নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল মেডিকেলের আইসিইউতে ডায়ালাইসিস করা যায় না, মুমুর্ষুদের পাঠানো হয় ঢাকা।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। কিন্তু তা দিয়ে ডায়ালাইসি করানো হচ্ছে না। রোগী বা তাদের স্বজনরা এই সেবার জন্য গেলে ভুলভাল বুঝিয়ে পাঠানো হচ্ছে বাইরের ক্লিনিক বা হাসপাতালে। ফলে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়ছেন রোগীরা।
রোগীদের স্বজনদের অভিযোগ, স্বল্পখরচে আধুনিক চিকিৎসা নেওয়ার জন্য তাদের শেবাচিম হাসপাতালে আসতে হয়।
কিন্তু এখানে ডায়ালাইসিস করতে এসে ঠিকমতো সেবা মেলে না। ডায়ালাইসিসের সিরিয়াল পাওয়ার আগেই অনেক সময় রোগীরা মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তাই অনেককে ছুটতে হচ্ছে ঢাকায়।
আইসিইউতে ভর্তি এক রোগীর স্বজন জানান, গত চার মাস আগে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মায়ের কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়ে। এরপর অসুস্থ অবস্থায় তাকে ১০দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে জরুরি প্রয়োজনে বৃহস্পতিবার ডায়ালাইসিস করা যায়নি।
তিনি জানান, বেসরকারি প্যাথলজি ল্যাবে একবার ডায়ালাইসিসে খরচ হয় কমপক্ষে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।
কিন্তু সরকারি এ হাসপাতালে ব্যয় হয় ৪০০ টাকা। কিন্তু এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা তেমন পাওয়া যায় না। তাই দ্বিগুণ টাকা খরচ হলেও বাধ্য হয়ে বেসরকারি প্যাথলজি ল্যাবে যেতে হচ্ছে। অনেক সময় এত টাকা জোগাড় করতে কষ্ট হয়ে যায়।
মিজানুর রহমান নামের আরেক রোগীর স্বজন বলেন, বাইরের ল্যাবে ডায়ালাইসিস করলে ঝুঁকি থাকে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও অভিজ্ঞ জনবল থাকায় ঝুঁকি এবং ব্যয়ও কম হয়। মেশিনগুলো ঠিকমতো চালু থাকলে রোগীদের ভোগান্তি কমবে বলেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে বর্তমানে ২০টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। যার মাধ্যমে দিনে তিন সিফটে ৩৬ জন রোগীর কিডনি ডায়ালাইসিস করা যায়। কিন্তু দিনে রোগী আসছেন ১০০ জনেরও বেশি।
সিনিয়র স্টাফ নার্স বিউটি বেগম জানান, একজন রোগী প্রতি সপ্তাহে দুটি ডায়ালাইসিস করার সুযোগ পাচ্ছেন। জনপ্রতি মাত্র চারশ’ টাকা খরচে প্রতিদিন রোগীকে ডায়ালাইসিস করা হয়।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মনিরুজ্জামান শাহিন বলেন, আগের তুলনায় রোগী সেবার মান বেড়েছে। প্রতিদিন তিন সিফটে ৩৬ জন রোগীকে এখানে ডায়ালাইসিস করা হয়।
তিনি বলেন, ২০টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। সব কয়টি সচল। তবে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন কারণে দু-একটি মেশিন বন্ধ থাকে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১২ মে তৃতীয় তলায় মেডিসিন বøকের ছোট একটি কক্ষে ১০টি মেশিন নিয়ে কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগ চালু করা হয়। পরবর্তিতে রোগীর চাপ দ্বিগুণ হওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরও ১০টি নতুন ডায়ালাইসিস মেশিন সরবরাহ করা হয়। কিন্তু তবুও সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় সুবিধা পাচ্ছেন না।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের কারণে এই সেবা ব্যাহত হচ্ছে।