ঢাকামঙ্গলবার , ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাতের আঁধারে যে কারণে নবীজির ঘরের পিছনে জড়ো হতো কাফেররা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪ ৪:১১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

ধর্ম ডেস্ক :: রাতের আঁধারে যে কারণে নবীজির ঘরের পিছনে জড়ো হতো কাফেররা

কোরআন আল্লাহর পবিত্র কালাম। এর শব্দ-বাক্যে রয়েছে আসমানি নূর। একজন মুমিনের হৃদয় প্রতিদিন আলোকময় হয় কোরআনের আলোয়। কিন্তু নবীর যুগে কাফেররা বিরোধিতা করেছে নবীজির। তারপরও কোরআনের মুগ্ধ শ্রোতা ছিলো তারা।

একদিকে কোরআনের বিরোধিতা অপরদিকে কাফেরদের অবস্থা ছিল, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রকাশ্যে নামাজে তিলাওয়াত করতেন তখন কাফেররা দূরে সরে যেত। কিন্তু দূর থেকে আবার আড় কানে চুপে চুপে শোনার চেষ্টা করত। যখন কেউ দেখে ফেলত, আস্তে কেটে পড়ত। (আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৪/১৬৪)

মক্কার প্রতাপশালী মুশরিক নেতারা দিনের বেলায় কোরআনের আওয়াজ বন্ধ করতে মরিয়া হলেও রাতের অন্ধকারে তাদের আচরণ ছিল ভিন্ন। যেই কোরআনকে মিটিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে তারা তৎপর ছিল, সেই কোরআনেরই তিলাওয়াত শুনতে তারা চলে আসত চুপে চুপে, রাতের অন্ধকারে।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনভর কোরআনের দাওয়াত দিতেন আর রাতের আঁধারে একান্ত নিভৃতে রবের সামনে দাঁড়িয়ে যেতেন কোরআন তিলাওয়াতে।

মক্কার সবচেয়ে বড় কাফের আবু জেহেল, আবু সুফিয়ান ও আখনাস ইবনে শারিক। মক্কার তিন মুশরিক সরদার। নবীজি যখন রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করতেন তারা লোকচক্ষু ফাঁকি দিয়ে চলে আসত কোরআন শুনতে। নবীজির ঘরের বাইরে ঘাপটি মেরে বসে কান পেতে থাকত। সবাই একা একা আসত। কেউ কারো খবর জানত না। ভাবত, আমি একাই শুনতে এসেছি।

এভাবে সারা রাত তন্ময় হয়ে কোরআন তিলাওয়াত শুনত তারা। একবারের ঘটনা। এভাবে তারা সারারাত কোরআন তিলাওয়াত শুনল। যখন ভোর ঘনিয়ে এল। চারিদিক আলো হতে আরম্ভ করল। তড়িৎ ঘর পানে ছুট দিল।

কিন্তু পথে তিনজন একে অপরের মুখোমুখি হয়ে গেল। অপ্রস্তুত অবস্থা। ধরা খেয়ে গেল সবাই সবার কাছে, তিন জনই একই অপরাধের অপরাধী! দিনভর যেই কোরআনের বিরোধিতায় যারা জোর প্রচারণা চালায় তারাই কিনা রাতের অন্ধকারে লোকচক্ষুর অন্তরালে এভাবে কোরআন শুনতে আড়ি পেতে বসে! সাধারণ জনতা ব্যাপারটা টের পেলে তো কোরআনের প্রতি তারা আরো ধাবিত হয়ে পড়বে! জনগণকে যেভাবে তারা ভুলভাল বুঝিয়ে কোরআনের সংস্পর্শ থেকে নিবৃত্ত রাখতে চাইছে, তা মাঠে মারা পড়বে। না না এরকম আর আসা যাবে না, তারা প্রতিজ্ঞা করল। নিজেরাই নিজেদের ভর্ৎসনা করে ঘরে ফিরে গেল।

দিন গড়িয়ে ফের রাত এল। চারিদিকে অন্ধকার ছেয়ে গেল। সবাই সবার জায়গা থেকে চিন্তা করল, কাল যেহেতু সবাই ধরা পড়ে গিয়েছে তাই আজ তিলাওয়াত শুনতে কেউ যাবে না। আমি একা গিয়ে কিছুক্ষণ শুনে আসি। এভাবে তিনজনই একই চিন্তা নিয়ে প্রতিজ্ঞা ভেঙে চলে গেল কোরআন শুনতে। ভোরের আলো ফুটতেই একে অপরের হাতে আবার ধরা পড়ল। আবার আগের দিনের মতো নিজেদের ভর্ৎসনা করে যে যার মতো ঘরে চলে গেল। ওয়াদা করল, আর আসবে না।

তৃতীয় রাত। প্রথম ও দ্বিতীয় রাতের মতো কেউ বিছানায় থাকতে পারল না। অন্ধকার নেমে এলে আজও তারা লুকিয়ে লুকিয়ে চলে গেল কোরআন শুনতে। বরাবরের মতো দেখা হয়ে গেল তিনজনের। এখন তারা শক্ত হল। বলল, আমরা মজবুত প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ না হলে হবে না। এভাবে তারা পরস্পর অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে ঘরে ফিরল। (সিরাতে ইবনে হিশাম ১/৩১৫; দালায়েলুন নুবুওয়াহ, বাইহাকি ২/২০৬; তাফসিরে ইবনে কাসির ৫/৭৭)