোজপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) অনিরুদ্ধ ম-ল ও পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দীন মহারাজ এর ব্যক্তিগত কর্মচারী সোহেল এর কাছে কাজ বিক্রি করে এমনটা করছেন বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারীরা। পলাতক হাবিবুর রহমান মালেকের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাজ অ্যান্ড ব্রাদার্স এর নামেই বর্তমানে দুটি মডেল মসজিদের নিম্ন মানের কাজ চলছে। যা স্থানীয়দের বাধার মুখে বন্ধ হয় এবং আদালত কাজটি স্থগিত করে ৩ মাসের জন্য। আদালতের আদেশ অমান্য করে পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খায়রুজ্জামানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাজ চলমান থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সূত্র মতে, সারা দেশের ৫৬০ টি মডেল মসজিদের নির্মান প্রকল্পের আওতায় পিরোজপুর জেলার দুইটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয় সদ্য বিদায়ী বছর। ৩০ কোটি ১৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে গত বছরের ১৫ অক্টোবর মসজিদ দুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রো গ্লোব, মেসার্স খান বিল্ডার্স এবং মেসার্স রাজ অ্যান্ড ব্রাদার্স এর সমন্বয়ে ঊএ-গকই-গজই (ঔঠ) নামক প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। কাজের ৩০ শতাংশের অংশিদার হন হাবিবুর রহমান মালেক তার মেসার্স রাজ অ্যান্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে কাজের দেখভালের দায়িত্ব নেন মালেক। অন্য দুই অংশিদার তাকে কাজের পার্টনার ইনচার্জ করেন কাজের সুবিধার্থে। তবে তার তত্ত্বাবধানে শুরু হওয়া কাজের মান নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ওঠে। পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগ এর সহসভাপতি, সাবেক পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পতনের পর পালিয়ে যান। একই সাথে হন একাধিক মামলার আসামী। পলাতক থাকা অবস্থায় বাকী দুই অংশিদারকে না জানিয়ে কাজের আইনগত পার্টনার ইনচার্জ হওয়ায় কাজটি পিরোজপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) অনিরুদ্ধ ম-ল ও পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দীন মহারাজ এর ব্যক্তিগত কর্মচারি সোহেল ক্বারীর কাছে বিক্রি করে দেন গোপনে। বিক্রির পরে হাবিবুর রহমান মালেকের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খায়রুজ্জামান এর সরাসরি নির্দেশনায় কাজ চলমান থাকে। চলমান কাজ নি¤œমানের বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণকাজ তদারকির জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন প্রকৌশলী থাকার কথা থাকলেও সেখানে তাদের দেখা মেলেনি শুরু থেকে। প্রকৌশলী উপস্থিত না থাকায় নির্মাণ কাজে নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে কাজ চলতে থাকে নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে। দুটি মসজিদ নির্মাণে ৮০ ফুট পাইল কাস্টিং করার কথা থাকলেও সেখানে ৫৫ ফুটের পাইল কাস্টিং করেই ড্রাইভিং শুরু করা হয়। এ ছাড়া ঢালাইয়ের জন্য নিম্ন মানের রড, ইট এবং বালু ব্যবহার করা হয় প্রকাশ্যে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সাইনবোর্ড ছাড়াই মডেল মসজিদের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করে। চারপাশে টিনের বেড়া দিয়ে ঢেকে নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ চালানো হয়। একপর্যায়ে স্থানীয়দের প্রতিবাদে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে আত্মগোপনে থাকা ঠিকাদার মালেক প্রভাবশালী দুই বিএনপি নেতাকে ম্যানেজ করে পুনরায় কাজ শুরু করেন।

পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান কে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে এমন কাজ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে অপর দুই অংশিদার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাধ্য হয়ে কাজ পরিচালনায় পার্টনার ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে মালেককে অব্যাহতি দিতে আবেদন করেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর। অপর অংশীদার নাসির উদ্দিন খানকে পার্টনার ইনচার্জ হিসেবে কাজ পরিচালনার দায়িত্ব দিতে গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর ১ম ও ২য় পার্টনার যৌথভাবে আবেদন করেন। পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একই আবেদন করা হয়। কিন্ত আবেদন আমলে না নিয়ে নিম্ন মানের কাজ চলমান থাকে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খায়রুজ্জামানের নির্দেশে। তার এই কাজে প্রধান সহযোগী হয় পিরোজপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) অনিরুদ্ধ ম-ল। কাজের মান নিয়ে মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার হলে গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে তদন্ত টিম আসে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রকিউমেন্ট ইউনিট) আশেক আহমেদ শিবলী তদন্ত প্রতিবেদনে কাজের নিম্ন মানের সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং এর দায়ভার সকল অংশীদারের ওপর বর্তাবে বলে উল্লেখ করেন। বাধ্য হয়ে ১ম ও ২য় অংশিদার হাইকোর্টে (৫২৭/২০২৫ নং) রীট পিটিশন দায়ের করেন। উক্ত রীট পিটিশনটি বিজয়-১ নং কোর্টে আকরাম হোসেন চৌধুরী ও মোশাররফ হোসেন রাজার দ্বৈত বেঞ্চে গত ১৪ জানুয়ারি শুনানী হয়। শুনানী শেষে উক্ত কাজ ৩ মাসের জন্য স্থগিত করার নির্দেশ দেন আদালত। এই আদেশ গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। তবে এর পরেও আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এখনও কাজ চলমান রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাকি দুই ঠিকাদার।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্সের প্রোপাইটর নাসির খান বলেন, আমরা তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মসজিদ দুটির কাজ পাই। এরমধ্যে একজন ছিলেন তৎকালীন পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক। তার প্রভাবের কারণে আমরা ইলেক্ট্রো গ্লোব এবং মেসার্স খান বিল্ডার্স কাজ না করে মেসার্স রাজ অ্যান্ড ব্রাদার্সকে কাজ করার অনুমতি দেই। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর সাবেক মেয়র মালেক কাজটি অন্য লোকজনের কাছে বিক্রি করে আত্মগোপনে চলে যান।

এখন তারা নিম্ন মানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ করলে এর দায়ভার আমরা নেব না। আমরা এই বিষয়ে একটি রীট পিটিশন করেছি হাইকোর্টে। যার প্রেক্ষিতে আদালত কাজ তিনমাসের জন্য স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কাজ চলছে। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে একটি সরকারি দপ্তর কিভাবে কাজ চলমান রাখতে সহযোগীতা করছে সে বিষয়টি আসলেই বোধগম্য নয় বলে জানান নাসির খান। এটি সরাসরি আদালত অবমাননার শামীল।
এই বিষয়ে মেসার্স রাজ অ্যান্ড ব্রাদার্সের ঠিকাদার হাবিবুর রহমান মালেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পিরোজপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) অনিরুদ্ধ ম-ল বলেন, তিনি কোন কাজের বিষয়ে কিছু জানেন না। কথা বলতে হলে নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুজ্জামানের সাথে কথা বলতে হবে। তিনি পিরোজপুর সদর মডেল মসজিদের কাজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কিনা এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
কাউখালী উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মান কাজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইউসুফ আলী বলেন, আমার বদলির আদেশ হয়েছে জানুয়ারির ১৫ তারিখ। বর্তমানে বদলি ঠেকানোর জন্য ঢাকায় অবস্থান করছি।

জটিলতার বিষয়গুলো আমি আগে থেকেই জানি। ঢাকা থেকে ফিরে বিস্তারিত জানাতে পারবো। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলে কাজ মানসম্মত হলেও চলমান রাখার কোন সুযোগ নেই।

পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দীন মহারাজ এর ব্যক্তিগত কর্মচারি সোহেল ক্বারী বলেন, আমি কাজের বিষয়ে কিছু জানি না। আমি বেতনভুক্ত কর্মচারিমাত্র। কোন কাজ কেনা তার পক্ষে সম্ভব না। পলাতক থাকায় আমি মহিউদ্দীন মহারাজের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। পিরোজপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খায়রুজ্জামান বলেন, আমার সাথে কথা বলতে হলে পিরোজপুর প্রেসক্লাবের সকল সাংবাদিক নিয়ে আসতে হবে। আমার যা ইচ্ছা আমি করবো। আমাকে জবাবদিহি করার সাহস খোদ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীরও নেই।

এ ব্যাপারে বরিশাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মানিক লাল দাস বলেন, হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন দায়ের করেছে ঠিকাদারদের একটি পক্ষ। অপর পক্ষও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। এটি তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। আদালতে রীট পিটিশন এর প্রেক্ষিতে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে এমন কোন নির্দেশনা দাপ্তরিকভাবে কোর্ট থেকে আমার কাছে আসেনি। পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগ এমন কোন নিষেধাজ্ঞার আদেশ কোর্টের মাধ্যমে পেয়েছে কিনা জানা নেই। আদালতের নিষেধাজ্ঞা হলে কাজ চলমান রাখার কোনো সুযোগ নেই।