মামুন-অর-রশিদ, বিশেষ প্রতিনিধি :: বাসায় এলইডি টিভিতে ছেলে-মেয়ের দাবি অনুযায়ী ওয়াইফাই সংযোগ দিয়ে চালাই। ডিস সংযোগ বাদ দিয়েছি বছর খানেক আগে। বাসায় আমার নিউজ রুমের কম্পিউটারটি নিছক নিউজ টাইপিং , মেইল করা ও আপলোডের কাজেই ব্যবহার হয়। ফলে সেটিতে কোন গান বা ভিডিও ডাউনলোড করিনি। আমার ও স্ত্রীর মোবাইল চালাই ওয়াইফাই এবং মাসিক প্যাকেজ ইন্টারনেরট কিনে। দুই মোবাইলেই কোন অডিও বা ভিডিও গান বা ডকুমেন্ট ডাউনলোড করিনি কখনো। করা দরকার হয়নি। যখন যেটা লাগে নেট থেকে সার্চ দিয়ে দেখি। ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির সমাহারে এভাবেই চলছিল আমার দিনগুলি।
সম্প্রতি একটি ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে পরিস্থিতির আলোকে গত ১৮ জুলাই রাতে হঠাৎ সরকার মোবাইল ইন্টারনেট এবং ওয়াইফাই বন্ধ করে দেয়। একসাথে বন্ধ হয়ে যায় আমার টিভি, কম্পিউটার ও মোবাইলের সকল আপডেট। প্রথমে বিষয়টিকে সাময়িক ভেবে তেমন গায়ে মাখিনি। যেতে যেতে যখন কয়েকদিন হয়ে গেল তখন যেন আর পারছিলাম না। আমার ছেলে মেয়ে যেন একটু টিভি দেখা কিংবা মোবাইলে কার্টুন দেখা অথবা কম্পিউটারে ইউটিউবে ডকুমেন্টরি দেখার জন্য ছটফট করছিল। আমার স্ত্রী বলছিল, সারাদিন এভাবে থাকা যায়। এক পর্যায়ে মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ হলে ফ্লেক্সিলোড করতেও পারিনি। স্ত্রী সন্তানের পিড়াপিড়িতে নিজের কথা বলতেই ভুলে গেলাম।
সারাদিন যাই করি নির্দিষ্ট একটা সময় নিউজের মধ্যেই থাকি। ফেসবুক হোয়াটসএ্যাপে নানা নিউজ তথ্য আদান প্রদান। টিভিতে স্ক্রোল দেখা, কম্পিউটারে নানা আপডেট দেখা, মোবাইলে এতো এতো কাজ। কিন্তু এখন আর নিউজ করা কিংবা পত্রিকায় মেইল পাঠানোর কাজ নেই। অনলাইনে আপলোড করারও তাগিদ নেই। সব যেন বেকার হয়ে গেল নিমিষেই। ব্যস্ত মানুষটির হাতে যেন আজ অনেক সময়। আহা ! সময় যে আর কাটছেই না।
দু’দিন পর পকেটের টাকা শেষ হলে এটিএম বুথে গিয়ে টাকা তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। এক সময় মনে হয়েছে আমি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপে আছি। স্ত্রীকে শান্তনা দিয়ে বললাম, সরকার তো মোবাইল, বিদ্যুৎ বন্ধ করেনি। দু’মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে তো আছি। তাছাড়া এক সময়ে তো এদেশে ইন্টারনেট ছিলই না, তখন মানুষ জীবন যাপন করেনি ? মনে কর আমরা সেই যুগে আছি।
পরিশেষে আশা করি, এদেশে এমন পরিস্থিতি যেন আর কখনো না হয়। সকল পক্ষ বিষয়টি যথাযথ ভাবে উপলব্ধি করুক এটাই আমার প্রত্যাশা।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট